খালেদার সঙ্গে শি জিনপিংয়ের বৈঠককে ‘নতুন বার্তা হিসেবে’ দেখছেন বিএনপি

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম ।  ১৬   অক্টোবর  ২০১৬

খন্দকার মোশাররফ হোসেন

খন্দকার মোশাররফ হোসেন

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠককে ‘নতুন বার্তা বা ইশারা হিসেবে’ দেখছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার উদ্যোগে ‘চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর: ভূ-আঞ্চলিক রাজনীতির নতুন বার্তা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার লুৎফর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার আমিনুর রহমান, আসাদুর রহমান খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

ড. মোশাররফ বলেন, ‘চীন জনগণের বন্ধুত্বে বিশ্বাস করে। আপনারা দেখেছেন- রাষ্ট্রপতিরা একটা দেশে আসলে সরকারি ও বিরোধী দলের সঙ্গে কথা বলেন। আর বিরোধী দলকে স্বীকৃতি দেয়, সেই বিরোধী দল যারা পার্লামেন্টে আছে।’

তার দাবি, ‘পরিষ্কারভাবে এদেশের জনগণকে চীনের  প্রেসিডেন্ট এ বার্তা দিয়ে গেলেন- এ পার্লামেন্ট (দশম)  যেহেতু নির্বাচিত পার্লামেন্ট নয়, এ পার্লামেন্টে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি বা বিরোধী দল নেই। সেজন্য বিরোধী দলকে চীনের প্রেসিডেন্ট কোনো গুরুত্ব দিলেন না।’

‘তিনি (চীনের প্রেসিডেন্ট) গুরুত্ব দিয়েছেন দেশের ১৬ কোটি মানুষের নেত্রী খালেদা জিয়াকে। আর আমরা এটাও মনে করি যে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একটি বার্তা বা ইশারা এ দেশের জনগণের জন্য দিয়ে গেছেন’ যোগ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা।

চীনের প্রেসিডেন্টের সফর মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (শি জিনপিং) এদেশের জনগণকে এই বার্তাই দিয়ে গেছেন- বাংলাদেশের যে কোনো সংকটে জনগণের পাশে চীন আছে।’

‘এদেশের জনগণ যাতে করে নিজেদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, সেজন্য চীন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের পাশে আছে’ যোগ করেন ড. মোশাররফ।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্ট নিজেও বলেছেন- দু’দেশের জনগণের মধ্যে তিনি বন্ধুত্ব চান। এ বন্ধুত্ব এজন্য চান যে, জনগণের মধ্যে যদি বন্ধুত্ব হয়, সেটা টেকসই হয় এবং জেনারেশন টু জেনারেশন এ বন্ধুত্ব চলতে থাকবে।’

ঢাকা সফরে চীনের সঙ্গে সম্পাদিত বিভিন্ন চুক্তি সম্পর্কে ড. মোশাররফ বলেন, ‘এই চুক্তিগুলো যাতে উভয় দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে হয়, কারো স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নয়। দু’দেশের জনগণের উন্নয়নের স্বার্থ এবং স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষা হবে- এ রকম চুক্তি অবশ্যই চীন বাস্তবায়ন করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’

 

তিনি বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে একটি ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষায় চীন বিশাল অবদান রাখতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

‘এক চীন নীতি’ সম্পর্কে দলের অবস্থান তুলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘আমরা এক চীন নীতির সমর্থক। হংকং আজকে চীনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কোনো রকমের ঝগড়া-বিবাদ ছাড়াই। যেহেতু চীন সহাবস্থানে বিশ্বাস করে, সেজন্য ম্যাকাও এবং হংকং স্বেচ্ছায় চীনের মূল ভুখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।’

‘তাইওয়ান এখনও চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগ দেয়নি। আমরা আশা করি, তারাও এই মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চীনকে আরো শক্তিশালী করবে’ যোগ করেন তিনি।

এশিয়ান হাইওয়ের মাধ্যমে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে ড. মোশাররফ বলেন, ‘চীনের সঙ্গে কানেক্টিভি সম্প্রসারণ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের সময় প্রস্তাব ছিল- এশিয়ান হাইওয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হয়ে ৩৭ কিলোমিটার নতুন রাস্তা করে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও চীনের হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে গোটা পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলবো। চীন এতে সমর্থন করেছিল।’

সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চারদলীয় জোট সরকারের প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। চীনও সমর্থন করেছিল। এই বন্দর হলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সুফল পাবে, চীনও সুফল পাবে। আশা করি, এই সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মাধ্যমে চীন দু’দেশের বন্ধুত্বকে আরও সুদৃঢ় করবে।’

 

 

Related posts