শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ৫ আগস্ট ২০১৬
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে চলছেন জানিয়ে তিনি যাতে নিরাপদে আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তিনি।
গত ২৫ জুলাই রাজধানীর পল্লবী থানায় দায়ের করা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলায় রুহুল কবির রিজভীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে প্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। একইসঙ্গে আগামী ২৩ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার তামিল সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
ওয়ারেন্ট ইস্যুর পরবর্তী দিবসে রিজভীর আদালতে আত্মসমর্পণ করার ইচ্ছা ছিল জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রিজভীর বিরুদ্ধে যেদিন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়, সেদিনই সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে হাজির হয়। ফলে সেখানে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের প্রবেশ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি আমাদের অফিসের স্টাফরাও সাধারণভাবে চলাচল করতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এরপর রিজভী যখন দলীয় চেয়ারপারসনের অফিসে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেন, তখন সাদা পোশাক পরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চেয়ারপারসনের অফিসও ঘেরাও করে রাখেন। সারা রাত ধরে অফিস ঘেরাও করে রাখা হয়, রিজভী বের হলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
বিএনপির মহাসচিব প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘রিজভী যেখানে অতীতের সমস্ত মামলায় জামিনে রয়েছেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিয়মিত কোর্টে হাজিরা দিচ্ছেন, সেখানে এই মামলাটিতে তার বিরুদ্ধে অতিদ্রুততার সাথে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার কী প্রয়োজন দেখা দিল? কারণটা হলো এটাই যে, রিজভী আমাদের দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন। সুতরাং তাকে যদি অন্তরীণ করা যায়, তাহলে বিএনপির আরেকটি ক্ষতি করা সম্ভব হবে। উদ্দেশ্যটাই হচ্ছে, বিরোধী দল বিএনপিকে কাজ করতে না দেয়া এবং সে লক্ষ্যেই তারা আজকে এ ধরনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে, তারা যেভাবেই হোক দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে চায়, যেটা ভিন্ন মোড়কে। আমরা অনেকদিন ধরে সেটাই বলে আসছি। ইতোমধ্যে দেশে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে বলা যায়, আমরা একটা কর্তৃত্বপরায়ণ সরকারের অধীনে রয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে তারা একইসঙ্গে অনৈতিক সরকারও, যারা নির্বাচনে ৫ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। এভাবে একটা সরকার গঠন করার পরে বিরোধী দল নির্মূল করার জন্য এ ধরনের কাযক্রমে লিপ্ত হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি।’
বিএনপির এ মহাসচিব বলেন, ‘রুহুল কবির রিজভী ইতোমধ্যে বিচারিক আদালতে আবেদন করেছেন, যাতে তিনি নিরাপদে সেখানে গিয়ে আত্মসমর্পণ করতে পারেন। এই ব্যবস্থাটা যেন হয় আমরা সেটারই দাবি জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে এই ধরনের নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধ করার জন্যও দাবি জানাচ্ছি।’
রুহুল কবির রিজভী এখন কোথায় আছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রিজভী এখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে চলছেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে পড়া রুহুল কবির রিজভী যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা বেআইনিভাবে হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য গত ৩১ জুলাই আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তার আইনজীবীরা। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ সংক্রান্ত একটি আবেদন দাখিল করা হয়। তবে বিচারক এ ব্যাপারে কোনো আদেশ দেননি। শুনানির পর আবেদনটি রেখে দেন আদালত। গত ২৯ জুলাই সেখানে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ইস্যুতে দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করার পর কার্যালয়ের বাইরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেয়ায় আর বের হতে পারেনি রিজভী।
অন্যদিকে, রুহুল কবির রিজভী গত ১ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করবেন বলে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বাংলামেইলকে নিশ্চিত করলেও আদালতে যাননি তিনি। ওইদিন সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে’ বের হন রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।