মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথা

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ২৪  সেপ্টেম্বর ২০১৬

মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথা

মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথা

প্রায়ই রোগীরা বলে, ডাক্তার সাহেব আমি শক্ত জায়গায় বসতে পারি না বা বসলে মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ে বেশ ব্যথা হয়। সামনের দিকে ঝুঁকে বসলে ব্যথা কিছুটা কম অনুভব হয়। রিকশায় বসলে হাতে ভর দিয়ে কোমর আলগা করে রাখি।

এ এক মারাত্মক অভিজ্ঞতা। এ রকম রোগে না ভুগলে এই অস্বত্বিকর অভিজ্ঞতা উপলব্ধি করা যায় না। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে ককসিডাইনিয়া বলে। ককসিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথা ১৫৮৮ সালে প্রথম চিহ্নিত হয় এবং পরে মি. স্যামপসন ১৮৫৯ সালে ককসিডাইনিয়া বা ককসিগোডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথা নামকরণ করেন। ককসিস, মেরুদণ্ডের শেষের হাড় এবং ৩-৫ সেগমেন্টের সমন্বয়ে গঠিত। তবে ৮০% ক্ষেত্রে চারটি সেগমেন্ট থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের পেশি, লিগামেন্ট ও টেনডনের সাথে যুক্ত থাকে। ককসিস আকৃতিতে সামনের দিকে কনকেভ বা অবতল লেন্সের মতো এবং পেছনের দিকে কনভেক্স বা উত্তল লেন্সের মতো। ককসিস পেশি, লিগামেন্ট ও টেনডনের মাধ্যমে পায়খানার রাস্তার স্ট্যাবিলিটি মেইনটেন করে এবং পায়খানার বেগ নিয়ন্ত্রণ করে। বসলে, দুই পাশে ইসচিয়াল টিউবেরোসিটি এবং মাঝখানে ককসিস শরীরের ওজন বহন করে। পেছনে ঝুকে বসলে ককসিসের ওপর প্রেসার বেশি পড়ে এবং সামনে ঝুকলে প্রেসর কম পড়ে। তাই ককসিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথা- রোগীরা সামনের দিকে ঝুঁকে বসে।

ককসিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথার কারণগুলো :

এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে কারণ জানা নেই।

আঘাত-বসে বা পেছনে পড়লে।

আনস্ট্যাবল ককসিস-দীর্ঘ দিন ধরে প্রদাহ থাকে।

ডিসপ্লেসমেন্ট ককসিস।

প্রসবের সময় আঘাত বা প্রলোং ডেলিভারি।

স্পার ককসিস।

সার্জারি।

মিসএলাইন্ড, শক্ত বা লম্বা ককসিস।

পেশির সঙ্কোচন।

পাইলোনাইডাল সাইনাস।

পাইলোনাইডাল সিস্ট।

মেনিসকাল সিস্ট।

রিপিটেটিভ স্ট্রেইন যেমন দীর্ঘক্ষণ মোটর বা বাইসাইকেল চালানো

ইনফেকশন।

ক্যালসিয়াম ডিপসিশন।

টিউমার।

রেফার্ড পেইন ফ্রম লাম্বার ফেসেট জয়েন্টস, পেশি, সেকরোটিউবেরাস ও সেকরোস্পাইনাস লিগামেন্ট এবং গ্লুটিয়াল পেশি।

ককসিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথার লক্ষণগুলো

ককসিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথা পুরুষের থেকে মহিলাদের পাঁচজন বেশি হয়।

বসার সময় বা বসার পর ব্যথা হয়।

দীর্ঘক্ষণ বসলে ব্যথা বেড়ে যায়।

শক্ত জায়গায় বসা যায় না।

কখনো বসা থেকে দাঁড়াতে গেলে ব্যথা হয়।

আবার কখনো নরম জায়গায় বসলে ব্যথা হয়।

পেছনে হেলান দিয়ে বসলে বেশি ব্যথা হয়; কিন্তু সামনে ঝুঁকে বসলে ব্যথা কম হয়।

গভীর ব্যথা- ককসিসের আশপাশে।

রিকশায় বসলে হাতে ভর দিয়ে কোমর আলগা করে রাখতে হয়।

পায়খানা করার সময় বা আগে ব্যথা হয়।

সহবাসের সময় ব্যথা হয়।

কখনো কখনো কোমর ব্যথার সাথে ককসিডাইনিয়া হয়।

ককসিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথার প্রতিকার

 

ককসিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণগুলোর ওপর। সাধারণ পরীক্ষা, এক্স-রে বসা ও দাঁড়ানো অবস্থায় এবং কখনো কিছু সফিসটিকেটেড পরীক্ষার প্রয়োজন হয় ককসিডাইনিয়ার সঠিক কারণ জানার জন্য, যেমন সিটিস্ক্যান এবং এমআরআই।

চিকিৎসা

উপযুক্ত স্ট্রেসিং ও পেশি শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে।

রিপিটেটিভ স্ট্রেইন যেমন দীর্ঘক্ষণ মোটর বা বাইসাইকেল চালানো যাবে না।

শক্ত জায়গায় বসা নিষেধ।

নরম জায়গায় বসতে হবে।

বসার জন্য ককসিস কুশন ব্যবহার করতে হবে।

গরম সেক দেয়া।

বেদনানাশক ওষুধ সেবন।

স্টেরয়েড ও লোকাল অ্যানেসথেটিক এজেন্ট ইনজেকশন।

অ্যান্টিসাইকোটিক ড্রাগ থেরাপি।

ককসিস সার্জারি

দীর্ঘ দিন ব্যায়াম, মেডিক্যাল, চিকিৎসা এবং স্টেরয়েড ও লোকাল অ্যানেসথেটিক এজেন্ট ইনজেকশন দেয়া সত্ত্বেও যদি ককসিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথা না কমে সে ক্ষেত্রে ককসিস সার্জারি করতে হবে। অতি সতর্কতার সাথে ককসিস অপারেশন করতে হবে অন্যথায় সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া যাবে না।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি., ২ ইংলিশ রোড, ঢাকা। ফোন : ০১৬৮৬৭২২৫৭৭

 

 

 

Related posts