জরায়ু ইনফেকশনে করণীয়

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম ।  ১৮ ডিসেম্বর  ২০১৬

জরায়ু ইনফেকশনে করণীয়

জরায়ু ইনফেকশনে করণীয়

আমাদের দেশে কমবয়সী মহিলাদের (২০-৪০ বছর) জরায়ুর ইনফেকশনের হার বেশি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে পেলভিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিজ (PID) বলে। ৮৫% ক্ষেত্রে সাধারণত স্বাভাবিকভাবে শুধু যৌনবাহিত হয়েই এটি হতে পারে। ১৫% ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে যেমন ডিঅ্যান্ডসি, কপারটি, এন্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসি, হিস্টারোসালফিঙ্গোগ্রাফি নামক পরীক্ষার পর জীবাণু সংক্রমিত হয়ে হতে পারে। দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে সাধারনত ২৫ বছরের কম মহিলাদের এবং এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে ৩০ বছর বা তার বেশি বয়সে হয়ে থাকে।

কাদের ঝুঁকি বেশি : মাসিক হয় এমন অল্পবয়স্ক (reproductive age)-এর মহিলাদের যাদের একাধিক পুরুষ যৌনসঙ্গী আছে, যারা পিল বা কনডম ব্যবহার করেন না, আগে যাদের জরায়ু ইনফেকশন হয়েছে, যারা কপারটি ব্যবহার করেন।

উপসর্গ : তলপেটে ব্যথা, জ্বর, মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তস্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, পুঁজের মতো স্রাব, সহবাসে ব্যথা, মাসিক ছাড়া রক্তস্রাব।

সংক্রমণ পদ্ধতি : সাধারণত গনোরিয়া, ক্ল্যামাইডিয়া, ই. কলাই, স্ট্রেপ্টোকক্কাস, স্ট্যাফাইলোকক্কাস, ব্যাকটেরয়েডস ইত্যাদি জীবাণু দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে পুরুষের শুক্রাণু ও ট্রাইকোমোনাড (যা পুরুষের যৌনাঙ্গে থাকে) বাহিত হয়ে জীবাণুগুলো নারীর যৌনাঙ্গে প্রবেশ করে। পরে জীবাণুগুলো জরায়ু, নালী হয়ে ডিম্বাশয়ও আক্রমণ করে। দীর্ঘদিন সংক্রমণ চলতে থাকলে জরায়ু নালী ধ্বংস করে বন্ধ্যত্বও হতে পারে।

রোগ নির্ণয় : জরায়ু মুখের রস, প্রস্রাবের রাস্তায় রস এবং বার্থোলিন গ্ল্যান্ড (মাসিকের রাস্তার মুখে এক ধরনের গ্রন্থি)-এর রস নিয়ে জীবাণু নির্ণয় ও কালচার করে, এছাড়া রক্ত পরীক্ষা, ল্যাপারোস্কোপি, সনোগ্রাফি করে রোগ নির্ণয় সম্ভব।

চিকিৎসা : সংক্রমিত হলে গাইনি রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী কমপক্ষে ১৪ দিন নিয়মিত এন্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে। রোগটি চরম আকার ধারণ করলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েও চিকিৎসা নিতে হতে পারে। অনেক সময় পেটে খুব বেশি পুঁজ জমে গেলে এবং এন্টিবায়োটিক কাজ না করলে অপারেশন করাও লাগতে পারে।ডা. রুশদানা রহমান তমা

ফলোআপ : এন্টিবায়োটিক শেষ হওয়ার ৭ দিন পর পুনরায় জরায়ুর রস কালচার করতে হবে এবং পরপর ৩বার মাসিকের পর জরায়ুর রস কালচার পরীক্ষা করে যদি দেখা যায় যে, জীবাণু নেই তাহলে তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ (Cured) বলে ধরে নেয়া যাবে।

জটিলতা : পেটের ভেতর ইনফেকশন ছড়িয়ে গিয়ে ডিম্বনালী ও ডিম্বাশয়ে চাকা হওয়া, পেরিটোনাইটিস ও সেপটিসেমিয়া নামক জটিলতা হতে পারে। একবার সংক্রমিত হলে বন্ধ্যত্ব হওয়ার আশংকা ১২%, দুইবার হলে ২৫% এবং তিনবারের বেশি হলে এই আশংকা ৫০%। ঠিকমতো চিকিৎসা না হলে রোগটি ক্রনিক হতে পারে। সব সময় তলপেটে বা পীঠে ব্যথা বা সহবাসে ব্যথা থেকেই যায়। এদের একটোপিক প্রেগনেন্সি (জরায়ু ছাড়া পেটের ভিতর অন্য জায়গায় বাচ্চা আসার) আশংকা ৬-১০ গুণ বেশি।

 

প্রতিরোধ : নিরাপদ যৌন সম্পর্ক, কনডম, পিল ব্যবহার, একের অধিক যৌনসঙ্গী না থাকা, সংক্রমিত হলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাওয়া, মাসিকের রাস্তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা বিশেষ করে সহবাসের পর।

লেখক : কনসালটেন্ট (গাইনি), সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা

 

 

Related posts