গৃহনির্মাণে ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১ কোটি টাকা, কমছে সুদ

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১২  এপ্রিল  ২০১৭

গৃহনির্মাণে ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১ কোটি টাকা, কমছে সুদ

গৃহনির্মাণে ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১ কোটি টাকা, কমছে সুদ

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গৃহনির্মাণে ঋণে সুদের হার সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ কমিয়ে সাড়ে নয় শতাংশ করার পাশাপাশি ঋণের পরিমাণ ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে এক কোটি টাকার প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন ।

একই সঙ্গে এ খাতে নতুন পাঁচটি প্রডাক্টে ঋণ কার্যক্রম চালুর প্রস্তাবও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনায় স্বাক্ষর করেছেন অর্থমন্ত্রী।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (বিএইচবিএফসি) ঋণের সিলিং ৫০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকায় উন্নীত করার পাশাপাশি নতুন পাঁচটি প্রডাক্টে ঋণের কার্যক্রম চালুসহ সুদের হার হ্রাসের প্রস্তাব করে। এ প্রস্তাবে অনুমোদন দেন অর্থমন্ত্রী। ফলে পল্লী অঞ্চলের ফ্ল্যাট ক্রয় এবং বাড়ি নির্মাণের জন্য গ্রাহকরা ঋণ পাবেন।

অর্থমন্ত্রী স্বাক্ষরিত প্রস্তাবনায় দেখা গেছে, বাড়ি নির্মাণের জন্য (একক) ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের অতি উন্নত এলাকায় বিদ্যমান ঋণের সিলিং ৫০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক কোটি টাকা এবং ঋণের সুদের হার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ; ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর অন্যান্য উন্নত এলাকায় বিদ্যমান ঋণের সিলিং ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে এক কোটি টাকা এবং ঋণের সুদের হার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ; টঙ্গী ও সাভার পৌর এলাকা (ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের আওতাধীন এলাকাসহ) এবং দেশের সকল বিভাগীয় জেলা সদরে বিদ্যমান ঋণের সিলিং ৪০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৬০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। আর ঋণের সুদের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।

বাড়ি নির্মাণের জন্য গ্রুপভিত্তিক ঋণের ক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের অতি উন্নত এলাকায় বিদ্যমান ঋণের একক সিলিং ৫০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ লাখ টাকা করা হয়েছে এবং ঋণের সুদের হার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।

টঙ্গী ও সাভার পৌর এলাকা (ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের আওতাধীন এলাকাসহ) এবং দেশের সকল বিভাগীয় জেলা সদরে বিদ্যমান ঋণের একক সিলিং ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা বিদ্যমান রাখলেও ঋণের সুদের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।

এছাড়া ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের অতি উন্নত এলাকায় বিদ্যমান ঋণের সিলিং ৪০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ লাখ টাকা এবং ঋণের সুদের ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর অন্যান্য উন্নত এলাকায় বিদ্যমান ঋণের সিলিং ৪০ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকা এবং ঋণের সুদের হার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ; টঙ্গী ও সাভার পৌর এলাকা (ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের আওতাধীন এলাকাসহ) এবং দেশের সকল বিভাগীয় জেলা সদরে বিদ্যমান ঋণের সিলিং ৪০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৬০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে এবং ঋণের সুদের হার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্তী জাগো নিউজকে বলেন, তারা এ ধরনের একটি প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। তবে এখনও সরকারি ওই প্রস্তাবনার উত্তর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তারা পাননি। পেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

বিএইচবিএফসি প্রতিষ্ঠার পর থেকে গৃহনির্মাণে ঋণ সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিএইচবিএফসির পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এ খাতে ঋণ প্রদান করছে। আবাসনখাতে ঋণ প্রদানের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণের ঘোষিত সুদের হার কর্পোরেশনের তুলনায় কম এবং সিলিং তুলনামূলকভাবে বেশি।

এছাড়া বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বেশি আইটেমে ঋণ প্রদান করে। ফলে বিএইচবিএফসির ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। আবাসন ও কর্পোরেশনের ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি, বাজার চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঋণের সিলিং বৃদ্ধি, ঋণের সুদের হার হ্রাস এবং দেশের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার নাগরিকদের আবাসিক ঋণ সুবিধার আওতাভুক্ত করার লক্ষ্যে পাঁচটি নতুন প্রডাক্টে ঋণ কার্যক্রম চালুর প্রস্তাব করা হয় ওই প্রস্তাবনায়।

বর্তমানে বিএইচবিএফসিতে সাত প্রকারের ঋণ চালু আছে। বিদ্যমান ঋণ প্রডাক্টগুলো নামকরণের দিক থেকে সেকেলে ধরনের হওয়ায় এগুলোর পরিবর্তন/সংশোধন করে নতুন নামকরণ করা হয়েছে। বিদ্যমান সাধারণ ঋণ, গ্রুপ ঋণ, ফ্ল্যাট/এপার্টমেন্ট ঋণ, বর্ধিত ঋণ, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ঋণ (২০ বছর পরিশোধ মেয়াদ), ৫ বছর মেয়াদের বিশেষ ঋণ এবং সেমি-পাকা ঋণকে ফ্ল্যাট ঋণ, বাড়ি নির্মাণের জন্য ঋণ (একক) নামে নতুন নামকরণ করা হয়েছে।

এছাড়া অনাবাসিক বাংলাদেশি নাগরিকদের আবাসন ঋণ কর্মসূচি, পল্লী জনগণের জন্য বিশেষ আবাসন ঋণ কর্মসূচি, কৃষকদের জন্য আবাসন ঋণ কর্মসূচি, আবাসন উন্নয়ন ঋণ কর্মসূচি, আবাসন মেরামত ঋণ কর্মসূচি নামে নতুন প্রডাক্ট কার্যক্রম চালুর প্রস্তাব করা হয় ওই প্রস্তাবনায়।

এদিকে পল্লী অঞ্চলের ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য আগে বিএইচবিএফসি থেকে ঋণ দেয়া হতো না। তবে এখন পল্লী অঞ্চলে ফ্ল্যাটের জন্য ঋণ পাবেন গ্রাহকরা। এক্ষেত্রে ঋণের সিলিং ৪০ লাখ এবং সুদের হার ৯ শতাংশ। এছাড়া পল্লী অঞ্চলে বাড়ি নির্মাণের জন্য গ্রাহকরা ঋণ পাবেন। এক্ষেত্রে ঋণের সিলিং ৪০ লাখ এবং সুদের হার হবে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ।

বিএইচবিএফসি সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের আট মাসে ঋণের জন্য ৯১৩টি আবেদন জমা পড়ে। এসব আবেদনের মধ্যে ৬৮৭ জনের ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। ১৭৮টি আবেদন প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া অবশিষ্ট ৪৮টি আবেদন ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় বাতিল করা হয়েছে। বিএইচবিএফসির নিজস্ব তহবিল থেকে বছরে আবাসনখাতে ঋণ বিতরণের ক্ষমতা প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।

 

 

 

Related posts