শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ৪ জানুয়ারি ২০১৭
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন গাইবান্ধা -১ আসনের সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন খুনের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ।
তিনি বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন করে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি-জামায়াত এখন গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। যেহেতু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে তাই যুদ্ধাপরাধীদের দোসর বিএনপিও জামায়াতের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে মেতে উঠেছে।
বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের এক যৌথসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় কমিটি এবং উপদেষ্টা পরিষদের প্রায় সকলেই উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ খুন করা বিএনপির চরিত্র। যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাদেরও যেভাবে হোক খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে। আর সাংবাদিকদের বলবো, চরিত্র হনন করতে চাইলে করেন, কিন্তু একটা মানুষের জীবন যাবে এই ধরণের ঘটনা না ঘটানোই ভালো। ওই ঘটনাকে (শিশুকে গুলি) কেন্দ্র করে এমন একটা (পরিস্থিতি) সৃষ্টি হলো, সে একটা মহাঅপরাধী।
যেহেতু সে গোলাম আজমকে বাধা দিয়েছে, যেহেতু জামায়াতকে বাধা দিয়ে সেখান থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে আসছে, ওখানে জামায়াতবিরোধী একটা অবস্থান নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে শক্তভাবে ছিল, যে কারণে আজকে তাকে জীবনটা দিতে হলো’।
প্রধানমন্ত্রী সবাইকে গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যাই হোক আমি জানি না, ওদের (বিএনপি-জামায়াত) আরও কী পরিকল্পনা আছে। কারণ, যখন তারা নির্বাচন করলো না, ব্যর্থ হলো। নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। আন্দোলন করে সরকার উৎখাতে ব্যর্থ হয়ে এখন গুপ্তহত্যা।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার চরিত্রটাই হচ্ছে অপরাধীদের মদদ দেয়া। অপরাধীদের লালন পালন করা। খালেদা জিয়া অন্যায় শুধু নিজে করে নাই, আরও যারা অন্যায় করেছে তাদেরকে শাস্তি দিয়েছে। দেশবাসীর কাছেও আমি এটার বিচার চাই’।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসীর কাছে আমি এটা বলবো, আমাদের লিটনের হত্যাকাণ্ড আমরা কখনও মেনে নিতে পারি না। সেই সঙ্গে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের আরও সোচ্চার হতে হবে। বাংলাদেশের মাটিতে কোনো জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের স্থান হবে না। এর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
গাইবান্ধায় বিএনপি-জামায়াতে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘গাইবান্ধা এমন একটা জায়গা, বিশেষ করে সুন্দরগঞ্জ। এখানে একেবারে জামায়াতের একটা সন্ত্রাসী এলাকা। ওই এলাকাতে একসময় জামায়াতের এমপিও ছিল। সেখানে আওয়ামী লীগ করা যায় এমন অবস্থা ছিল না। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই সুন্দরগঞ্জে জামায়াত যে তান্ডব চালিয়েছিল, আওয়ামী লীগের প্রায় দেড়শ থেকে দুইশ নেতাকর্মীর ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে এবং পুড়িয়ে দেয়। রেললাইনের ফিসপ্লেট তুলে দিয়ে চারজনকে হত্যা করে। পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দিয়ে লুটপাট করে ৪ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে।
এরপর ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে তারা প্রকাশ্যে ঢাকা-রংপুর রাস্তা অবরোধ করে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারে। ৯ জন মানুষকে পুড়িয়ে মারে। ওই পুরো এলাকাটা তাদের কব্জায় ছিল।
এরপর ২০১৫ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঘোষিত অবরোধ চলাকালেও ওই এলাকায় প্রচণ্ড তান্ডব শুরু হয়।
প্রয়াত সংসদ সদস্য লিটনের স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, লিটন ছাত্রলীগের কর্মী ছিল। পরবর্তীতে ইংল্যান্ডে সে পড়াশোনা করতে যায়। সেখানে সে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা আনার পর আওয়ামী লীগ করা শুরু করে। ওখানকার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর আমরা তাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিই এবং সে সংসদ সদস্য হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, আমি যখন বিরোধী দলে তখন আমাদের সংসদ সদস্য এস এম কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করলো। এমনকি হত্যাকাণ্ডের পর আমাদেরকে সংসদে এ বিষয়ে কোনো আলোচনাও করতে দেয়নি। একটা নিন্দা প্রস্তাব একটা শোক প্রস্তাবও তুলতে দেয়নি। অবশ্য এটাতে বিএনপি জড়িত। এরপর যখন ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা হলো তখনও একই ঘটনা আমরা দেখেছি।
বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রী তার নেতৃত্বাধীন সরকারের তিন বছর পূর্তির বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছিল। আর ১২ তারিখ আমরা শপথ নিয়েছিলাম। আমাদের তিন বছর পূর্ণ হলো। এই তিন বছর আমরা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করেছি। দেশের উন্নয়নের কাজের গতিটা আমরা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এজন্য আজকে উন্নয়নটা দৃশ্যমান হচ্ছে। মানুষ আজকে খেয়ে পরে বাঁচতে পারছে। গ্রাম থেকে শহর সকল পর্যায়ে উন্নতি হচ্ছে।