শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ২০ এপ্রিল ২০১৬
প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেপ্তার শফিক রেহমান এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। প্রায় প্রতিদিনই টিভি, পত্রিকাসহ গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম হচ্ছেন তিনি। টকশোর আলোচনায়ও রয়েছেন তিনি। তাকে নিয়ে বিবিসি বাংলাও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে খুঁজে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে যে বিএনপির কোনো পদ-পদবীতে না থাকার পরও কেন তিনি দলে এতোটা ‘ক্ষমতাবান’ হিসেবে পরিচিত।
এতে বলা হয়েছে, বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনেক সিনিয়র নেতা ভূমিকা রাখতে না পারলেও, তিনি দলকে প্রভাবিত করতে পারেন।
অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিতে পর্দার আড়াল থেকে যিনি এ ভূমিকা রাখেন তিনি হচ্ছেন সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমান।
বিএনপি’র সাথে শফিক রেহমানের ঘনিষ্ঠতা অনেকটাই প্রকাশ্য।
বিএনপি’র নীতি নির্ধারণে শফিক রেহমান কেন এতটা গুরুত্বপূর্ণ? এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে বিএনপি’র অনেক নেতা মনে করেন শফিক রেহমান খালেদা জিয়ার অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।যাদের পরামর্শ বা মতামতকে খালেদা জিয়া সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করেন তাদের মধ্যে শফিক রেহমান অন্যতম।
শফিক রেহমান নিজেও সে কথা জানালেন। গত মার্চ মাসের শুরুতে বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে মি: রেহমান বলেছিলেন ,“আমি কৃতজ্ঞ যে তিনি (খালেদা জিয়া) এ রকম উপদেশ মাঝে-মধ্যে নিয়েছেন।”
বিএনপি’র নীতি নির্ধারণে শফিক রেহমানের মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়।
শফিক রেহমান মনে করেন,তিনি রাজনীতির বাইরে থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে হয়তো সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছিলেন।
তিনি বলেন, “ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) হয়তো সেটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমি হয়তো তাকে সঠিক সময়ে সঠিক উপদেশ দিয়েছি। তিনি যখন জেল থেকে ছাড়া পেলেন তখন আমার বাড়িতে এসেছিলেন।”
বিভিন্ন সময়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্যের বিষয়বস্তু নির্ধারণেও শফিক রেহমানের ভূমিকা থাকে বলে জানা যায়। এছাড়া বিভিন্ন নির্বাচনে তিনি বিএনপি’র ইশতেহার প্রণয়নেও ভূমিকা রেখেছেন।
বিএনপি থেকে শমসের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগের পর দলটির পক্ষে যে কয়েকজন ব্যক্তি ঢাকার কূটনীতিক পাড়ায় যোগাযোগ রাখেন তাদের মধ্যে শফিক রেহমান অন্যতম।
তার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায় সর্বশেষ অনুষ্ঠিত বিএনপি’র কাউন্সিলে। সে কাউন্সিলে শফিক রেহমান আন্তর্জাতিক কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৮০’র দশকে ‘যায় যায় দিন’ সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনার মাধ্যমে শফিক রেহমানের ব্যাপক পরিচিতি গড়ে উঠে।
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় তৎকালীন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ মি: রেহমানকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেন।
কিন্তু তখন বিএনপি’র প্রতি মি: রেহমানের ঘনিষ্ঠতা ছিলনা। ১৯৯২ সালের দিকে তিনি লন্ডন থেকে ফিরে আসার পর ক্রমেই বিএনপি’র দিকে ঝুঁকে পড়েন।
মি: রেহমান বলেন, “আমরা সবাই একসময় মুসলিম লীগে ছিলাম। পরে সবাই আওয়ামী লীগ হয়েছি। এরপরে কেউ আওয়ামী লীগ আবার কেউ বিএনপি হয়েছে।”
এর কারণ কী? সাংবাদিক পরিচয় থেকে কেন তিনি বিএনপি’র সাথে ঘনিষ্ঠ হলেন? বিবিসি বাংলার সাথে সাক্ষাৎকারে এসব প্রশ্নের উত্তর তিনি দিয়েছেন।
মি: রেহমানের বর্ণনায়, “আমি ক্রমেই খালেদা জিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়লাম। কাজ শুরু করলাম তার জন্য। কারণ দেখলাম নেত্রী হিসেবে তিনি অনেক সাহসী। আমি খালেদা জিয়ার সাহসের প্রশংসা করি।”
শফিক রেহমান খালেদা জিয়াকে ব্যক্তি হিসেবে ‘গণতান্ত্রিক’ বলে মনে করেন।
কিন্তু দলে যার এতো প্রভাব তিনি কোন পদ-পদবীতে আসলেন না কেন?
শফিক রেহমান বলেন যে কোন পদ-পদবীর জন্য নয়, খালেদা জিয়ার জন্য কাজ করা তিনি ‘নাগরিক দায়িত্ব’ মনে করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদকে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনা মামলায় শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিএনপি’র অনেক নেতা মনে করেন মি: রেহমান রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। যদিও সরকার বলছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগরে ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে।