স্বাস্থ্য সতর্কবাণী দিচ্ছে না ৭৫ ভাগ তামাক কোম্পানি

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম ।১০ আগস্ট ২০১৬

স্বাস্থ্য সতর্কবাণী দিচ্ছে না ৭৫ ভাগ তামাক কোম্পানি

স্বাস্থ্য সতর্কবাণী দিচ্ছে না ৭৫ ভাগ তামাক কোম্পানি

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধি অনুযায়ী ৭৫ শতাংশ সিগারেট কোম্পানি তাদের পণ্যের প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, সুকৌশলে এসব কোম্পানি সরকারের নীতিমালা ফাঁকি দিচ্ছে। এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর অবহেলার কারণে নীতিমালাও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।

জানা গেছে, চলতি বছরের ১৯ মার্চ থেকে সব তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট ও কৌটার উভয় পাশে ৫০ ভাগ জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণের আদেশ দেওয়া হয়।

কিন্তু তামাক বিরোধী সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, ৭৫ শতাংশ সিগারেট কোম্পানি আইন অনুসারে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী দিচ্ছে না। অধিকাংশ বিড়ি, গুল, জর্দার কৌটা ও মোড়কে আইন অনুসারে স্বাস্থ্য সতর্কবাণী নেই। সংস্থাগুলো তামাকজাত পণ্যের মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী নিশ্চিত করা এবং উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ নিশ্চিত করা জরুরি বলে মত দিয়েছে।

বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের এক পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়, একজন ধূমপায়ী বছরে প্রায় ৭ হাজার বার একটি ব্র্যান্ডের সিগারেটের প্যাকেট দেখে। ফলে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ধূমপায়ীদের ধূমপান ত্যাগে উৎসাহিত করে এবং অধূমপায়ীদের ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত করে। এ কারণে তামাক কোম্পানিগুলো সুকৌশলে তামাকজাত পণ্যের মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী দেওয়ায় বিরত থাকে।

অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অব হেলথ্ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার কর্তৃক পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় প্লেইন প্যাকেজিং চালু হওয়ার এক বছর পর অর্থাৎ ২০১৩ সালে দৈনিক ধূমপায়ীর হার ১৫.১ শতাংশ থেকে ১২.৮ শতাংশে নেমে গেছে।

তামাক বিরোধী সংগঠন প্রগতির জন্য জ্ঞান-এর (প্রজ্ঞা) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, ‘প্লেইন প্যাকেজিং প্রথা প্রবর্তনে বাংলাদেশকে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। দেশের ১০০টি জর্দা কারখানার মধ্যে মাত্র ১৪টি সচিত্র সতর্কবাণীসহ জর্দা বাজারজাত করছে। একইভাবে ১৩টি গুল কারখানার মধ্যে মাত্র ১টি কারখানা সচিত্র সতর্কবাণীসহ গুল বাজারজাত করছে। সামগ্রিকভাবে সচিত্র সতর্কবাণী বাস্তবায়নের হার উদ্বেগজনক।’

এদিকে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোর জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৭৫ শতাংশ তামাকপণ্যই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ছাড়া বাজারজাত করা হচ্ছে। গবেষণায় প্রাপ্ত ১৪টি ব্র্যান্ডের ৮৮টি বিড়ির প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সর্তকবাণীর উপস্থিতি শূন্য শতাংশ। সিগারেটের ৩৫টি ব্র্যান্ডের ৭০০ প্যাকেটের মধ্যে ৫৫.৩ শতাংশ প্যাকেটেই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পাওয়া যায়নি। ৪৪.৭ শতাংশ সিগারেটের প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সর্তকবাণী পাওয়া গেলেও তা আইন মেনে মুদ্রণ করা হয়নি (উপরের ৫০% এর পরিবর্তে নিচের ৫০% এ)।  জর্দায় ৯১.৬ শতাংশ এবং গুলের ক্ষেত্রে ৮৭.৯ শতাংশ কৌটাতেই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পাওয়া যায়নি।

 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, ‘তামাক জনস্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ও ভোক্তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় বিধায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নেও এ প্রতিষ্ঠানের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মানুষের সে প্রত্যাশা পূরণে সবসময় প্রস্তুত আছে।’

বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের প্রতিনিধিরা জানান, সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে বাংলাদেশ সরকার সকল তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান বাধ্যতামূলক করেছে এবং প্রতি তিন মাস পর পর আইন অনুসারে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পরিবর্তনের বিধান করেছে। কিন্তু তামাকজাত পণ্যের মোড়কে উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ না থাকায় পর্যবেক্ষণে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক ৪ কোটি ১৩ লাখ মানুষ তামাকপণ্য ব্যবহার করেন এবং ১ কোটি ১৫ লাখ মানুষ কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায়।

মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের আন্তরিক সহযোগিতা থাকবে। সারা দেশে সকল অফিসের কর্মকর্তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবে।’

 

Related posts