শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১৬ জানুয়ারি ২০১৭
নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব হিসেবে অভিনেতা আহমেদ শরীফের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। দলটির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় জোটের (বিএনএ) দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার রাতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নাজমুল হুদা নিজেই আহমেদ শরীফের নাম ঘোষণা করেন।
এ সময় অভিনেতা আহমেদ শরীফ সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। নাম ঘোষণার পর তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানান।
এর আগে দলটির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মাওলানা আবেদ আলী। তবে তার বাড়ি চট্টগ্রাম হওয়ায় সাংগঠনিক কাজের সুবিধার্থে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে বলেও জানান নাজমুল হুদা। তবে আবেদ আলীকে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
এছাড়া তৃণমূল বিএনপির ঢাকা মহানগরের তিন শীর্ষ নেতার নামও অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেন নাজমুল হুদা। মো. শাহজাহান সাজুকে সভাপতি, নিয়ামুল বাশাকে সাধারণ সম্পাদক ও লায়ন খালেদ আক্তারকে ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নাম ঘোষণা করেন।
অনু্ষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ১৪ দলের সমন্বয়ক, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। নতুন মহাসচিবের নাম ঘোষণার পর তিনি রসিকতা করে বলেন, আহমেদ শরীফ সাহেব মহাসচিব হয়েছেন। সমস্যা হলো উনাকে তো আমরা ভিলেন হিসেবে চিনি। অবশ্য আমাদের দলে নায়কও আছেন সমস্যা হবে না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাসদ সভাপতি ও তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা ও শিল্পপতি সালমান এফ রহমান প্রমুখ। ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর নাজমুল হুদার নেতৃত্বে তৃণমূল বিএনপি গঠিত হয়।
বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে তিনটি দল গড়েছিলেন নাজমুল হুদা। এই হিসেবে ‘তৃণমূল বিএনপি’ তার তৈরি চতুর্থ দল।
১৯৭৮ সালে তখনকার সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর গঠিত প্রথম স্থায়ী কমিটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন নাজমুল হুদা। খালেদা জিয়ার দুই সরকারের আমলে তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। নানা ঘটনায় আলোচিত হুদা ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা দেওয়ার কারণে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ২০১০ সালের ২৩ জুন তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। হুদা তখন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান।
ভুল স্বীকার করে খালেদা জিয়ার কাছে আবেদন করার পর ২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আবার বিএনপির সদস্যপদ ফিরে পান নাজমুল হুদা। কিন্তু ২০১৪ সালের ৬ জুন সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অভিমানের কথা তুলে ধরে বিএনপি ত্যাগের ঘোষণা দেন। ঢাকার দোহারের এই সাবেক সাংসদ বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। সে সময় তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলাও হয়েছিল।
২০১০ সালে বিএনপি বহিষ্কৃত হওয়ার পর হুদা বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে নতুন দল গঠন করেন। অবশ্য ওই দল থেকেও তিনি বহিষ্কৃত হন। দ্বিতীয় দফা বিএনপি ছড়ার পর ২০১৪ সালের মে মাসে হুদা গঠন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স- বিএনএ। কিন্তু ওই দলের তেমন কোনো কার্যক্রম না থাকায় এক পর্যায়ে তার বিএনপিতে ফেরার গুঞ্জন ওঠে।
এরপর ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর নাজমুল হুদা ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি’ গঠনের ঘোষণা দেন। আর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ৩০টি দল নিয়ে ‘বাংলাদেশ জাতীয় জোট’ নামে নতুন একটি দল গঠনের ঘোষণা দেন তিনি।