চা পাতা আমদানিতে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি নামকরা ১৬ প্রতিষ্ঠানের

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম ।  ২৫  আগস্ট ২০১৬

চা পাতা আমদানিতে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি নামকরা ১৬ প্রতিষ্ঠানের

চা পাতা আমদানিতে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি নামকরা ১৬ প্রতিষ্ঠানের

চা পাতা (ব্লাক টি) আমদানিতে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে দেশের নামকরা ১৬ প্রতিষ্ঠান। শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদনে এমনটিই ধরা পড়েছে। একইসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন চা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অবমূল্যায়নের মাধ্যমে চা আমদানিতে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা করে এ রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করে। তদন্ত কমিটি পর্যবেক্ষণে ছয় প্রতিষ্ঠানের মোট ৪৬৮টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে চা আমদানিকারকরা ৮৩ কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার ৭০২ টাকা রাজস্ব ফাঁকির তথ্য উঠে এসেছে।

যেসব প্রতিষ্ঠান চা আমদানির মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে সেগুলো হলো- মেসার্স আবুল খায়ের কনজিউমার প্রোডাক্ট লিমিটেড ৪৪ কোটি ২ লাখ ৮২ হাজার ২১৩ টাকা, এম এম ইস্পাহানি লিমিটেড টি ব্লাং ২০ কোটি ৩৯ লাখ ৪ হাজার ২৩২ , এম এম ইস্পাহানি লিমিটেড টি ব্লেন্ডিং ১৩ কোটি ৭০ লাখ ৪০ হাজার ৫৯১, এস এ কনজিউমার প্রোডাক্টস লিমিটেড ৬৫ লাখ ২৫ হাজার ৩৪৮, ভাই ভাই ফল ভান্ডার ৩১ লাখ ২০ হাজার ৬৩৬, কপোতাক্ষ টি হাউজ ২৫ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬০ ও নিউ স্টার টি হাউজ ২০ লাখ ৬২ হাজার ২০৮ টাকা।

ইস্পাহানি টি লিমিটেড ২০ লাখ ৮৩ হাজার ৪৯৪ টাকা, রাতুল এন্টারপ্রাইজ ১৭ লাখ ২ হাজার ১৪১, কুরবান এন্টারপ্রাইজ ১৬ লাখ ৪৬ হাজার ৫০৭, চৈতালী ট্রেডিং ৮ লাখ ৯৩ হাজার ২৬২, রাজমনি এন্টারপ্রাইজ ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭৮, ফাতেমা ইমপেক্স ২ লাখ ৬২ হাজার ৫৫১, টেটলি এসিআই (বাংলাদেশ) লিমিটেড ১ লাখ ৫১ হাজার ১৪৪, ডেনিশ ফুডস লিমিটেড ২ কোটি ৯০ লাখ ৩ হাজার ২৬৫ ও শাওন চা কোম্পানি ৬০ লাখ ৩৯ হাজার ৯৬৪ টাকা।

২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের গত ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চা আমদানির বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধান করে এ পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার ঘটনা তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, উল্লেখিত সময়ে মেসার্স আবুল খায়ের কনজিউমার প্রোজাক্ট লিমিটেড মোট ১ কোটি ২৯ লাখ ২৫ হাজার ১০৮ কেজি চা আমদানি করে। আমদানিকৃত চা শুল্কায়নের সময় রফতানিকৃত দেশের স্বীকৃত নিলাম মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে শুল্কায়ন করেছে। এতে সরকারের ৪৪ কোটি ২ লাখ ৮২ হাজার ২১৩ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

একই পদ্ধতিতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স এম এম ইস্পাহানি লিমিটেড টি ব্লাং ওই মেয়াদে ৬০ লাখ ৪৮ হাজার ২৪৫ কেজি চা আমদানি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি চা আমদানি ও স্বীকৃত নিলাম মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে প্রদর্শন-পূর্বক শুল্কায়ন করে ২০ কোটি ৩৯ লাখ ৪ হাজার ২৩২ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। আমদানি প্রতিষ্ঠান এম এম ইস্পাহানি লিমিটেড টি ব্লেন্ডিং ৬২ লাখ ৩৭ হাজার ৩২০ কেজি চা আমদানি ও স্বীকৃত নিলাম মূল্যের চেয়ে কম প্রদর্শন-পূর্বক শুল্কায়ন করে ১৩ কোটি ৭০ লাখ ৪০ হাজার ৫৯১ টাকা রাজস্ব কম দিয়েছে। এস এ কনজিউমার প্রোডাক্টস লিমিটেড ২ লাখ ১১ হাজার ৪০০ কেজি চা আমদানি করে ৬৫ লাখ ২৫ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

 

বেনাপোলের ভাই ভাই ফল ভান্ডার নামে প্রোপ্রাইটর মো. রাজু ৫৬ হাজার ৩০০ কেজি চা আমদানি ও স্বীকৃত নিলাম মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্য প্রদর্শনের মাধ্যমে ৩১ লাখ ২০ হাজার ৬৩৬ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে এবং কপোতাক্ষ টি হাউজ ৪৯ হাজার ৮৬৪ কেজি চা আমদানির মাধ্যমে ২৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা রাজস্ব কম দিয়েছে।

এদিকে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি তদন্তে উঠে আসার পর শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেট থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

এ সম্পর্কে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, যারা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তারা দেশের শত্রু। এনবিআর তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছে। কর ফাঁকি দিয়ে যারা ধরা পড়বে তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। যাতে ভবিষ্যতে কর ফাঁকির ইচ্ছা না করে।

অন্যদিকে এ বিষয়ে অভিযুক্ত একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

Related posts