শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ২০ জানুয়ারি ২০১৭
পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশার উপদ্রব। মশা নিধনে বছর বছর বরাদ্দ বাড়াচ্ছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি)। তবে, বরাদ্দ বাড়লেও মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছে না নগরবাসীর। উপরন্তু বরাদ্দ বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশার উপদ্রব।
নগরবাসীরা জানান, বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছর প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়েছে মশা। দিনের বেলায় উপদ্রব কিছুটা কম থাকলেও রাতের বেলায় অসহনীয় হয়ে উঠে। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল থেকে শুরু করে চলন্ত গাড়িতেও মশার কামড় বাড়ছে। মশারি, কয়েল কিংবা ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়েও মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মশানাশক স্প্রে করেও মিলছে না প্রতিকার।
ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, মশক নিধন বিভাগে স্প্রেম্যান রয়েছে ১৮৩ জন, ক্রু ১৫১ জন এবং সুপারভাইজার ১০ জন। মশা নিধনের জন্য ৩৮৭টি ফগার মেশিন, ৪৩৮টি হস্তচালিত মেশিন, ৩৬টি হুইল ব্যারো মেশিন, ২টি ইউএলভি মেশিন, পাঁচটি পাওয়ার স্পেয়ার এবং একটি ন্যাপসেক পাওয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ৭১টি ফগার মেশিন, ৫৯টি হস্তচালিত মেশিন, আটটি হুইল ব্যারো, দুটি ইউএলভি, পাঁচটি পাওয়ার স্পেয়ার এবং একটি ন্যাপসেক পাওয়ার মেশিন নষ্ট।
অপরদিকে ডিএনসিসির মশক নিধন কর্মী রয়েছেন ৩০৯ জন। এর মধ্যে ১২০ জন স্প্রেম্যান এবং ১৮৯ জন ক্রুম্যান। সুপারভাইজার রয়েছেন আটজন। এছাড়া ২১৭টি ফগার মেশিন, ২৮৭টি হস্তচালিত মেশিন এবং একটি হুইল ব্যারো মেশিন রয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধনের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য ৫ থেকে ৬ জন করে কর্মী নিযুক্ত আছেন। তারা দিনে দুবার ওষুধ ছিটানোর কাজ করেন। তবে সিটি কর্পোরেশন এমন দাবি করলেও নগরবাসী তাদের দেখতে পান কালেভদ্রে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শেখ সালাউদ্দিন বলেন, আমরা প্রধানত জলাশয় ও নগরীর অলি-গলিতে বেশি ওষুধ দিয়ে থাকি। কর্মীরা যথেষ্ট কাজ করেন। উত্তর সিটির তুলনায় আমাদের এলাকায় মশা অনেক কম। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শেই কর্মীরা ওষুধ ছিটান।
তিনি আরও বলেন, এখন মশা প্রজননের মৌসুম। এ মাসে মশার উপদ্রব একটু বেশিই থাকে। কয়েকদিন পর থেকে আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হতে লিফলেট বিতরণ ও প্রচারাভিযান শুরু করবো। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় মশার উৎপাত কিছুটা বেড়েছে, বৃষ্টি হলে কমে আসবে।
জানা গেছে, প্রতি বছর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন মশা নিধনের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হয়।কিন্তু বছর বছর মশার উপদ্রব বাড়ছেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণ সিটির রামপুরা, বনশ্রী, মেরাদিয়া, গোড়ান, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মগবাজার, ধানমন্ডি, পুরান ঢাকা, ফকিরাপুল, আরামবাগ, পল্টন, মতিঝিল, কমলাপুর, মানিকনগর, বাসাবো, মুগদা, খিলগাঁও, ধোলাইখাল, কুড়িল, মীর হাজীরবাগ, শ্যামপুর, কামরাঙ্গীরচর, সূত্রাপুর, মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগে মশার উপদ্রব বেশি।
অপরদিকে উত্তর সিটির তেজগাঁও, মহাখালী, বাড্ডা, শেরেবাংলা নগর, মিরপুর, উত্তরা, গাবতলিতে মশার উপদ্রব বেশি। থেমে নেই অভিজাত এলাকা বারিধারা, গুলশান, বনানীও। এসব এলাকার বেশির ভাগ ফ্ল্যাটে মশার অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে জানালা-দরজায় নেট লাগাতে দেখা গেছে বাসিন্দাদের।
জানতে চাইলে খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা রুহুল আতিকুর রহমান বলেন, রাতের কথা কী বলবো, দিনেও মশার যন্ত্রণায় থাকা যায় না। ওষুধ স্প্রে করার পরও বসা যায় না। কয়েল জ্বালালে তার ওপরে মশা খেলা করে। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য কর্মীর কথা শুনেছি, কিন্তু কোনোদিন দেখিনি।
জানা যায়, মশা নিধন কার্যক্রমের জন্য চলতি অর্থবছরে (২০১৬-১৭) ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এ খাতে গত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) বাজেট ছিল ১৪ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছর মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য ডিএসসিসির বাজেট বরাদ্দ ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত বছর বরাদ্দ ছিল ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সংশোধিত বাজেটে ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা।