শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ২২ আগস্ট ২০১৬
অগ্রাধিকার প্রকল্পে অর্থায়ন বাড়ানোসহ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে চায় সরকার। এ জন্য চীনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের কোটা ও শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশাধিকার দাবি নিয়ে চীনের সঙ্গে বৈঠকে বসছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
সোমবার ঢাকায় বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ১৪তম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। চীনও তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশকে উত্তম স্থান বলে মনে করছে। ফলে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের বিনিয়োগ বাড়াতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে চায় বাংলাদেশ।
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে দু’দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসবেন। বৈঠকে চীনের সহকারী বাণিজ্যমন্ত্রী গাও ইয়ান তার দেশের পক্ষে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। অন্যদিকে. বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন।
জানা গেছে, শ্রমঘন শিল্প থেকে উদ্যোক্তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় পোশাক, পাদুকার মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানগুলো অন্য কোনো দেশে স্থানান্তর করতে চায় চীন সরকার। পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ এ সুযোগ লুফে নিতে চায়। যদিও পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা পোশাক শিল্পের যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল বিশেষ করে প্রাথমিক টেক্সটাইলে চীনের বড় বিনিয়োগ চাইছেন।
অন্যদিকে, অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রক্রিয়াধীন বড় প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী চীন। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, কর্ণফূলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণের মতো বড় প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে। যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পেও অর্থায়ন করতে চায় চীন। দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে অনুষ্ঠিতব্য যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠকে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে ইআরডি।
সূত্র জানায়, তৈরি পোশাকের বিশ্ব বাজারের ৪১ শতাংশ চীনের দখলে। কিন্তু চীনে বাড়ছে শ্রমের মজুরি। এ কারণে দেশটির উদ্যোক্তারা সুবিধাজনক বিনিয়োগের স্থান খুঁজছে। অন্যদিকে, এশীয়ার দেশেগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাক রফতানিতে চীনের পরেই বাংলাদেশে অবস্থান। ফলে এ খাতে চীনের বিনিয়োগ আসার ব্যাপক সম্ভবনাকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে চায় চীন সরকার। এ জন্য গভীর সমূদ্রবন্দর প্রকল্পসহ বাংলাদেশের যে কোন বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চায় দেশটি। বাংলাদেশে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশটি যে কোন পরিমাণ অর্থ ব্যায় করতে আগ্রহী।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৪ সালের ৪ জুন চীনের কুনমিং শহরে ১৩তম জেইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৪তম জেইসি সভায় চীনা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার জন্য ইআরডি সচিবের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাছাই করা হয়েছে। সভায় বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করবেন, ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান, যুগ্ম সচিব মতিয়ার রহমান, উপ সচিব মতিউর রহমান এবং সিনিয়র অ্যাসিসটেন্ট চিফ মাসুমা আকতার।
এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক বিভাগের মহা-পরিচালক, বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী সদস্য এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের একজন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন।