শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ৪ এপ্রিল ২০১৬
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলায় অনারারি লেফটেন্যান্টের ছেলেকে অপরাধ তদন্ত ব্যুরো (সিআইডি) জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ছেলেটির নাম পেয়ার আহমেদ (২২)। পেয়ার ঢাকায় বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শোনা করে।
জানা যায়, গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় সিআইডির কর্মকর্তারা তদন্তের স্বার্থে সেনানিবাসের অভ্যন্তরে বসবাসরত পেয়ারকে কুমিল্লা সিআইডির কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। এখানে জিজ্ঞাসাবাদের পরে দুপুর ২টায় পেয়ারকে নিয়ে সেনানিবাস এলাকায় যায় সিআইডি দল। শেষে তাঁকে তাঁর বাসায় দিয়ে আসা হয়। তিনি একজন অনারারি লেফটেন্যান্টের ছেলে। তনুর বাড়ি থেকে একটু দূরেই তাঁদের বাসা। পেয়ার ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। এর আগেও র্যাব ও পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।
তনুর খালাতো বোন লাইজু জাহান তনুর খুনের পর অভিযোগ করে বলেছিলেন, পেয়ার তনুকে উত্ত্যক্ত করতেন। মোবাইল ফোনেও তাঁকে উত্ত্যক্ত করেছে। এরপর বিকেলে ও সন্ধ্যায় তদন্ত দল তনুর মরদেহ যাঁরা হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তদন্ত দল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক, যিনি তনুকে মৃত ঘোষণা করেন ও সেই সময়ের কর্তব্যরত আয়াকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এদিকে, তনুর প্রথম ময়নাতদন্তের ভিসেরা প্রতিবেদন চট্টগ্রাম থেকে রোববার কুমিল্লায় এসেছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক দলের প্রধান ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ভিসেরা প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি বলেন, আরো কিছু পরীক্ষা বাকি রয়েছে। সব হাতে এসে পৌঁছালে পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তবে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, তনুর ভিসেরা রিপোর্টে তনুকে হত্যার আগে বিষপান করানোর কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
রোববারও ঢাকা থেকে আসা সিআইডির তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দসহ ঢাকা ও কুমিল্লা সিআইডির কর্মকর্তারা তদন্তকাজ পরিচালনা করেন।
তদন্তের বিষয়ে সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র এএসপি জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এখনো মাঠে তদন্ত চলছে। তদন্তের বিষয়ে এখন কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে সেনা কর্মকর্তার ছেলে পেয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে, সেনানিবাসসংলগ্ন কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার নারায়ণসার গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা ছাত্র তনুর ভাই আনোয়ার হোসেনের বন্ধু মিজানুর রহমান সোহাগের (২১) সন্ধ্যান সাত দিন পরও মেলেনি।
সোহাগের বড় বোন খালেদা আক্তার জানান, ২৭ মার্চ রাত দেড়টার দিকে প্রশাসনের লোক পরিচয়ে সাদা পোশাকের লোকেরা তাঁর ভাই সোহাগকে ঘর থেকে নিয়ে যান। এর পর থেকেই সে নিখোঁজ রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে তনুর লাশ কুমিল্লা সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরে কালভার্টের পাশের জঙ্গলে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তনুর বাবা মো. ইয়ার হোসেন কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীদের নামে একটি হত্যা মামলা করেন। পুলিশ গত ১৩ দিনেও এ মামলার কোনো কিনারা করতে পারেনি। এ ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে নানা কর্মসূচি অব্যাহত আছে।