শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ৪ আগস্ট ২০১৬
স্বপ্ন ছুঁয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। ৪০ বছর আগে হাঁটি হাঁটি পা পা করে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি আজ আরো একটি স্বপ্নকে বাস্তবে ছুঁলো। এ স্বপ্ন পূরণ শুধু বেক্সিমকোর তা নয়, এটা গোটা বাংলাদেশেরও। প্রতিষ্ঠানটি তাদের উৎপাদিত ওষুধ আমেরিকায় রফতানি করে নিজের স্বপ্ন পূরণের সঙ্গে বাংলাদেশেরও মুখ উজ্জ্বল করলো।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর রোডের লা মেরিডিয়ান হোটেলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের হাতে আমেরিকায় রফতানিকৃত হাইপারটেনশনের (কার্ভোডিলল) ওষুধের প্রথম চালান তুলে দেন প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান। এর মধ্য দিয়ে বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্ন পূরণের মাইলফলক স্পর্শ করলো প্রতিষ্ঠানটি।
অনুষ্ঠানে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসান পাপন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজকের অবস্থানে উঠে আসার বর্ণনা করেন। তিনি বলেন ‘বেক্সিমকো ফার্মা বর্তমানে বিশ্বের ৫০টি দেশে ওষুধ রফতানি করছে। ওষুধ খাতের সবচেয়ে বড় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বাধিক পাঁচবার জাতীয় রফতানি ট্রফি (গোল্ড) অর্জন করেছে।’
নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘দেশ-বিদেশে দেখা হলেই লোকজন বেক্সিমকোর ওষুধের প্রশংসা করতো। শুনতে ভালোই লাগতো, তবে যখনই কেউ বেক্সিমকোর উৎপাদিত ওষুধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনুমোদিত কি না কিংবা আমেরিকার বাজারে বেক্সিমকোর ওষুধ রফতানি হচ্ছে কি না জিজ্ঞাসা করলে বিব্রতই হতাম।’
‘স্বপ্ন দেখতাম, আর মনে মনে বলতাম কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। আজ বহু বছরের প্রতীক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হলো। অচিরেই যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বাজারে বেক্সিমকোর অবস্থান শক্তিশালী হবে।’
অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা ভালো বোধ করে বাংলাদেশের তৈরি উন্নতমানের পোশাক পরে ও সুস্বাদু চিংড়ি খেয়ে। এখন থেকে জীবন বাঁচানো বাংলাদেশি ওষুধও আমেরিকানরা কিনতে পারবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ রফতানি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, ‘মার্কিন বাজারে ওষুধ রফতানির মাধ্যমে বেক্সিমকো শুধু নিজেরাই নয় গোটা বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি এফডিএ স্বীকৃত না হওয়ায় তার নিজের প্রয়োজনীয় একটি ওষুধ ২০ বছর নিজে বহন করে আমেরিকায় নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছি। এ সময় ওষুধ শিল্পের বিকাশে বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বেশ কিছুদিন যাবত দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবরের ছড়াছড়ি। আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশ ওষুধ রফতানি করছে এটি নিঃসন্দেহে আনন্দের ও ইতিবাচক খবর।
এ সময় বাংলাদেশের জন্য সুনামবহনকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর ভালো খবর গণমাধ্যমে ইতিবাচকভাবে দেখতে চান বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সালমান এফ রহমান বলেন, বেক্সিমকো ফার্মা আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করলো। আমেরিকার বাজারে ওষুধ রফতানি শুরু করার মাধ্যমে দেশের ওষুধ শিল্পে নতুন যুগের শুরু হলো। অচিরেই বাংলাদেশ প্রভাবশালী রফতানিকারক হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করবে।
ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুকতাদির বলেন, সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে শুধু বেক্সিমকোই নয়, দেশের ওষুধ শিল্প ক্রমেই উন্নতি করছে।
এক নজরে বেক্সিমকো ফার্মা:
১৯৭৬ সালে বেক্সিমকো ফার্মা যাত্রা শুরু করে। ২৩ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এ ওষুধ কারখানায় ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, লিকুইড, সেমি সলিডস, ইনট্রাভেনাস ফ্লুইড, মিটার ডোজ ইনহেলার, ড্রাই পাউডার ইনহেলার, স্টেরিল অফথালমিক ড্রপস, প্রিফিলড সিরিঞ্জেস, ইনজেকটেবলস, নেবুলাইজার সলিউশনসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ উৎপাদন করছে।
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, কানাডা ছাড়াও শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, হংকং,দক্ষিণ আফ্রিকা, মরিশাস, কেনিয়া, ঘানা, ইথিওপিয়া, উগান্ডা, নাইজেরিয়া, আজারবাইজান, কুয়েত, জর্ডান, অস্ট্রিয়া, জার্মানি ও রুমানিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কোম্পানিটি তাদের উৎপাদিত ওষুধ রফতানি করছে।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কর্মী সংখ্যা ৩ হাজারেরও বেশি। ২০১৫ সালে বেক্সিমকো ফার্মা ইউএসএ এফডিএ কর্তৃক নিরীক্ষিত ও অনুমোদিত হয়। একই বছর বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র কোম্পানি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পণ্যের অনুমোদন লাভ করে।
বেক্সিমকো ফার্মা এখন দেশের ওষুধ খাতের সবচেয়ে বড় রফতানিকারক কোম্পানি। যা এখন পর্যন্ত সর্বাধিক পাঁচবার জাতীয় রফতানি ট্রফি (গোল্ড) অর্জন করেছে। এছাড়া বেক্সিমকো ফার্মা ইউএস এফডিএ, এজিএএস (ইউএই), টিজিএ অস্ট্রেলিয়া, হেলথ কানাডা ও টিজিএফডিএর মতো বিশ্বের প্রধান প্রধান ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত।