স্মার্ট সিটি গড়তে বিশাল পরিকল্পনা

স্মার্ট সিটি গড়তে বিশাল পরিকল্পনা

স্মার্ট সিটি গড়তে বিশাল পরিকল্পনা

নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও স্মার্ট সিটি গড়তে বিশদ পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের সঙ্গে এ লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএনসিসির নগর পরিকল্পনা বিভাগ। দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ সংক্রান্ত একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্মার্ট সিটি গড়ার এ বিশদ পরিকল্পনার নাম দেয়া হয়েছে ‘অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান’।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা উত্তরের অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যানে নাগরিক সেবার সবকিছুর স্মার্ট পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম শহরের সব সেবা সংস্থার ভূ-উপরিস্থ এবং ভূগর্ভস্থ লাইন ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থার (জিআইএস) আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে নগরে সবুজায়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান, বাস-ট্রাক টার্মিনাল, আঞ্চলিক কার্যালয়, ওয়ার্ড কার্যালয়, উপাসনালয়, পার্কিং স্পেস, কমিউনিটি সেন্টার, খেলার মাঠ, মার্কেট, মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ এবং অন্যান্য কমিউনিটি স্পেস তৈরির পরিকল্পনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যানে ড্রেনেজ-ফুটপাত উন্নয়নের অগ্রাধিকার তালিকা এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। পৌরসেবা এবং মৌলিক সেবা চিহ্নিতও করতে হবে।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক যুগান্তরকে জানান, ‘ঢাকা শহরকে বদলে দেয়ার লক্ষ্যে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ধাপে ধাপে বিভিন্ন সেক্টরে উন্নতি করছি। আমরা নির্ধারিত মেয়াদে রাজধানী শহরকে পরিচ্ছন্ন, সবুজ, নিরাপদ, স্মার্ট, আলোকিত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করব।’

তিনি আরও জানান, ‘সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যায় না। এজন্য ডিএনসিসির পক্ষ থেকে বিশদ পরিকল্পনা প্রণয়ন কাজ শুরু করেছি আমরা। বুয়েটকে এ কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আশা করি এ পরিকল্পনা নিরাপদ, বাসযোগ্য ও স্মার্ট শহর গড়ে তুলতে অনেক কাজে আসবে।’

ডিএনসিসির নগর পরিকল্পনাবিদ দিলবাহার আহমেদ বলেন, ‘একটি স্মার্ট সিটিতে ময়লা-আবর্জনা ব্যবস্থাপনার জায়গা সুনির্দিষ্ট থাকার কথা। কিন্তু ঢাকা শহরে সেটা নেই। আমাদের চলমান অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যানে সেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এখানে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস), ল্যান্ডফিল করার জায়গা এবং সবুজায়নের জায়গা সুনিশ্চিত করা হবে।’ তিনি আরও জানান, ‘ডিএনসিসির অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান স্বতন্ত্র কোনো নগর পরিকল্পনা নয়। রাজউক, ঢাকা ওয়াসা এবং সরকারি অন্যান্য সংস্থার পরিকল্পনা ও বিধিবিধান মেনেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিদ্যমান পরিকল্পনা, নীতিমালা পর্যালোচনা করেই ডিএনসিসি অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান করা হচ্ছে। এটার মূল উদ্দেশ্য নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি এবং নগরকে বাসযোগ্য করে তোলা।’

পদ্ধতি : পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রাথমিক কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এখন ঢাকা উত্তর এলাকার বিদ্যমান অবকাঠামো ও পরিকল্পনার তথ্যগুলো সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এরপর মাঠ পর্যায়ের জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। একই সঙ্গে স্যাটেলাইট ইমেজসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

জিআইএস বেইসড পরিকল্পনা : ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থায় (জিআইএস) করা হচ্ছে অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান। এ পদ্ধতিতে ঢাকা উত্তর এলাকার প্রত্যেক প্লট বা ভবনের নম্বর, আশপাশের সড়ক ছবিসহ অন্তর্ভুক্ত করা হবে। শহরের জলাধার, পার্ক, খেলার মাঠ, খোলা জায়গা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভূগর্ভস্থ ও উপরিস্থ সব সেবা সংস্থার লাইন চিহ্নিত করা হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মার্কেট, শপিং সেন্টার, হোটেল, সিনেমা হল, পেট্রল পাম্প ও সিএনজি স্টেশন, পার্কিং স্পেস, বস্তি, পানির পাম্প, সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিস, পুলিশ স্টেশন, ঢাকা ওয়াসা, ডেসা, ডেসকো, টিএন্ডটি, রাজউক, এনজিও অফিসের চিত্রসহ অবস্থান তুলে ধরা হবে।

ঢাকা উত্তরের বর্তমান আয়তন ৮২.৬৩ বর্গকিলোমিটার। নতুন করে যুক্ত হওয়া আটটি ইউনিয়নের আয়তন ১৬২.৬৭ বর্গকিলোমিটার। সে হিসাবে ডিএনসিসির মোট আয়তন হচ্ছে ২৪৫.০৩ বর্গকিলোমিটার। বিদ্যমান ওয়ার্ড সংখ্যা ৩৬ এবং নতুন এলাকার প্রস্তাবিত ১৮টি ওয়ার্ড মিলিয়ে মোট ওয়ার্ড সংখ্যা হচ্ছে ৫৪টি। বিদ্যমান ও নতুন এলাকা মিলিয়ে ঢাকা উত্তর এলাকার জনসংখ্যা ১ কোটি ৬ লাখ ২৬ হাজার। এ এলাকার বর্তমান জোন সংখ্যা ৫টি এবং নতুন করে আরও ৫টি জোন করার প্রস্তুতি চলছে। বিদ্যমান ও নতুন এলাকা নিয়েই অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান প্রণয়ন কাজ করছে ডিএনসিসি।

 

Related posts