ঘুরে-ফিরে ড্রেনেই ময়লা

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ২০মে  ২০১৭

ঘুরে-ফিরে ড্রেনেই ময়লা

ঘুরে-ফিরে ড্রেনেই ময়লা

রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ ড্রেনেজ (নর্দমা) ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় শুধু বর্ষা মৌসুমেই নয় সারা বছর সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানীজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা যায়।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রতি বছরই সিটি কর্পোরেশনসহ ঢাকা ওয়াসা ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করে, যা প্রায় বছরজুড়েই চলে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। ড্রেনের ময়লা ঘুরে-ফিরে আবার ড্রেনে গিয়েই পড়ে।

নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান গেট থেকে শুরু করে নতুন বাজার হয়ে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। পাশাপাশি সংস্থাটি রাস্তার পাশে পুরনো ড্রেন পরিষ্কারের কাজও করছে।

এসব ড্রেন থেকে ময়লা তুলে সেগুলো আবার ড্রেনের পাশেই রাখা হচ্ছে। আর একটু বৃষ্টি হলেই ফের ময়লা চলে যাচ্ছে ড্রেনে। আবার দিনের পর দিন খোলা জায়গায় ময়লা পড়ে থাকায় ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ, যা পথচারীদের ভোগান্তিতে ফেলছে।

এ বিষয়ে ডিএনসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম বলেন, ‘ড্রেন থেকে যেসব ময়লা তোলা হয়, সেগুলোতে কাদা থাকে। তরল হওয়ায় ট্রাকে অন্যত্র নেয়া যায় না। সে কারণে নির্দিষ্ট স্থানে জমা করে রাখা হয়।’

‘তবে বৃষ্টির কারণে যেহেতু ময়লাগুলো ড্রেনে চলে যাচ্ছে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে’ বলেও জানান তিনি।

একই চিত্র দেখা গেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সেগুনবাগিচা এলাকায়ও। ওই এলাকার বেশ কয়েকটি ড্রেনে ঢাকা ওয়াসা ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে পরিষ্কার করতে দেখা যায়। ওইসব ড্রেনের ময়লাও একইভাবে ড্রেনের পাশে ফেলে রাখা হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, দিনের পর দিন এভাবেই ময়লাগুলো পড়ে থাকে। কাউকে অপসারণ করতে দেখি না। ফলে বৃষ্টি কিংবা বাসা-বাড়ির ব্যবহৃত পানির সঙ্গে গড়িয়ে ময়লাগুলো আবার ড্রেনে চলে আসে। কয়েকদিন না যেতেই আবার ভর্তি হয়ে যায় পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো।

সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা ও অবহেলার কারণে জনগণকে এ ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলে মনে করেন বেসরকারি এ চাকুরে।

 

গুলিস্তানের সড়কগুলোতেও একই অবস্থা দেখা গেছে। নিয়ম অনুযায়ী, ময়লা অপসারণের পর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নিজস্ব পরিবহন দিয়ে ময়লাগুলো সরিয়ে ফেলবেন। কিন্তু এ নিয়ম মানছে না কোনো প্রতিষ্ঠানই।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম। উল্টো আরেক সেবাদানকারী সংস্থা ঢাকা ওয়াসার ওপর দোষ চাপিয়ে দেন তিনি।

খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে বর্জ্য অপসারণ করি। ওয়াসা বর্জ্যগুলো ফেলে রেখে চলে যায়। আমাদেরগুলো আমরা সরিয়ে ফেলি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ড্রেনগুলো ঢাকা ওয়াসার। অথচ আমরা পরিষ্কার করি আর বিল পায় ওয়াসা।’

সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিগত বছরগুলোতে ড্রেনের ময়লা তুলে নির্দিষ্ট স্থানে রাখার পর সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্যবাহী ট্রাক সেগুলো অপসারণ করে। তবে এখন সে চিত্র খুব একটা দেখা যায় না।

রাজধানীর সড়ক ও বাসাবাড়ির স্যুয়ারেজ লাইনের ময়লা পানির সঙ্গে মিশে সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনে পড়ে। এর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য জমে ড্রেনের তলদেশ জমাটবদ্ধ হয়ে পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে পানি উপচে সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

এ অবস্থায় প্রতি বছর ড্রেন পরিষ্কারের জন্য দরপত্র (টেন্ডার) আহ্বান করে সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে অধিকাংশ ঠিকাদার নিজেদের ইচ্ছা মতো কাজ করে চলে যায়। অভিযোগ রয়েছে, এর মধ্যে কেউ কেউ আছে যারা কাজ না করেই বরাদ্দের অর্থ তুলে নিয়ে যায়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে সংস্থাটির পাঁচটি অঞ্চলে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সিসি সড়ক, নর্দমা ও ফুটপাত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

এর মধ্যে ১৪০ দশমিক ২৪ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ এবং ৬০৯ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার ড্রেন পরিষ্কারের কাজও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, প্রকল্পটির ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

এদিকে প্রায় একই বাজেটের কাজ চলছে উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকাতে। কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৬৮ কিলোমিটার ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে। এসব ড্রেনের অধিকাংশই গত ২০ বছর পরিষ্কার করা হয়নি।

এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, ‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। অবহেলা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যদি হয়ে থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিগগিরই নির্দেশ দেয়া হবে।’

 

 

 

Related posts