৭খুনের অন্যতম আসামী ও মন্ত্রী মায়ার জামাতা তারেক সাঈদ ‘রোগী’ পরিচয়ে হাসপাতালে

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ২৯  এপ্রিল  ২০১৬

৭খুনের অন্যতম আসামী ও মন্ত্রী মায়ার জামাতা তারেক সাঈদ ‘রোগী’ পরিচয়ে হাসপাতালে

৭খুনের অন্যতম আসামী ও মন্ত্রী মায়ার জামাতা তারেক সাঈদ ‘রোগী’ পরিচয়ে হাসপাতালে

বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪৩নম্বর কেবিন। তৃতীয় তলার একদম কোনার দিকের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষ এটি। কক্ষের বাইরে গল্পগুজবে ব্যস্ত কয়েকজন পুলিশ সদস্য। এই কক্ষে চিকিৎসক এসেছিলেন? এমন প্রশ্নে একজন পুলিশ সদস্য বললেন, ‘তারেক সাঈদের কথা বলছেন? নাহ্। তবে ওনার একজন ভাই আছেন চিকিৎসক। উনিই দেখাশোনা করেন।’

৩ জানুয়ারি থেকে তিনতলার এই কেবিনেই আছেন তারেক সাঈদ। কারা কর্তৃপক্ষের কাছে বুকে ব্যথার কথা বলেছিলেন, হাসপাতালে গিয়ে বলেছেন পিঠে ব্যথা। ভর্তি আছেন নিউরোসার্জারি বিভাগে। হাসপাতাল সূত্র বলছে, দেখাশোনা করছেন তারেক সাঈদেরই এক ভাই। তিনি নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক।

কেবিন ব্লকে নার্সরা যে কক্ষে থাকেন, সেখানে কোন কোন কেবিনে কার তত্ত্বাবধানে রোগী আছে, তার একটি তালিকা টাঙানো আছে। তবে ৪৩ নম্বর কেবিনের তথ্য সেখানে নেই। গত রোববারও ছিল না। সেদিন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ওই কেবিনে নাক কান গলা বিভাগের চিকিৎসকদের ডাক পড়েছে। কিন্তু কোন রোগীর জন্য ডাক পড়েছে, নার্সেস স্টেশনে গিয়ে প্রথমে সে তথ্য পাননি চিকিৎসকেরা। পরে নার্সরা ফাইল দেখে তারেক সাঈদের কথা জানান।

সেদিন চিকিৎসকদের পিছু পিছু গিয়ে কক্ষের বাইরে থেকে তারেক সাঈদ ও তাঁর কক্ষটা দেখার সুযোগ হয়েছিল এই প্রতিবেদকের। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কেবিনের দরজায় টোকা দিলেন চার-পাঁচজন চিকিৎসক। সঙ্গে সঙ্গেই সাদার ওপর লাল চেক টি-শার্ট আর নীল জিনস পরে দরজা খুলে দিলেন তারেক সাঈদ। দেখা গেল ভেতরে টেবিলের ওপর ল্যাপটপ, বিছানায় লালরঙা চাদর। ঘরের ভেতরে কিছুক্ষণ আগেই সুগন্ধি ছড়ানো হয়েছিল। বাইরেও পৌঁছেছে সেই সৌরভ। মিনিট দশেক তিনি খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই কথা বলছিলেন চিকিৎসকদের সঙ্গে। তারেক সাঈদের কী হয়েছে জানতে চাইলে একজন চিকিৎসক বলেন, ‘ওনার নাকের ভেতরটা একটু ফুলে গেছে। ওষুধ দিয়ে দিয়েছি।’ গুরুতর কিছু কি না জানতে চাইলে ‘না’ সূচক ইঙ্গিত দিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তারেক সাঈদ নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অসিত বরণের তত্ত্বাবধানে আছেন। মুঠোফোনে অসিত বরণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারেক সাঈদের অনেক আগে থেকেই কোমরে ব্যথা ছিল বলে শুনেছি। খুব গুরুতর বলে মনে হচ্ছে না। তবে আমরা একটি এমআরআই করতে দিয়েছি। রিপোর্ট এখনো হাতে পাইনি।’ কিন্তু এর মধ্যেই আরাম-আয়েশে তারেক সাঈদের এক মাস সময় কেটে গেছে হাসপাতালের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে।

গুরুতর রোগ যে নয় তার আভাস পাওয়া গেল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র উপপরিচালক খাজা আবদুল গফুরের সঙ্গে কথা বলেও। প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘যেসব রোগী গুরুতর অসুস্থ, তাদের আমরা কেবিনে রাখি না। কারণ, ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের পক্ষে কেবিনে গিয়ে সব সময় রোগীর খোঁজখবর করা সম্ভব হয় না। কেবিনে আরাম বেশি।’ তারেক সাঈদের রোগটি কি তাহলে হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার মতো গুরুতর নয়? এমন প্রশ্নে সরাসরি জবাব দেননি তিনি। বলেন, তারেক সাঈদ কোমরে ব্যথার জন্য ফিজিওথেরাপি নিচ্ছেন, তাঁর নাকে সমস্যা আছে। তিনি হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে ভর্তি।

একই প্রশ্ন করা হলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ নেসার আলম বলেন, ‘ভালো হয় আপনি যদি চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। উনি তো বুকে ব্যথার কমপ্লেইন করছিলেন।’ কয়েদিরা ল্যাপটপ ব্যবহার করতে পারেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারাবিধিতে ল্যাপটপ, মুঠোফোন ব্যবহারের অনুমতি নেই।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৩০ এপ্রিল ছয়জনের ও ১ মে অপর একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তদন্তে এই হত্যার সঙ্গে র্যাব-১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ ও আরও কয়েকজন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উঠে আসে। ওই ঘটনার পর তিনি গ্রেপ্তার হন এবং সেনাবাহিনী থেকে চাকরি চলে যায়। এই মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি তারেক সাঈদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা।

 

Related posts