আওয়ামী লীগ বিএনপির ঐক্যের ডাকে ষড়যন্ত্র দেখছে

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ৫  আগস্ট ২০১৬

আওয়ামী লীগ বিএনপির ঐক্যের ডাকে ষড়যন্ত্র দেখছে

আওয়ামী লীগ বিএনপির ঐক্যের ডাকে ষড়যন্ত্র দেখছে

যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে আদালত জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে যেকোনো সময়- খোদ জামায়াতেই রয়েছে এমন শঙ্কা। তারপরও বিএনপির তরফ থেকে এখনো দলটিকে জোটে না রাখার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এরইমধ্যে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে উঠেছে জাতীয় ঐক্যের কথা। জাতীয় ঐক্যের জন্য এসেছে বিএনপির জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার কথা। আবার বিভিন্ন মহলে এসেছে আগাম নির্বাচনের কথাও।

তবে আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। একইসঙ্গে জামায়াতকে ছেড়ে দিলেই বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্য হয়ে যাবে এমনটাও মনে করছেন না তারা।

আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, বিএনপি জামায়াতকে ছেড়ে দিলে হবে না, অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের ভুল স্বীকার করতে হবে। এরপর ঐক্যের পরিবেশ সৃষ্টি হলে তখন দেখা যাবে কী হয়। বিএনপি আসলে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে জোট ভারী এবং রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমনের চেয়ে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য চাপ প্রয়োগই তাদের মূল লক্ষ্য হবে।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী মহলের নেতারা মনে করেন, জঙ্গি দমনের নামে বিএনপি যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে তা মূলত সরকারের সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কৌশল। সরকার বিএনপির সঙ্গে কোনো বিষয়ে আলোচনায় বসলেই বিএনপি তা সরকারের দূর্বলতা হিসেবে প্রচার করবে। গত ২৬ জুলাই আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন। এরপর থেকে আগাম নির্বাচন হবে— এরকম গুঞ্জন শুরু হয় রাজনৈতিক অঙ্গনে।

আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ সদস্যদের নির্বাচনের প্রস্তুতি এখন থেকে নিতে বলার অর্থ এই নয় যে, আগাম নির্বাচন হবে। তৃণমূলকে আরও বেশি সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে এমপিরা যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা যেন রাখেন সে জন্যই প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেছেন। মূলত দলকে সংগঠিত করার জন্যই এই বার্তা। সংসদ সদস্যরা এলাকামুখী হলে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা কাজে উৎসাহ পাবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, আগাম নির্বাচনের কথা বলে মূলত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশে কখনও আগাম নির্বাচন হয়নি। আগাম নির্বাচন দেয়ার অর্থ ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। এটা আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক পরাজয় হবে।

 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, ‘সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন যথা সময়ে হবে।’ জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় ঐক্যটাকে কোনো দলের ঐক্য হিসেবে দেখি না। আমাদের পারসেপশনটা আলাদা। যে ইস্যুতে ঐক্য প্রয়োজন তা হলো জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সমগ্র জনগণের ঐক্য। আমরা জনগণের ঐক্যে বিশ্বাস করি। কিন্তু এখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলো না। সুতরাং মাঝখান দিয়ে কতগুলো রাজনৈতিক দলের ঐক্য হলে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ হবে না। বিএনপি জামায়াতকে ছেড়ে গেলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য জামায়াতবিরোধী ঐক্যের পথ প্রশস্ত হয়, এটা সন্দেহ নেই।’

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘আমরা আরো আগে থেকে বলে আসছি বিএনপি জামায়াতকে ছাড়ুক। যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করুক। অতীতে ভুল যেমন- একুশে আগস্ট হামলার কথা স্বীকার করুক। তারপর যদি তারা একটা ক্লিন ইমেজ নিয়ে আসতে পারে এবং ঐক্যের পরিবেশ তৈরি হয় তাহলে এসব বিষয়ে নিয়ে দলীয়ভাবে ভাবা যাবে। আমরা তো বলিনি যে বিএনপি জামায়াতকে ছাড়লে কালকে তাদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য হয়ে যাবে। বিএনপি নিজেই তো এখন একটা জামায়াতে পরিণত হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে দলটির এই চিন্তার কথা জানা গেছে। তারা বলেন, জামায়াত ছাড়লেই বিএনপির সব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে, এমনটা নয়। তার আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। তখন আরো প্রশ্ন আসবে, তাহলে বিএনপি কি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও বর্তমান সরকারকে মেনে নিচ্ছে। সরকারকে মেনে নিলে সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালে নির্বাচন হবে তাও মানতে হবে। একই সঙ্গে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ২০১৩-২০১৫ সালে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের বিষয়েও বিএনপিকে ভুল স্বীকার করতে হবে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি তাদের মনোভাবের লোকজনের সঙ্গে ঐক্য করুক। আওয়ামী লীগও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের নিয়ে ঐক্য করে এগিয়ে চলেছে। দেশের শান্তির জন্য কাজ করতে চাইলে যে কেউ যেকোনো ভুবনে দাঁড়িয়ে করতে পারে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির কোনো সুস্থ রাজনীতি নেই, এরা অসুস্থ রাজনীতি করে। অসুস্থ রাজনীতি করে সব সময় বাংলাদেশের মানুষকে আতঙ্কে রাখতে চায়। কখনও জঙ্গি হামলা, কখনও সন্ত্রাসী হামলা, কখনও আগুন সন্ত্রাস করে এগুলো করতে চায়। এখন তারা বাক্য সন্ত্রাস-ঐক্য সন্ত্রাস তৈরি করছে।’

 

Related posts