উন্নয়নের নামে ডিএনসিসির গাছ উজাড়!

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১১ এপ্রিল  ২০১৭

উন্নয়নের নামে ডিএনসিসির গাছ উজাড়!

উন্নয়নের নামে ডিএনসিসির গাছ উজাড়!

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)  রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় শত শত গাছ কেটে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ।

কর্পোরেশনের একটি প্রকল্পের আওতায় ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে গাছগুলো কাটা হয়েছে। এতে এলাকার সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। দিন দিন বাড়ছে তাপমাত্রা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, উন্নয়নের নামে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত গাছও কেটে নিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে সংস্থার মেয়র আনিসুল হক বলেন, প্রয়োজন ছাড়া কোনো গাছ কাটা হচ্ছে না।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোনো গাছে হাত দিতে আমাদেরও কষ্ট হয়। কারণ একদিনে একটি গাছ তৈরি হয় না। কিন্তু একান্ত প্রয়োজন ছাড়া আমরা কোনো গাছে হাত দিচ্ছি না। জনসাধারণের জন্য যেসব গাছ রিস্কি বা চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয় সেসব গাছই কাটা হচ্ছে। সড়ক থেকে শত শত ইলেক্ট্রিক পোল অপসারণ করা হচ্ছে।

উন্নয়নের নামে ডিএনসিসির গাছ উজাড়!

উন্নয়নের নামে ডিএনসিসির গাছ উজাড়!

নির্বাচনের পর মেয়র আনিসুল হক ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে সবুজায়ন করতে ‘গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ কর্মসূচির আওতায় তিনি কর্পোরেশন এলাকায় কয়েক লাখ গাছ লাগানোর কথা বলেন। একই সঙ্গে নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়ার ঘোষণা দেন।

মেয়রের ওই ঘোষণা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এছাড়া একটি সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে আগামী দুই বছরে তিন লাখ ২৫ হাজার গাছ লাগানোর কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তিনি।

তবে মেয়রের ‘গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা’ ঘোষণার পর উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করতে সড়ক থেকে গাছ কাটা কর্পোরেশনের দ্বিমুখী আচরণ বলে মনে করছেন বনানীবাসী। তারা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গাছ লাগানো, গাছ কাটা নয়। গাছ লাগানোর কর্মসূচি ঘোষণা করে গাছ কেটে ফেলায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে নগরী।

এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন বলছে, প্রয়োজনের তাগিদে যেসব গাছ কাটা হচ্ছে, নতুন গাছ লাগিয়ে সেই শূন্যতা পূরণ করা হচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বনানী খেলার মাঠের পাশ দিয়ে যাওয়া ২৬ নম্বর সড়কটির দুই পাশ থেকে অর্ধশতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গাছগুলো এখনও সড়কের পাশে পড়ে আছে। সড়কটির দুই পাশে সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে। ড্রেন নির্মাণের স্থান থেকে বহু দূরে ফুটপাতের বড় বড় গাছও কেটে ফেলার চিহ্ন দেখা গেছে।

সড়কের প্রবেশপথে ব্যারিকেড দিয়ে ভেতরে চলছে গাছ কাটার মহোৎসব। রাস্তার ওপরই কেটে ফেলা গাছের ডালপালা ও গুঁড়ি ফেলে রাখা হয়েছে। সড়কটির পাশে রাজউক ও বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের একটি কোয়ার্টার রয়েছে। এ কোয়ার্টারে কয়েক শত মানুষ বসবাস করে।

তারা জানান, রাস্তা থেকে গাছ কেটে ফেলায় তাদের ভবনে আগের তুলনায় গরম বেড়েছে। সিটি কর্পোরেশন চাইলে গাছগুলো রেখেই উন্নয়ন কাজ করতে পারত। ড্রেন থেকে অনেক দূরের গাছও কেটে নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো চিহ্ন রাখা হয়নি।

স্থানীয় ভ্যানচালক মোহাম্মদ আলী  বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের বড় স্যাররা এসে বলে যান গাছ বেশি কাটা যাবে না। কিন্তু সব গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। বড় বড় গাছ দেখলে আগে কাটা হয়। যে গাছ কাটার কোনো দরকার ছিল না সেটিও কাটা হয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বনানী সোসাইটির এক সদস্য  বলেন, ‘মেয়রের সঙ্গে সোসাইটির বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোনো গাছ কাটা হবে না বলে জনানো হয়। এছাড়া একটা গাছ কাটা হলে আরও ১০টি গাছ রোপণ করা হবে বলেও জানানো হয়। কিন্তু এখন দেখি প্রয়োজনের বাইরেও গাছ কাটা হয়েছে। কে কার কথা শোনে? গাছ কেটে সাবাড় করে দেয়া হেয়েছে।’

সড়কের গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন শ্রমিক জানান, কোন কোন গাছ কাটা হবে ঠিকাদার তা দেখিয়ে যান। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী তারা গাছ কাটছেন। কোন গাছটি কাটা প্রয়োজন আর কোনটি নয়, সেটা তাদের দেখার বিষয় নয়।

স্থানীয় এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘কতো সুন্দর সুন্দর গাছ ছিল। এ এলাকার চেহারাই পাল্টে দিয়েছিল। কিন্তু গাছগুলো করাত দিয়ে কেটে ফেলা হলো, যেন বনানীবাসীর বুকে করাত বসানো হলো। প্রকাশ্যেই গাছগুলো কাটা হলো আর রাতে ট্রাকে ভরে তা নিয়ে যাওয়া হলো। দেখার যেন কেউ ছিল না!’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বনানীর ১১৬ ও ১২৬ নম্বর সড়কেও ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে বহু গাছ কাটা হয়েছে। এছাড়া গুলশান-১ থেকে ২ নম্বর সড়ক পর্যন্ত ফুটপাতের উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে শত শত গাছ বলি হয়েছে। হয় কেটে ফেলা হয়েছে না হয় সংস্কার কাজে মারা পড়েছে। এর আগেও কয়েক ধাপে এ এলাকার কয়েকশ গাছ কাটা হয়।

ডিএনসিসির উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তারা যদি একটু সতর্ক থাকতেন তাহলে গাছ কাটা বা মারা যাওয়ার সংখ্যা কয়েকগুণ কমিয়ে আনা যেত বলে মত দেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, গাছ নিধনের বিষয়টি আমি জানি না। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি কেউ অপ্রয়োজনে গাছ কাটেন এর দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত ও সড়ক উন্নয়নের নামে পরিচালিত কর্মকাণ্ডে অধিকাংশ গাছ মারা পড়েছে।

উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর সড়কের অবস্থাও একই। এ সড়কে ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু করেছে ডিএনসিসি। এতে সড়কের পাশে বেশকিছু গাছ কাটা হয়েছে। ভেতরের কয়েকটি সড়কের অবস্থাও একই। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের প্রশ্ন, ‘সবুজ’ উত্তরার অবস্থা দিন দিন এমন হচ্ছে কেন।

ওই সড়কে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, সেখানে ফুটপাত নির্মাণ করা হচ্ছে। এজন্য কিছু গাছ কাটতে হচ্ছে। এর আগেও উত্তরার ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ও ১১ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন সড়কে এলোপাতাড়ি গাছ কাটা হয়। গাছগুলো পরে সরিয়ে নেয়া হলেও সেখানে নতুন কোনো গাছ লাগানো হয়নি।

৪ নম্বর সেক্টরের শাহজালাল অ্যাভিনিউ এবং ৬ নম্বর সেক্টরের ঈশা খাঁ অ্যাভিনিউতে গাছ কাটা হয়েছে ২০১৫ সালের শেষ দিকে। সেখানে এখনও নতুন করে কোনো গাছ লাগানো হয়নি।

বনানীর বিভিন্ন সড়কেও চলছে উন্নয়ন কাজ। এখানেও বেশকিছু গাছ মরে গেছে। বনানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র আনিসুল হক জাগো নিউজকে বলেন, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোনো গাছ কাটা হচ্ছে না। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি গাছ নিধন না করতে। কিন্তু উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে কিছু গাছ কাটতে আমরা বাধ্য হচ্ছি।

একই কথা বলেন সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আনোয়ারুল ইসলামও।

 

 

Related posts