লিভারে চর্বি জমার কারণ ও চিকিৎসা

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম।২ আগস্ট ২০১৬

লিভারে চর্বি জমার কারণ ও চিকিৎসা

লিভারে চর্বি জমার কারণ ও চিকিৎসা

সম্প্রতি ফ্যাটি লিভার নামক রোগ প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। লিভার বা যকৃতের কোষসমূহে অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণেই এই রোগ দেখা দেয়।

প্রকার

* অ্যালকোহলিক (মদ্যপানজনিত) ফ্যাটি লিভার রোগ

* নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগ

(মদ্যপানজনিত নয় এমন কারণে ফ্যাটি লিভার রোগ)। এই রোগটিই আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়।

চর্বি জমার কারণ

* শরীরের অতিরিক্ত ওজন * রক্তে চর্বির আধিক্য * ডায়াবেটিস

* ইনসুলিন কার্যকরহীনতা

কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়ামবিহীন আরামপ্রদ জীবনযাপন এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এ রোগের প্রধান কারণ।

অন্যান্য কারণ

* মদ্যপান * হেপাটাইটিস সি * উইল্সন ডিজিজ (Wilson’s disease)

* অনেক দিন ধরে উপবাস * হরমোনজনিত রোগ- হাইপোথাইরয়েডিজম, হাইপোপিটুইটারিজম।* কিছু ওষুধ যেমন- এমিয়োডেরন, স্টেরয়েড, মেথ্রোট্রেক্সেট, টেমোক্সিফেন, ভেলপ্রোয়েট ইত্যাদি।

রোগের ব্যাপ্তি

স্থূল দেহ (বি.এম.আই> ৩০)-৯৪% লোক রোগাক্রান্ত।

অতিরিক্ত ওজন (বি.এম.আই> ২৫)-৬৭% লোক রোগাক্রান্ত

স্বাভাবিক ওজন- ২৫% লোক রোগাক্রান্ত

ডায়াবেটিক রোগী-৪০-৭০% লোক রোগাক্রান্ত।

দেশে সাধারণ হিসেবে শতকরা ১৮ থেকে ২০ ভাগ মানুষ এ রোগে ভুগছেন।

রোগটি যেভাবে অগ্রসর হয়

 

লিভারে চবি > কোষসমূহে চর্বিজনিত প্রদাহ

> ক্রমবর্ধমান লিভারে ফাইব্রেসিস > লিভার সিরোসিস > লিভার ক্যান্সার

ফ্যাটি লিভার রোগের জটিলতা

* লিভার সিরোসিস* লিভার ক্যান্সার * হৃদরোগজনিত ঝুঁকি বৃদ্ধি।

রোগের লক্ষণ

* বেশিরভাগ রোগীই লক্ষণহীন থাকেন এবং সাধারণত ঘটনাক্রমে রোগটি নির্ণীত হয়। লিভার ফাংশন টেস্টে অস্বাভাবিকতা বা লিভার সাইজ বড় হওয়া বা অন্য রোগের অস্বাভাবিকতা বা লিভার সাইজ বড় হওয়া বা অন্য রোগের জন্য পরীক্ষা করার সময় বিশেষত আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে রোগটি ধরা পড়ে।

* কারো কারো পেটের ডান উপরি অংশে একটু ভার ভার বা হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। কেউ বা শারীরিক দুর্বলতার অভিযোগ করে থাকে।

* কখনও কখনও রোগী ফ্যাটি লিভার রোগের জটিলতা নিয়ে আসতে পারেন (যেমন লিভার সিরোসিস ও তার জটিলতাগুলো, লিভার ক্যান্সার ইত্যাদি।)

চিকিৎসা

ফ্যাটি লিভার রোগের চিকিৎসার দুটি দিক-

* লিভার রোগের চিকিৎসা

* রোগটির সন্নিহিত অবস্থাগুলো নির্ণয় ও চিকিৎসা, যেমন- শরীরের স্থূলতা, রক্তে চর্বির আধিক্য, ডায়াবেটিস, ইনসুলিন অকার্যকারিতা ক্যার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি ইত্যাদি।

করণীয়

* বর্তমানে ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা প্রধানত জীবনযাপন পদ্ধতি পরিবর্তনের ওপরই জোর দিয়ে থাকে। শরীরের ওজন কমানো, দৈনন্দিন ব্যায়াম এবং কম ক্যালরিযুক্ত আঁশসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ জরুরি।

* শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। অতিরিক্ত ওজন ঝেড়ে ফেলুন। শরীরের ৫-১০% ওজন কমালে লিভারের চর্বি ও চর্বিজনিত প্রদাহ যথেষ্ট পরিমাপে কমে এবং লিভারের এনজাইমগুলো স্বাভাবিক হয়। মনে রাখতে হবে অতিদ্রুত শরীরের ওজন কমানো ঠিক নয়।

* সুষম ও ক্যালারিযুক্ত আঁশসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। যেমন- সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ইত্যাদি। উচ্চ শর্করা বা চর্বিসমৃদ্ধ খাবার যেমন- ঘি, মাখন, পনির, লাল মাংস, মাছের ডিম, বড় মাছের মাথা বর্জনীয়। এতে শরীরের পরিপাক সঠিক হয় এবং ওজন ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

 

* নেশাজাতীয় দ্রব্য বর্জন করতে হবে। মদ্যপান ত্যাগ করুন।

* ফাস্টফুড, কার্বোনেটেড চর্বি বা শর্করা সমৃদ্ধ ড্রিংকস, চকলেট বর্জনীয়।

* দৈনিক শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম শরীরের ওজন ও লিভারের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।

* রোজ ঘণ্টাখানেক ঘাম ঝরিয়ে হাঁটতে চেষ্টা করুন।

* ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

ফ্যাটি লিভারে চিকিৎসায় কী ওষুধ ব্যবহার করা হয়

বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে কোনো ওষুধই জীবনযাপন পদ্ধতি পরিবর্তনের চেয়ে অর্থাৎ দৈনন্দিন ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের চেয়ে বেশি কার্যকর নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিুলিখিত ওষুধ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ব্যবহার করা হয় যেমন- ভিটামিন-ই, ওমেগো-৩ ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি। রক্তে চর্বির আধ্যিক্য কমাতে স্টাটিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ফ্যাটি লিভার রোগ হলে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। খুব কম সংখ্যক রোগীরই জটিলতা তৈরি হয় এবং তা হতে অনেক বছর সময় লাগে। তাই ভালো থাকার জন্য শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখুন। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার বর্জন করুন। দৈনন্দিন ব্যায়ামের অভ্যাস করুন, রোগমুক্তি আসবেই।

ফ্যাটি লিভার রোগীর কী কী পরীক্ষা করা প্রয়োজন

রক্ত পরীক্ষা : কোনো নির্দিষ্ট একটি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি নির্ণয় করা যায় না। কিছু লিভার এনজাইম যেমন- ALT, AST, ALP, GGT মাত্রা বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে ALT এনজাইম, AST এর তুলনায় বাড়তি থাকবে, যা অ্যালকোহলিক লিভার রোগের বিপরীত। সন্নিহিত কিছু রক্ত পরীক্ষা যেমন- Viral Marker-HBsAg, Anti HCV. রক্তে চর্বির মাত্রা, রক্তে গ্লুকোজমাত্রা, থাইরয়েড হরমোন ইত্যাদি পরীক্ষা দেখে নেয়া উচিত।

আলট্রাসনোগ্রাফি : এটি ফ্যাটি লিভার নির্ণয় গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।

সিটি স্ক্যান বা এমআরআই

ফাইব্রোস্ক্যান লিভার : এই পরীক্ষার মাধ্যমে লিভারের নমনীয়তা দেখা হয় এবং লিভার কোষের চর্বি জমার আপাত পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। এই পরীক্ষা দ্বারা রোগটির ক্রম অগ্রসরমানতা চেক করা যায়।

লিভার বায়োপসি : এ পরীক্ষাটি গোল্ড স্টান্ডার্ড, যার মাধ্যমে লিভার কোষগুলোয় চর্বি, চর্বিজনিত প্রদাহ ও ফাইব্রেসিস ব্যাপ্তি দেখা যায়। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে পরীক্ষাটির প্রয়োজন।

 

 

Related posts