বাংলাদেশ ব্যাংকের চার কর্মকর্তা আটক

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম।  ১৬   মার্চ  ২০১৬

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এরা হলেন ডিলিং রুশ শাখা ও আইটি কর্মকর্তা। একটি গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘটনায় মঙ্গলবার মতিঝিল থানায় মামলা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তে নেমেছে সিআইডি। মঙ্গলবারই তাদের এ দায়িত্ব দেয়া হয়। সিআইডির একটি সূত্র জানায়, এ ঘটনায় সদ্য পদত্যাগ করা গভর্নর ড. আতিউর রহমান এবং অপসারণ করা দুই ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম ও নাজনীন সুলতানাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

মামলার পর গ্রেফতার ও আটকের বিষয়ে আইনশৃংখলা

বাংলাদেশ ব্যাংকের চার কর্মকর্তা আটক

বাংলাদেশ ব্যাংকের

বাহিনীর তিনটি সংস্থা নিজেরা সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে মামলার নথিপত্র রাতেই হস্তান্তর করে মতিঝিল থানা পুলিশ। অপরদিকে র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশও কাজ শুরু করেছে। যদিও র্যাবের পক্ষে আরও কয়েকদিন আগে থেকেই ছায়া তদন্ত শুরু করা হয়।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট সমন্বিতভাবে কাজ করবে। সংস্থাগুলোর উদ্দেশ্য একটাই, ঘটনার রহস্য বের করা। এ ঘটনায় সমন্বয় করার জন্য ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃংখলা বাহিনী বাংলাদেশ ব্যাংকের এ চার কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তাদের (গোয়েন্দা) মতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাক অফ দ্য ডিলিং রুম শাখায় এ ঘটনার সূত্রপাত হলেও এর সঙ্গে আইটি বা সিস্টেম নিয়ে যারা কাজ করেন তাদেরও কেউ কেউ জড়িত। প্রযুক্তিগত এবং ইলেকট্রনিক এভিডেন্স খতিয়ে দেখে তারা এ বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই চার কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। সাধারণত গোয়েন্দারা কোনো আসামির কাছ থেকে সঠিক তথ্য বের করে আনতে যে ধরনের জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল প্রয়োগ করে থাকেন, সে ধরনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আটককৃতদের কাছ থেকে তথ্য উদ্ধার করা হবে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সরকারের তরফ থেকে সব নির্দেশ পাওয়া গেছে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে।

ঘটনাটি দেরিতে ফাঁস হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ছায়া তদন্তের সঙ্গে জড়িতরা। তাদের মতে, সন্দেহভাজনরা সার্ভার, লগ, কম্পিউটারসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে প্রয়োজনীয় অনেক ক্লু তারা মুছে ফেলতে পারে। বিশেষ করে সার্ভার পুনঃস্থাপন, বিভিন্ন ড্রাইভে ফাইল না থাকা, কম্পিউটার ও ল্যাপটপে ইউএসবির (ইউনিভার্সাল সিরিয়াল বাস) ব্যবহার, ডিলিং রুম শাখার কিছু ভিডিও ফুটেজও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তারা সন্দেহ করছেন ইতিমধ্যে বেশকিছু আলামত ধ্বংস করা হয়েছে। আর এ কাজে ব্যাংকের ভেতরের সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত।

 

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, এখন যা আছে তা নিয়েও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব। জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমেই ঘটনার আগে ও পরের সব রহস্য উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, ঘটনা দেরিতে ফাঁস করা হয়েছে, আবার মামলাও হয়েছে দেরিতে। এছাড়া, সার্ভারসহ প্রয়োজনীয় অনেক কিছুর মধ্যে একটা পরিবর্তনও আনা হয়েছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল হায়দার যুগান্তরকে বলেন, যখন কোনো ঘটনায় দেখা যাবে বিলম্ব করা হচ্ছে, তখন বুঝতে হবে কিছু একটা গোপন করার চেষ্টা চলছে। এ ধরনের গোপনীয়তা এবং বিলম্বে সন্দেহভাজন জালিয়াতরা যে গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট করতে পারে এটাই স্বাভাবিক। গোয়েন্দারা সাধারণ ক্লু থেকেও অসাধারণ কিছু উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হবেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যারা জালিয়াতি করেছে তারা তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে জানে। তাই তাদের তথ্যপ্রযুক্তি দিয়েই পাকড়াও করা হবে।

বিশাল অংকের অর্থ চুরির ঘটনায় মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়েছে। এ মামলার বাদী হলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের ব্যাক অফ দ্যা ডিলিং রুম শাখার যুগ্ম পরিচালক (জেডি) মো. জোবায়ের বিন হুদা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, এ ডিলিং রুম শাখাতেই অর্থ চুরির সূত্রপাত হয়। মামলার পর ডিলিং ও আইটি শাখার চার কর্মকর্তাকে আটক করা হয় বলে জানা গেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিলিং শাখার প্রধান যুগ্ম পরিচালক (জেডি) জোবায়ের বিন হুদা মামলার বাদী হলেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কারণ, এ শাখার কারোরই দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। এছাড়া আরও অনেককেই গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এদের মধ্যে অনেকেই তাদের সন্দেহের তালিকায় আছেন। এদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই রাঘববোয়ালদের নাম বের করে আনার চেষ্টা চালাবেন তারা।

সাধারণত গোয়েন্দারা কোনো আসামির কাছ থেকে সঠিক তথ্য বের করে আনতে যে ধরনের জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল প্রয়োগ করে থাকেন, সে ধরনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সন্দেহভাজনদের কাছ থেকে তথ্য উদ্ধার করা হবে। তিনি বলেন, সরকারের তরফ থেকে সব নির্দেশ পাওয়া গেছে। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।

আতিউরসহ দুই ডেপুটি গভর্নরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিআইডি : সিআইডির একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় সিআইডি ইলেকট্রনিক এভিডেন্সকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এটা কোনো সাধারণ মামলা নয়। তাই তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যা যা করণীয় তাই করা হবে। এ ক্ষেত্রে সদ্য পদত্যাগ করা গভর্নর ড. আতিউর রহমান এবং অপসারণ করা দুই ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম ও নাজনীন সুলতানাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। এ প্রসঙ্গে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী যুগান্তরকে বলেন, কোনো যৌক্তিক কারণে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন মনে হলে সেটা করা হতে পারে। তদন্তের স্বার্থে যাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার তাকেই করা হবে।

 

 

Related posts