শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ১৪ জুন ২০১৬
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেছেন, সরকারের মন্ত্রীবিশেষের লজ্জাজনক ভূমিকার কারণে জাসদের ওপর আঙুল তোলা অনভিপ্রত। মঙ্গলবার এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা এসব কথা বলেন।
জাসদের দফতর সম্পাদক ইউনুসুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়, সোমবার এক ছাত্র সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জাসদ ও সরকারের এক মন্ত্রী সম্পর্কে যেসব কথা বলেছেন, তার প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
তিনি জাসদ গঠন এবং আওয়ামী শাসনামলে জাসদের ভূমিকা নিয়ে ঢালাও বক্তব্য দিয়ে যেসব বিতর্ক পুনরুজ্জীবিত করেছেন, তাকে আমরা অসময়োচিত এবং প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার শামিল বলে মনে করি।
বঙ্গবন্ধুকে খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে এবং কোন্ কোন্ আওয়ামী নেতার মদদ নিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, তা নতুন করে জনগণকে জানানোর কিছু আছে বলে আমরা মনে করি না। এখন আশরাফ সাহেবদের মত কিছু লোক বঙ্গবন্ধু হত্যার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য জাসদকে অভিযুক্ত করেছেন সে সময়, যখন গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা আরো বৃহত্তর ঐক্যের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। তার এ বক্তব্য অসময়োচিত, বিভ্রান্তিকর এবং জাসদ কর্মীদের জন্য বিব্রতকর।
তিনি বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার আগে জাসদপন্থীরা দেশকে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলার যে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, তা একান্তই কাল্পনিক এবং অসত্য। প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করতে চাই যে, মুজিব বাহিনী বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনুগত থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে এবং প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফেরার পর তার পদতলে উন্মুক্ত পরিবেশে অস্ত্র হস্তান্তর করে।
আমরা ক্ষোভের সঙ্গে বলতে চাই যে, কিছু কিছু আওয়ামী লীগ নেতা নিজেদের রাজনৈতিক অক্ষমতা ঢাকার জন্য জাসদের কিছু ভুলত্রুটি খোঁজার চেষ্টা করে থাকেন নিজেদের ব্যর্থতাকে আড়াল করার জন্য। এ ধরনের নেতারা এখনো বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অনুসরণ করতে পারেননি, বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেননি। তারা বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলেছেন মাত্র।
সরকারের মন্ত্রীবিশেষের ভূমিকা, অতি চাটুকারিতা নিয়ে জাসদ কর্মীরা এমনিতেই বিব্রত। ওই মন্ত্রীর লজ্জাজনক ভূমিকার কারণে সরকার, আশরাফ সাহেব ও তাদের সহকর্মীরা বিরক্ত, বিব্রত, বিক্ষুব্ধ এবং উত্ত্যক্ত বোধ করলে তারা তো তা সমাধান করতেই পারেন, সেজন্য তাবৎ জাসদ সংগঠন, নেতাকর্মীদের ওপর আঙুল তোলা তো অযৌক্তিক এবং দুঃখজনক।
জাসদ থেকে দূরে থাকার যে কথা আশরাফ সাহেব উল্লেখ করেছেন তা আমাদের বিস্মিত করেছে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। জাসদসহ মুক্তিযুদ্ধে সকলের ভুলভ্রান্তি নিয়ে কথা বলা যেতে পারে, কিন্তু স্মরণ করা উচিত যে, আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১০ দলীয়, ১৫ দলীয় জোট গঠন করে ইতিপূর্বে সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক সংগ্রাম করেছি। জাসদ দীর্ঘ সংগ্রামে কর্নেল তাহের বীর উত্তম, কাজী আরেফ, ডা. মিলন, শাজাহান সিরাজসহ হাজারো কর্মীদের আত্মদানের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। প্রয়োজনে যে কোনো পরিস্থিতিতে জাসদ একলা চলতে পারে।
জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে জাসদ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্ত্রাস, গুপ্তহত্যা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষায় জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলীয় ঐক্য রক্ষা করা রাজনৈতিক কর্তব্য বলে মনে করে।
আমরা আশা করি, আওয়ামী লীগ ও তার সাধারণ সম্পাদক বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে তাদের অবস্থান পর্যালোচনা করবেন, যা ১৪ দলীয় জোটকে আরো সংহত ও শক্তিশালী করবে।