শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তার সেজে ওয়ার্ডবয় চিকিৎসা করায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার বিকেলে রোগী মারা গেলে হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেন স্বজনরা। গণধোলাই দিয়ে চিকিৎসক দাবি করা সুমনকে পুলিশে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
তার গলায় ঝোলানো চিকিৎসকের স্টেথোস্কোপ। নিজেই রোগীকে পুশ করেন ইনজেকশন। প্রয়োজনে শরীরে স্যালাইনও পুশ করেন, মুখে পরান অক্সিজেন মাস্ক। তবে সুমন নামের ওই যুবক চিকিৎসক নন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন সুইপার! তবুও দীর্ঘদিন ধরেই তিনি হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন রোগীদের। এতদিন সবকিছু ‘ঠিকঠাক’ থাকলেও বিপত্তি বাধে গতকাল শুক্রবার বিকেলে। ওই ওয়ার্ডে ভর্তি বিপ্লব মণ্ডল নামের এক রোগীকে ইনজেকশন পুশ করেন সুমন। শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় বিপ্লবের মুখে পরিয়ে দেন অক্সিজেন মাস্ক। এরপরই নিস্তেজ হয়ে পড়েন বিপল্গব। ‘চিকিৎসক’ সুইপারই তখন বিপ্লব মণ্ডলের মৃত্যুও ঘোষণা করেন!
হাসপাতাল সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল ৪টার দিকে হাসপাতালের ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে বিপ্লব মন্ডল (২৬) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। রোগীর মৃত্যুর পর তার স্বজনরা হাসপাতালের এক ঝাড়ুদারকে ধরে মারধর করতে থাকেন। অভিযোগ ওঠে, ওই ঝাড়ুদারই রোগীকে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়েছিলেন এবং ইনজেকশন দিয়েছিলেন।
এ ঘটনার পর মৃত বিপ্লব মণ্ডলের স্বজনসহ অন্য রোগীর স্বজনরা সুমনকে গণপিটুনি দিয়েছেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজে চিকিৎসা দেওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন সুমন। গতকাল বিকেলেই হাসপাতালের সামনে ‘সুইপার কেন চিকিৎসক, জবাব চাই/দিতে হবে’ বলে স্লোগান দেন রোগীদের স্বজনরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে যেতে হয় পুলিশ ও র্যাবকে।
পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় ঝাড়ুদার জানান, তার নাম সুমন। জরুরি বিভাগের সরদার আজিজ তাকে ঢাকা মেডিক্যালে কাজ করতে নিয়ে এসেছেন। তিনি সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত নন।
অভিযুক্ত সুমন জানান, রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়েছে বলে চিকিৎসকের নির্দেশে তাকে নেবুলাইজার দিয়েছেন তিনি। তবে কোন চিকিৎসক তাকে এই নির্দেশ দিয়েছেন, তা তিনি জানাতে পারেননি।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বেশির ভাগ সময়েই বিভিন্ন ওয়ার্ডবয় ও পরিচ্ছন্নকর্মীরা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ইনজেকশন পুশসহ নানা চিকিৎসা ‘সেবা’ দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে বন্ধের দিন বা অফিস সময়ের পরে এবং রাতে এ ধরনের তৎপরতা বেশি দেখা যায়। ওই সময় দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সরা বিশ্রামে থাকেন। তখন তাদের নির্দেশেই সরকারি হাসপাতালটির বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডবয়রা ‘চিকিৎসক’ বনে যান। গতকালের ঘটনায় অভিযুক্ত সুমন হাসপাতালের নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো কর্মী নন। হাসপাতাল নিযুক্ত ওয়ার্ডমাস্টার বা বয়রা ‘স্পেশাল আয়া বা স্পেশাল ওয়ার্ডবয়’ নিয়োগ দিয়ে নিজেদের কাজ তাদের দিয়ে করিয়ে থাকেন। সুমনও সে ধরনের স্পেশাল ওয়ার্ডবয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের বেতন দেয় না। রোগীদের স্বজনদের কাছ থেকে বখশিশের নামে পাওয়া টাকায় তারা চলেন।