‘ইলিশ মাছ কোনো দিন এমন সস্তা ছিল না’

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

'ইলিশ মাছ কোনো দিন এমন সস্তা ছিল না'

‘ইলিশ মাছ কোনো দিন এমন সস্তা ছিল না’

ঢাকার বাজার থেকে কোনো মধ্যবিত্ত পরিবারের দুই দিনে ১২টি ইলিশ মাছ কেনার ঘটনা ইদানীংকালে খুবই বিরল।

কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে ঢাকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় যেভাবে ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে সেটি অনেকের জন্যই বেশ অভাবনীয়। অনেকে একসাথে কয়েক হালি ইলিশ মাছ কিনছেন।

এভাবে ইলিশ মাছ কেনার কারণ কম দাম। ঢাকার গ্রিন রোডের বাসিন্দা মুন্নি আক্তার সকালে বাজার করতে এসে চারটি ইলিশ মাছ কিনেছেন। গতকালও তিনি কিনেছিলেন আটটি ইলিশ মাছ।

বাংলাদেশের মানুষের খাবারের তালিকায় ইলিশ মাছ সম্প্রতি দুর্লভ হয়ে উঠেছিল। অনেকটা দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় চড়া দাম হয়েছিল ইলিশের। সে কারণে দুষ্প্রাপ্য এই মাছ মধ্যবিত্তের নাগালের অনেকটা বাইরে চলে গিয়েছিল।

তবে ঢাকার বাজারে ইলিশের প্রচুর সরবরাহ এবং তুলনামূলক কম দাম অনেকেই হতবাক করছে। খাবারের পাত থেকে অনেকটা হারিয়ে যাওয়া ইলিশ আবার ফিরে এসেছে।

ঢাকার বাসিন্দা আমির হোসেন জানালেন, ইলিশের এ দাম তার কাছে কল্পনার মতোই মনে হচ্ছে।

আমির হোসেন বলেন, “একটা ইলিশ মাছের দাম ছিল ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। এখন তো এক হালি কিনতেছি ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায়। ইলিশ মাছ কোনো দিন এমন সস্তা ছিল না। এবারই সবচেয়ে বেশি সস্তা।”

বাজারে রুই ,কাতল, পাঙ্গাশ – নানা ধরনের মাছ থাকলেও সেদিকে ক্রেতাদের নজর যাচ্ছে খুবই কম। বেশিরভাগ ক্রেতার দৃষ্টি ইলিশ মাছের দিকে।

মাছ বিক্রেতা রুহুল আমিন বলছিলেন, ইলিশের দাম এতটা নেমে আসবে সেটি তিনি ভাবতেও পারেননি।

রুহুলের আমিনের বর্ণনায়, “এটা তো স্বপ্ন। ভাবতেই পারি নাই। স্বপ্নে দেখতাছে আর বাস্তবে খাইতাছে। এ রকম আর কী!”

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের ইলিশ মাছ বিষয়ে গবেষক ড: আনিসুর রহমান জানালেন, প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় বাজারে এর দামও কমে এসেছে।

মা ইলিশ এবং জাটকা রক্ষার জন্য বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইলিশের উৎপাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানালেন ড: রহমান।

তিনি বলেন, “একটি ইলিশ একবারে গড়ে দশ থেকে বারো লক্ষ ডিম ছাড়ে। ভেবে দেখুন এটা কত বড় একটা বিষয়।”

ড: রহমান জানান মা ইলিশ যাতে ডিম ছাড়তে পারে সেজন্য প্রতিবছর অক্টোবর-নভেম্বর মাসে প্রায় তিন সপ্তাহ দেশের সাত হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে।

এ জায়গাগুলো হচ্ছে, ভোলার তজুমুদ্দিন, চট্টগ্রামের গন্ডামারা, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া এবং পটুয়াখালীর কিছু এলাকা।

তিনি জানালেন, ডিম ছাড়ার পর সে ইলিশ যাতে বড় হতে পারে সেজন্য প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল মাসে দেশের পাঁচটি এলাকায় জাটকা বা ছোট ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

যে জায়গাগুলোতে জাটকা ধরা নিষিদ্ধ সেগুলো হচ্ছে – লক্ষ্মীপুর, ভোলা, নোয়াখালী, চাঁদপুর এবং পটুয়াখালীর বিস্তীর্ণ এলাকা।

এ ধারা অব্যাহত থাকলে ইলিশের উৎপাদন আরো বাড়বে বলে মনে করেন ড: রহমান।

তিনি জানিয়েছেন, যে সময়টিতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে সে সময়টিতে জেলেরা যাতে বিকল্প কর্মসংস্থান করতে পারে সেজন্য সরকার প্রকল্প চালু করেছে।

সূত্র : বিবিসি

 

 

 

 

 

Related posts