শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১৯ অক্টোবর ২০১৬
জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিদের সকলের মধ্যেই একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়। অন্যরা বাধা-বিপত্তি দেখলে যেখানে হাল ছেড়ে দেন সেখানে তারা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন এবং বাধাগুলোকে অতিক্রম করেন।
কঠিন কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে নেতিবাচক অনুভূতিগুলো মোকাবেলায় তাদের যে সক্ষমতা আছে সেটিই তাদেরকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। অথচ অনেক বিচক্ষণ লোকও এই নেতিবাচক অনুভূতিগুলোর মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হন।
বাধা-বিপত্তির কারণে কোনো পথ বন্ধ হয়ে যায় না; বরং বাধাগুলোই হলো পথ। এমনই ধারণা লালন করেন তারা।
এই দৃষ্টিভঙ্গিই সফল লোকদেরকে অন্য আর সবার চেয়ে আলাদাভাবে ভাবতে সহায়তা করে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনি যদি অন্য আর সকলের মতোই ভাবেন তাহলে আপনি যত স্মার্ট বা অভিজ্ঞতা সম্পন্নই হন না কেন আপনিও সকলের মতোই গতানুগতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। গতানুগতিক কাঠামোর বাইরে গিয়ে ভাবার মাধ্যমেই শীর্ষ সফল ব্যক্তিরা নিজেদের সীমাকেও ছাড়িয়ে যান।
আর এর শুরুটা হয় তাদের সকালের রুটিন থেকে। শীর্ষ সফল ব্যক্তিরা দিনের প্রথম কয়েকটি ঘন্টা যেভাবে কাজে লাগান:
১. লেবুপানি পান করেন
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরপরই লেবু পানি পান করলে শারীরিক ও মানসিক শক্তি তুঙ্গে ওঠে। সকালেই পাকস্থলীতে পুষ্টি উপাদান শোষণ করে শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়া শক্তিশালি করার ফলে পুরো দিনব্যাপী দৈহিক ও মানসিক শক্তি অটুট থাকে। খালিপেটে লেবু পানি পান করার পর কোনো খাবার খাওয়ার আগে ১৫-৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।
লেবুতে আছে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ অসংখ্য পুষ্টি উপাদান। আপনার ওজন যদি ১৫০ পাউন্ড বা ৬৮ কেজির কম হয় তাহলে অর্ধেক লেবুর জুস পান করুন। আর এর বেশি হলে পুরো একটি লেবুর জুস পান করুন। পানি মেশানো ছাড়া লেবুর জুস পান করবেন না। তাহলে দাঁতের ক্ষতি হবে।
২. ব্যায়াম করেন
রিচার্ড ব্র্যানসন, টিম কুক এবং ডিজনির বব ইগার এদের সকলেই সকাল ৬টার আগেই ঘুম থেকে উঠে নিজেদের দেহকে সচল করতেন। ইস্টার্ন অন্টারিও রিসার্চ ইনস্টিটিউট পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে দুই দিন করে টানা ১০ সপ্তাহ ব্যায়াম করেন তারা নিজেদেরকে সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং ক্রীড়াগতভাবে অনেক বেশি যোগ্য অনুভব করেন।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত দ্বিতীয় আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ব্যায়াম করেন তাদের দেহে শক্তি বেশি থাকে এবং তারা অনেক বেশি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করেন। এই দুটোই কোনো কাজ ভালোভাবে সম্পাদন এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি।
৩. সংযোগ বিচ্ছিন্ন হন
হাওয়ার্ড শুলটজ তার কর্মীদেরকে একটি অনুপ্রেরণারদায়ী ইমেইল করার মাধ্যমে দিন শুরু করেন। এরপর তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে শরীর চর্চা ও পরিবারের জন্য সময় ব্যয় করেন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরপরই ইমেইল, টেক্সট এবং ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলে আপনার মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে। এতে আপনার সকালটি অন্যদের চাহিদা পূরণের তৎপরতায় নিমজ্জিত হবে। সুতরাং সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মূল্যবান মুহূর্তগুলো নিজের পুরো দিনটিকে সুন্দরভাবে পরিচালনার প্রস্তুতির জন্য ব্যয় করুন।
৪. স্বাস্থ্যকর নাস্তা
যারা নিয়মিতভাবে সকালের নাস্তা খান তার স্থুলতায় আক্রান্ত হন না। তাদের রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং তারা দিনব্যাপী খুব বেশি ক্ষুধার্ত হন না। সকালের নাস্তায় যে কোনো ধরনের খাবার খেলেই এই উপকারিতাগুলে পাওয়া যায়।
কিন্তু সকালের নাস্তায় যদি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া যায় তাহলে আপনার সামনে সহজেই একটি উৎপাদনশীল দিনের দরজা খুলে যাবে। স্বাস্থ্যকর নাস্তা দেহে প্রচুর শক্তি সরবরাহ করে, সংক্ষিপ্তকালীন স্মৃতি শক্তিশালি ও উন্নত করে এবং কোনো বিষয়ে আরো গভীরভাবে এবং দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ নিবদ্ধ করায় সক্ষম করে তোলে।
৫. মনোযোগ একীভুত করার মেডিটেশন
শীর্ষ সফল সিইওদের মধ্যে মনোযোগ একীভুত করার মেডিটেশনের জনপ্রিয়তা ক্রমাগতভাবে উত্তোরোত্তর বেড়ে চলেছে। উৎপাদনশীলতা এবং সার্বিকভাবে ভালো থাকার ক্ষেত্রে এটি যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে সে কারণেই হয়তো ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে এর জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই মেডিটেশনটি মনোযোগ নিবদ্ধ করার সক্ষমতা বাড়ায়, সৃজনশীলতা জোরদার করে এবং আবেগগত বুদ্ধিমত্তা শক্তিশালি করে।
৬. দিনের শুরুতেই দিনের লক্ষ্যগুলো নির্ধারণ
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন সকাল বেলাতেই পুরো দিনের কর্ম-পরিকল্পনা তৈরির ব্যাপারে আসক্ত ছিলেন। প্রতিদিন ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠেই তিনি নিখুঁতভাবে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতেন। ফ্রাঙ্কলিনের অভ্যাস থেকে যে বার্তাটি গ্রহণীয় তা হলো: বিচক্ষণতার সঙ্গে লক্ষ্য স্থির করলে সুফল পাওয়া যায়। আপনি যদি যত বেশি সম্ভব ততবেশি সতর্কতার সঙ্গে পুরো দিনের পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন তাহলে আপনার লক্ষ্যগুলো অর্জনের সম্ভাবনাও আকাশচুম্বী হবে। মনোযোগ একীভুত করার মেডিটেশনের পর দিনের পরিকল্পনা করতে বসলে বেশি সুফল পাওয়া যাবে। কারণ শান্ত মন এবং মানসিক পরিচ্ছন্নতা কার্যকর ও সুনির্দিষ্টভাবে লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়ক ভুমিকা পালন করে।
৭. না বলেন
না একটি শক্তিশালি শব্দ। এটি আপনার মূল্যবান সাকালটিকে বাঁচাতে সক্ষম। যখন না বলার দরকার তখন “আমার মনে হয় না আমি পারব” বা “আমি নিশ্চিত নই” এই জাতীয় শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করবেন না। নতুন কোনো প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে না বললে আপনার বিদ্যমান প্রতিশ্রুতিগুলোকে সম্মান করা হয়। আর আপনার সকালটিও আপনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি।
সানফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, আপনি না বলার ব্যাপারে যত বেশি কাঠিন্য প্রদর্শণ করবেন ততই আপনি মানসিক ধকল ও পীড়ন অনুভব করবেন এবং এমনকি অবসাদে আক্রান্ত হবেন।
সূত্র: ফোবর্স অবলম্বনে মাহবুবুল আলম তারেক