শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ২৮ আগস্ট ২০১৬
ভারত থেকে গরু না আসায় সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকার স্থানীয় খামারিরা এবার লাভের স্বপ্ন দেখছেন। বিগত বছরগুলোতে ভারতের গরুতে হাটবাজার সয়লাব হয়ে যায়। এবার ভারতীয় গরু আসা পুরোপুরি বন্ধ। তাই কোরবানি ঈদে ভাল দামে গরু বিক্রি করার প্রত্যাশা সবার মধ্যে। তবে সীমান্তের খাটাল ও হাটগুলোতে ভারতের গরু না আসায় ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখনো পর্যন্ত কোরবানির পশু কিনতে হাটে আসেনি।
এদিকে ভারতের গরু আসা বন্ধ থাকায় এরইমধ্যে বাজারে মাংসের দাম বেড়েছে। ফলে ব্যসায়ীরা বেশি দামে দেশি গরু কিনতে বাধ্য হচ্ছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও সীমান্ত হত্যা বন্ধে বিজিবির অনীহার কারণে বর্তমানে ভারতের গরু আসছে না বললেই চলে। সীমান্তের ১৭টি খাটাল এখন খাঁ- খাঁ করছে। তবে ভাতশালা, তলুইগাছা ও সোনাবাড়িয়া সীমান্ত দিয়ে অল্প সংখ্যক ভারতের গরু অনিয়মিতভাবে আসছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সুভাষিনি গ্রামের রাজিয়া খাতুন। নিজের সংসারের কাজের ফাঁকে গরু ও ছাগল পালন করেন। প্রতি বছরের ন্যায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দুই মাস আগে গ্রামের হাট থেকে চারটি ছোট এড়ে বাছুর কিনেছিলেন। দাম পড়েছিল ৩৯ হাজার টাকা। পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মোটাতাজাকরণের কাজ করে যাচ্ছেন। ঈদের আগেই গরুগুলো এক লাখ ২০ হাজারের বেশি টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
রাজিয়া খাতুন বলেন, ‘অন্যবারে ভারতীয় গরুতে হাটবাজার সয়লাব হয়ে যায়। এবার ভারতীয় গরু আসা পুরাপুরি বন্ধ। তাই গরু বিক্রি করতে সমস্যা হবে না। লাভও হবে আশানুরুপ।’
সাতক্ষীরা শহরের আনন্দপাড়ার আলিমা খাতুন। তিনিও তিনটি গরু কিনেছেন। ঈদের আগে তিনগুণ দামে তার গরুগুলো বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদি। ভারতীয় গরু না আসায় বাজারে মাংসের দাম বেড়েছে। সেকারণে ব্যাপারিদের কাছে দেশি গরুর বিকল্প নেই। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে তার মত অনেক নারীই গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি গবাদি পশু পালনে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
ভারতীয় গরু না আসায় ঈদকে সামনে রেখে দেশি গরু মোটাতাজাকরণ করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখছেন শহরতলীর কাশেমপুরের নাসরিন খাতুন, কালিগঞ্জের বসন্তপুরের সুফিয়া খাতুন, শ্যামনগরের রমজাননগরের ফতেমা বেগমসহ অনেকেই। এবার কোরবানি ঈদে ভাল দামে গরু বিক্রি করার প্রত্যাশা সবার মধ্যে।
গত মঙ্গলবার এলাকার সবচেয়ে বড় গরুরহাট সাতমাইল হাটে এসেছিলেন চাঁদপুর জেলা সদরের রমজান আলী। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরই কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে চার থেকে পাঁচ হাজার গরু নিয়ে কেনেন সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী খাটালগুলো থেকে। এবার খাটালগুলোতে ভারতীয় গরু না আসায় বাধ্য হয়ে বেশি দাম দেশি গরু কিনতে হাটে এসেছেন ব্যবসায়ীরা।
একই কথা বললেন ফেনী পৌরসভার তুহিন গাজী, লক্ষীপুরের সাহেব আলীসহ কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী। তারা জানান, সীমান্তের খাটাল ও হাটগুলোতে ভারতীয় গরুর দেখা নেই। এরপরও খরচ করে এসেছেন। দাম বেশি পড়লেও কিছু গরু কিনে ফিরতে হবে। ভারত থেকে গরু আসা কমে যাওয়ায় জেলার বাজারগুলোতে গরুর মাংসের দাম বেড়ে ২২০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে জানান তারা। সেক্ষেত্রে পবিত্র ঈদুল আযহায় দেশীয় গরু দিয়ে কোরবানির চাহিদা পূরণ হলেও সার্বিকভাবে গো মাংসের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
সীমান্ত গ্রামবাসী জানায়, বিগত বছরগুলোতে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার ভারতীয় গরু বাংলাদেশে আসতো। কিন্তু এবার ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও সীমান্ত হত্যা বন্ধে বিজিবির অনীহার কারণে বর্তমানে ভারতীয় গরু আসছে না বললেই চলে। ফলে সীমান্তের ১৭টি খাটাল এখন খাঁ- খাঁ করছে।
তবে তারা দাবি করেন, ভাতশালা, তলুইগাছা ও সোনাবাড়িয়া সীমান্ত দিয়ে খুবই অল্প সংখ্যক ভারতীয় গরু অনিয়মিতভাবে আসছে।
পারুলিয়া গরুর হাটের ইজারাদার আবু তালেব মোল্ল্যা জানান, ভারতীয় গরু না আসায় জেলার বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা অনেকেই এখনো পর্যন্ত কোরবানির পশু কিনতে এ হাটে আসেনি। ফলে অন্যবারের তুলানায় তাদের ইজারার টাকা কম উঠবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্র দাস জানান, ভারত থেকে গরু কম আসায় স্থানীয় খামারিরা লাভবান হবেন। এছাড়া সাতক্ষীরায় পারিবারিকভাবে খামারিরা যে পরিমাণ গরু পালন করছেন তাতে ঈদে গরুর চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে বলে দাবি করেন তিনি।