শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) পরিচ্ছন্ন পরিদর্শকের মধ্যে যাদের নামে মামলা আছে তারা বাদে সবাই পদোন্নতির যোগ্য। কর্পোরেশনের বাৎসরিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্পোরেশনের ৩৬ পরিচ্ছন্ন পরিদর্শকের মধ্যে ৯ জন দ্রুত পদোন্নতি এবং ৯ জন পদোন্নতির যোগ্য। আর বিভিন্ন সময়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ঝটিকা অভিযানে যাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বপালনে অবহেলা, অসদাচরণ, দুর্নীতিপরায়ণ ও তহবিল তছরূপের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়েছে তারা পদোন্নতির যোগ্য নন।
কর্পোরেশনে এমন কর্মকর্তার সংখ্যা পাঁচজন। যাদের মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় তারা পদোন্নতির জন্য অযোগ্য। বাকি ১৩ জন এখনও পদোন্নতির আলোচনায় আসার যোগ্য হননি।
প্রতিবেদনে যে ৯ পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাকে দ্রুত পদোন্নতি যোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়েছে তারা হলেন- কাজী বজলুর রহমান, মো. শাহজাহান খান, মো. মফিজুর রহমান পাটোয়ারি, সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, মো. আবু জাফর, মো. আবুল হাসেম খান, মো. শাহজাহান, আব্দুল মোতালিব ও মো. রফিকুল ইসলাম।
পদোন্নতির যোগ্যরা হলেন- মো. আবুল হোসেন, মো. আব্দুল হালিম খান, মো. আরিফুর রহমান, মো. সেলিম মিয়া, মো. সুরুজ্জামান, শ্রী প্রদীপ কুমার দত্ত, মো. শাহ আলম এবং বিকাশ চন্দ্র দাস।
এছাড়া বিভাগীয় মামলা থাকায় যারা এখনও পদোন্নতির যোগ্য না তারা হলেন- মো. সেলিম আহমেদ, মাহবুব উল্লাহ, মো. বাহা উদ্দিন, রাজ কুমার দাস এবং শাহ কামাল।
কর্পোরেশনের এ ২৩ কর্মকর্তার মধ্যে ১৩ জন মাত্র এসএসসি, চারজন এইচএসসি, দুজন স্নাতক, একজন স্নাতকোত্তর এবং একজন এমএ পাস করেছেন। তারা বর্তমানে ১১তম গ্রেডে কর্মরত।
কর্মকর্তাদের বাৎসরিক বিভাগীয় প্রতিবেদনের একটি কপি জাগো নিউজের কাছে রয়েছে। তবে অতি গোপনীয় হওয়ায় এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ কোনো কথা বলেননি।
কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পারফরমেন্সের ওপর ভিত্তি করে বাৎসরিক একটি নম্বর দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ৯০-৯৫ নম্বর প্রাপ্ত কর্মকর্তার মান অতি উত্তম বলা হয়। ৯৫-১০০ নম্বর পেলে তার মান ধরা হয় অসাধারণ। ৮০-৯০ নম্বর পেলে তার মান ধরা হয় উত্তম। কর্পোরেশনের এ ২৩ কর্মকর্তার মধ্যে যে ৫ কর্মকর্তার নামে মামলা রয়েছে তাদেরকেও ৮০ শতাংশের উপরে নম্বর দেয়া হয়েছে। ৮০ শতাংশের নিচে কোনো কর্মকর্তাই নম্বর পাননি। এতে সবার কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট সিটি কর্পোরেশন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে সব কর্মকর্তার কাজে যদি সিটি কর্পোরেশন সন্তুষ্ট হয় তবে কেনো পরিচ্ছন্ন কাজে সফলতা দেখছে না নগরবাসী? এজন্য কর্পোরেশনের এ প্রতিবেদনকে হাস্যকর বলে মনে করা হচ্ছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ সিটির বর্জ্য ব্যবস্থার পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সংস্থাটিতে দৈনিক প্রায় ৩৫০০ টন আবর্জনা উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে অপসারণ হচ্ছে ১৯০০ টন। বাকি ১৬০০ টন বর্জ্য নগরীতে থেকে যায়। যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব আবর্জনা ডিএসসিসির বিভিন্ন ডোবা-নালা এবং নদী-খালে গিয়ে ভরাট হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব আবর্জনা পরিবেশকেও মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। এ চিত্রই বলে দিচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সংস্থাটির কোনো সফলতা নেই।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ডিএসসিসি মোট ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯৮৪ টন আবর্জনা অপসারণ করেছে। সেই হিসেবে দৈনিক আবর্জনা অপসারণের গড় ১৮০০ টন। আর ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিএসসিসি মোট আবর্জনা অপসারণ করেছে ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫২৩ টন। সেই হিসাবে দৈনিক আবর্জনা অপসারণের গড় ১৯০০ টনের কিছু বেশি। বিগত এক বছরে ডিএসসিসির আবর্জনা অপসারণ বিভাগের সক্ষমতা বেড়েছে ১০০ টনের কিছু বেশি।
নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে চলতি বছর ৫৭০০টি মিনি ডাস্টবিন স্থাপন করেছে ডিএসসিসি। কিন্তু তাতেও সফলতা নেই। নির্মাণের কিছু দিন যেতে না যেতেই অধিকাংশ বিন ভেঙে ও চুরি হয়ে যায়। এসব মিনি ডাস্টবিন নষ্ট হওয়ার পর পুনঃস্থাপন করা হচ্ছে না। এ কার্যক্রম থেকে সরে এসেছে ডিএসসিসি।
সার্বিক পর্যালোচনা ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সফলতা পাওয়া না গেলেও দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ওপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তাদের পদোন্নতি দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছে।