হজে যেতে যা করণীয়

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম।২ আগস্ট ২০১৬

হজে যেতে যা করণীয়

হজে যেতে যা করণীয়

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে হজ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ থেকে হজের উদ্দেশ্যে ফ্লাইট শুরু হবে ৪ আগস্ট। এবার সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জন।

প্রয়োজনীয় বিষয়

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল জলিল জানান, হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকা দেয়া, স্বাস্থ্যসনদ সংগ্রহ করা জরুরি। বেসরকারি হজ এজেন্সি আবদুল আজিজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী হাজী মো. আবদুল আজিজ বলেন, হজযাত্রীদের উচিৎ এজেন্সির পরামর্শ মেনে চলা এবং দল নেতার কথা মতো কাজ করা। তাহলে হজযাত্রা সহজ ও ভালো হয়।

হজ সামগ্রী

বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে অবস্থিত আল-ইসলাম ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী হাজী মো. মহিবুল্লাহ রাজু বলেন, যাত্রার আগেই হজসামগ্রী সংগ্রহ করা ভালো। প্রয়োজনে একাধিক সামগ্রী রাখতে পারেন। যাতে হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে সহজে পাওয়া যায়। হজসামগ্রীর মধ্যে আছে- পুরুষের এহরামের কাপড় কমপক্ষে দুই সেট (গায়ের জন্য আড়াই হাত বহরের তিন গজ ও শরীরের নিচে পরার জন্য একই বহরের আড়াই গজ)। এহরামের কাপড় সাদা ও সুতি হলে আরামদায়ক। নারীদের এহরামের কাপড় তাদের স্বাভাবিক পোশাকই। এহরাম বাঁধার টাওয়াল সেট, এহরাম বাঁধার বেল্ট, মানিব্যাগ, পাসপোর্ট ব্যাগ, জুতা রাখার ব্যাগ, পাথর রাখার ব্যাগ, প্লাস্টিক জায়নামাজ, নখ কাটার বক্স, কাঁধের ব্যাগ, মহিলাদের হিজাব, মহিলাদের চুল বাঁধার টুপি, হাত মোজা ও পা মোজা, হাওয়ার বালিশ, বোডিং হোল্ডার, সানক্যাপ, পায়ের তাবেয়া, চামড়ার মোজা, তায়ম্মুমের মাটি, মিসওয়াক, ছাতা, গামছা, লুঙ্গি, গেঞ্জি, পায়জামা, পাঞ্জাবি, টাওয়াল, জুতা, টুপি, তসবি, আতর, বোরকা, সাবান, ব্রাশ-টুথপেস্ট, সুই-সুতা, থালা, বাটি, গ্লাস, হজ গাইড, ছোট কোরআন শরিফ।

ব্যাগ গোছানো

আপনার সব ব্যাগেই ইংরেজিতে নাম, ঠিকানা, পাসপোর্ট নম্বর ও বাংলাদেশের কাছের কারও মোবাইল নম্বর লিখে রাখুন। আর বড় ব্যাগে অবশ্যই তালা দেবেন। তবে ব্যাগ যতো ছোট ও হালকা করা যায় যাত্রা ততই ভালো হবে। প্রয়োজনে যে মালপত্র নিয়েছেন তার একটি তালিকা করে হাতব্যাগে বা গলার ব্যাগে রাখুন।

হজ সম্পর্কে জানুন

হজে যাওয়ার আগে নিয়ম জেনে নিন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হজ ক্যাম্প বা যে এজেন্সির মাধ্যমে যাচ্ছেন তারা হজের প্রশিক্ষণের আয়োজন করেন। বাজারে হজের গাইড পাওয়া যায়। স্থানীয় মসজিদের ইমাম বা আলেমদের কাছ থেকেও জানতে পারেন। অনলাইনেও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে হজের নিয়ম-কানুন পাবেন।

বিমানবন্দরে আগেই আসুন

ফ্লাইটের অন্তত তিন ঘণ্টা আগে বিমান বন্দরে আসুন। টিকিট চেকিং করিয়ে বোডিংপাস নিয়ে মালপত্র লাগেজে দিন। তারপর ইমিগ্রেশন শেষ করে অপেক্ষা করুন বিমানের জন্য।

থাকুন মিলেমিশে

দলের সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকুন। সব সময় দল নেতার কথা মেনে চলুন। একে অন্যকে খেয়াল রাখুন।

বিমানে উঠুন নিয়ম মেনে

বিমানে ওঠার সময় হাতে বাড়তি ব্যাগ, কোনো খাবার, পান-সুপারি, সিগারেট, ফলমূল বা কোনো পচনশীল বস্তু নিয়ে উঠবেন না। বিমানের নিয়ম অনুযায়ী আপনি সর্বোচ্চ ৩০ কেজি মাল বহন করতে পারবেন।

জরুরি কাগজপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী

পাসপোর্ট আকারের ১০ কপি ছবি, স্ট্যাম্প আকারের ৬ কপি ছবি, পাসপোর্টের ২-৩ পাতার সত্যায়িত ফটোকপি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদপত্র, টিকাকার্ড, ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার রসিদ, নারী হজযাত্রীর ক্ষেত্রে শরিয়তসম্মত মাহরামের সঙ্গে সম্পর্কের সনদ ইত্যাদি সঙ্গে রাখুন। এছাড়া কাগজ-কলম, শীতের কাপড়, (ঠাণ্ডা পড়লে) প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, চশমা ব্যবহার করলে অতিরিক্ত একটি চশমা, বাংলাদেশী টাকা, যত দিন বিদেশে থাকবেন সেই অনুযায়ী নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ ওষুধ এবং মোবাইল সেট রাখুন। সব হজযাত্রীদের জন্য বাংলাদেশ থেকে ৭ সংখ্যার একটি পরিচিতি নম্বর দেয়া হয়েছে। এর প্রথম ৪ সংখ্যা যে এজেন্সির মাধ্যমে যাচ্ছেন তার নম্বর, আর পরের ৩ সংখ্যা হজযাত্রীর পরিচিতি নম্বর। এ নম্বরটি দিয়ে ওয়েবসাইটে হজযাত্রীর যাবতীয় তথ্য খুঁজে পাওয়া যাবে। একটি কাগজে নিজের নাম, পাসপোর্ট নম্বর, এজেন্সির নাম এবং সৌদি আরবে সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির প্রতিনিধির মোবাইল নম্বর ইংরেজিতে লিখে রাখুন। এছাড়া সৌদি আরবে অবস্থানকালে মোয়াল্লেমের পক্ষ থেকে হজযাত্রীকে পরিচয়পত্রের একটি কার্ড বা হাতের বেল্ট দেয়া হয়। সেই কার্ড ও যে হোটেলে থাকবেন সেই হোটেলের কার্ড অবশ্যই সঙ্গে রাখুন।

এহরাম বাঁধুন

ঢাকা থেকে আপনার গন্তব্য মক্কা না মদিনায় তা জেনে নিন। তবে অধিকাংশ হজযাত্রীর গন্তব্য মক্কা হয়। মক্কা হলে বিমানে ওঠার আগে ইহরাম বাঁধা ভালো। কারণ গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই ‘মিকাত’ বা এহরাম বাঁধার নির্দিষ্ট স্থান। চাইলে বিমানেও বাঁধা যায়, কিন্তু বিমানে পোশাক পরিবর্তন করাটা ঝামেলার। বিনা ইহরামে মিকাত পার হলে এ জন্য দম বা কাফফারা দিতে হয় এবং এটি গুনাহের। এহরাম গ্রহণ করে এহরামের নিয়ম-কানুন মেনে চলুন। এহরামের নিয়ম জানতে হজ গাইড পড়ুন। যদি কারও গন্তব্য ঢাকা থেকে মদিনা হয়, তাহলে মদিনা থেকে মক্কায় যাওয়ার সময় এহরাম বাঁধলে চলবে।

হজ ক্যাম্প, ঢাকা

ফ্লাইটের আগে ঢাকার হজ ক্যাম্পে অবস্থানের সময় মালপত্র ঠিকমতো রাখুন। টিকা বা ভ্যাকসিন দেয়া না হলে দিয়ে নিন। প্রয়োজনীয় মালপত্র সংগ্রহ না হলে করে নিন।

জেদ্দা বিমানবন্দর

জেদ্দায় নেমে বিমান বন্দরের হল ঘরে আসুন। পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বের করুন। তারপর আসুন ইমিগ্রেশন কাউন্টারে। পাসপোর্টে সিলমারা হয়ে গেলে মালপত্র খুঁজতে আসুন বিমানের বেল্টের কাছে। তারপর আসুন মোয়াল্লেম কাউন্টার বা হজ টার্মিনালের বাংলাদেশ প্লাজায়। জেনে নিন আপনার অধীন মোয়াল্লেম কে। এ মোয়াল্লেমই আপনাকে মক্কায় আপনার হোটেল বা বাসায় পৌঁছে দেবেন। এখান থেকেই মোয়াল্লেমের গাড়িতে যেতে হবে মক্কা। মোয়াল্লেম আপনাকে পরিচয়পত্রের একটি বেল্ট দেবেন। তা অবশ্যই সব সময় সঙ্গে রাখুন। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের দেয়া হজযাত্রীর পরিচয়পত্রও গলায় ঝুলিয়ে নিন বা সঙ্গে রাখুন।

মোবাইল সিম

মক্কা গিয়ে মোবাইলের একটি সিমকার্ড কিনুন। পাসপোর্টের কাগজপত্র দেখিয়ে সিমকার্ড কিনতে পারবেন। মোয়াল্লেম ও দল নেতার মোবাইল নম্বরটিও লিখে রাখুন।

অসুস্থ হলে

আপনি কিংবা আপনার দলের কেউ অসুস্থ হলে মক্কা কিংবা মদিনায় বাংলাদেশ হজ মিশনে যোগাযোগ করুন। অথবা দল নেতার পরামর্শ শুনুন।

হারিয়ে গেলে

হারিয়ে গেলে চিন্তা না করে মোয়াল্লেমের দেয়া হাতের পরিচয়পত্র, হোটেলের কার্ড অনুযায়ী হোটেল বা বাসা খোঁজ করুন। ভালো হয়, যখন সেখানে থাকবেন, নিজের মতো করে জায়গাটা চিনে নিন এবং সেই অনুযায়ী পথ চলুন। আর মানচিত্র দেখে আগেই বুঝে নিন আপনার অবস্থানের জায়গাটি।

হজের কার্যক্রম

১. এহরাম বাঁধা। ২. ৭-৮ জিলহজ মিনায় অবস্থান করা। ৩. ৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পরে মিনা থেকে আরাফাতে অবস্থান এবং সূর্যাস্তের পরে মুজদালিফায় যাওয়া। ৪. ৯ জিলহজ মুজদালিফায় রাত যাপন করা। ৫. ১০ জিলহজ মিনায় বড় জামারাকে (শয়তান) কঙ্কর মারা, কোরবানি করা, মাথার চুল ফেলে দেয়া। ৬. ১২ জিলহজের মধ্যে তাওয়াফ জিয়ারত, সাঈ করা। ৭. ১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় জামারাকে (শয়তান) কঙ্কর মারা। ৮. বিদায়ী তাওয়াফ করা।

হজের করণীয়

হজের করণীয় ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাবসহ বিভিন্ন মাসয়ালাগুলো ভালো করে জেনে নিন। এজন্য হজ গাইডের সাহায্য নিতে পারেন কিংবা যে জানেন তার কাছ থেকে শিখে নিন।

হজের তালবিয়া

 

‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়াল্মুলক, লা শারিকা লাকা।’

হজের দিনগুলো

আরাফাতের মাঠ, মুজদালিয়া, মিনায় হজের দিনগুলোতে নিজের মালপত্রের দিকে খেয়াল রাখুন। কোথাও তাড়াহুড়া করবেন না। যেখানে যে নিয়ম, সেখানে সেই নিয়ম মানুন। কেউ কিছু না জানলে তাকে জানিয়ে দিন বা দেখিয়ে দিন। তবে কখনোই ভুল তথ্য দেবেন না।

ঘুরে দেখুন

* মক্কা ও মদিনায় অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। সেগুলো সময়-সুযোগ করে দেখে নিতে পারেন।

* এছাড়া হজ সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য পেতে যোগাযোগ দেখতে পারেন বাংলাদেশ সরকারের হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টাল www.hajj.gov.bd নামের ওয়েবসাইট। এখানে হজের যাবতীয় তথ্য ও নিয়ম-কানুন দেয়া আছে।

* এছাড়া প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন : পরিচালক, হজ ঢাকা অফিস : ৮৯৫৮৪৬২। সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয় : ৯৫১৪৫৩৩। বাংলাদেশ হজ মিশন, মক্কা, ০০-৯৬৬-২-৫৪১৩৯৮০। বাংলাদেশ হজ মিশন, মদিনা : ০০-৯৬৬-০৪-৮৬৬৭২২০। বাংলাদেশ হজ মিশন, জেদ্দা : ০০-৯৬৬-২-৬৮৭৬৯০৮।

জেনে রাখুন

* কাবা শরিফের অনেকগুলো গেট আছে। দেখতে একই রকম। তবে প্রতিটি গেটের আলাদা নাম আছে। তাই নামগুলো মনে রাখলে চলাচলে সহজ হবে। আপনি যার সঙ্গে থাকবেন তাকেও গেটগুলো চিনিয়ে দিন। তাহলে হারিয়ে গেলে খুঁজে পেতে সহজ হবে।

* জুতা রাখুন নির্দিষ্ট স্থানে। অথবা ব্যাগে নিজের কাছে রাখুন।

* কাবাঘরে তাওয়াফ করুন সবুজ বাতি দেখে। সবুজ বাতি হজরে আসওয়াদ বরাবর। হজরে আসওয়াদ বা সবুজ বাতি থেকে কাবাঘর একবার ঘুরে আবার সবুজ বাতির কাছে এলে এক চক্কর হবে। এভাবে সাত চক্কর দিতে হবে।

* কাবা শরিফের পাশেই সাফা-মারওয়া পাহাড়। সাফা থেকে মারওয়া গেলে একবার সাঈ হবে। আবার মারওয়া থেকে সাফা এলে দুইবার সাঈ হবে। এবারে সাতবার। সাঈ করার সময় সবুজ বাতির স্থানে দ্রুত দৌড়াতে হবে।

* ওমরাহ করতে চাইলে কাবা শরিফের সীমানার বাইরে মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধতে হবে। মসজিদে আয়শা থেকে এহরাম বাঁধা যায়। কাবা শরিফের পাশেই মিসফালা ব্রিজ বা গাজ্জা সেবা আমির থেকে ট্যাক্সি বা মাইক্রোবাসে যেতে পারবেন আয়শা মসজিদ। চুল কাটার জন্য অনেক সেলুন পাবেন ইব্রাহিম খলির রোড, গাজ্জা সেবা আমির বা মিসফালা এলাকায়।

* খাওয়ার জন্য মক্কায় ঢাকা, এশিয়া, চিটাগাংসহ বিভিন্ন বাংলাদেশী হোটেল আছে। মদিনায়ও ঢাকা, মদিনাসহ অনেক বাংলাদেশী হোটেল আছে। এসব হোটেলে বাংলাদেশী খাবার পাবেন।

* মক্কা-মদিনায় অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী আছেন। হারিয়ে গেলে বা কিছু না চিনলে বা কিছু জানতে চাইলে তাদের পরামর্শ নিতে পারেন। আর কোনো কিছু কিনলে দরদাম করে কিনুন।

* হজের নিয়ম-কানুন জানতে হজ গাইডটি বারবার পড়ুন অথবা যে জানে তার কাছ থেকে শিখে নিন। আর যে কোনো কাজে দল নেতাকে অনুসরণ করুন।

 

Related posts