শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬
বাংলাদেশের বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থা সংস্কার করে একটি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নির্দেশনা অনুযায়ী অর্থ বিভাগ কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী দেশের বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থা সংস্কার করে বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে একটি সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করার ঘোষনা দেন।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা পেনশন ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন আনার কথা ভাবছি। এতে ভবিষ্যতে যোগদানকারী সব সরকারি চাকরিজীবীর জন্য বিদ্যমান পেনশন পদ্ধতি পরিবর্তন করে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পেনশন পদ্ধতি চালু করব। পর্যায়ক্রমে আধা-সরকারি ও ব্যক্তিখাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এবং অনানুষ্ঠানিক বা স্ব-কর্মসংস্থানে নিযুক্ত কর্মজীবীসহ সব স্তরের জনগোষ্ঠির জন্য সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি সমন্বিত কাঠামোর আওতায় সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রণয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, ডিপিএস ব্যবস্থা যেভাবে বেসরকারি খাতে একটি পেনশন সুযোগ করে দিয়েছে, এখন এটাকে সর্বজনীন করার জন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটিই হবে নতুন পরিকল্পনার ভিত্তি। এ ব্যবস্থায় একদিকে যেমন প্রবীনদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে দেশের আর্থিক খাতের গভীরতা নিশ্চিতসহ দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ চাহিদা পূরনে সহায়ক তহবিল সৃষ্টি করবে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থার সংস্কার, উপযুক্ত সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি নির্ধারণ ও স্বল্প সময়ের মধ্যে এ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ কর্তৃক আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের পেনশন ব্যবস্থা পর্যলোচনা করা হয়। বিশেষতঃ দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে সার্কভূক্ত দেশগুলোতে পেনশন ব্যবস্থার উপর তুলণামূলক পর্যালোচনা করে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর জন্য একটি কার্যপত্র তৈরি করা হয়।
কার্যপত্রে বলা হয়েছে, একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পেনশন মডেলের আওতায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে ভারত অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। নিকট অতীতে বাংলাদেশ ও ভারত দীর্ঘদিন অবিভক্ত ভারতবর্ষের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকার কারণে সহজাতভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের আর্থ-সামজিক প্রেক্ষাপট, প্রশাসনিক ব্যবস্থা, মৌলিক আইনি কাঠামো, সংস্কৃতি পরিমন্ডল, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ শাসনাধীন থাকার কারণে এ দু’টি দেশ ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রণীত পেনশন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, এতে করে ভারতের ২০০৪ সালের আগে পেনশন পদ্ধতির সঙ্গে বাংলাদেশে বিদ্যমান পেনশন পদ্ধতির অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিল রয়েছে। ভারত সর্বপ্রথম ১৯৯৬ সালে পরিবর্তিত আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে যে নতুন পেনশন পদ্ধতি সংস্কার বিষযে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিল এবং প্রারম্ভিক অবস্থায় যে সব প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছিল, বাংলাদেশও বর্তমানে একই অধ্যায় অতিক্রম করছে।
সূত্র জানায়, এসব কারণে বাংলাদেশের জন্য একটি উপযুক্ত পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনে পথ-নির্দেশনা পাওয়ার লক্ষ্যে ভারতের পেনশন পদ্ধতি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এআরএম নজমুস ছাকিবের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি টিম সে দেশে যান। এ সময় তারা ২০০৪ সালে চালুকৃত নতুন সর্বজনীন পেনশন কাঠামো তথা জাতীয় পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রেক্ষাপট, কার্যপদ্ধতি, প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো ও এর ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগ ব্যবস্থা, হিসাব রক্ষণ পদ্ধতি এবং আইন ও বিধি-বিধান সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা অর্জন করেন।
ভারত সফরের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ আগস্ট অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় প্রাপ্ত মতামত ও সুপারিশমালার আলোকে বাংলাদেশে বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থার সংস্কার এবং নতুনভাবে একটি সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বেশ কিছু সিদ্ধান্ত দেন।
এর মধ্যে বিদ্যমান ব্যবস্থায় নীট ১০০ ভাগ পেনশন সমর্পনের সুযোগ অবিলম্বে বন্ধ করে বাধ্যতামূলক ৫০ ভাগ সমর্পনের বিষয়টি অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগ কর্তৃক প্রক্রিয়াকরণ করতে হবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে পেনশন সংক্রান্ত ধারণাপত্র চূড়ান্ত এবং কেবিনেট পেপার প্রণয়ন করতে হবে। আগামী দু’বছরের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তুতিমূলক যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেন অর্থমন্ত্রী।
এছাড়াও সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় প্রস্তাবিত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সঙ্গে সম্পৃক্ত সাতটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পদ্ধতি, নিয়োগ যোগ্যতার মানদন্ড, প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনাগত গাইডলাইন, জনবল কাঠামো নির্ধারণের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।