শি জিনপিং ঢাকা ছাড়লেন

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম ।  ১৫  অক্টোবর  ২০১৬

শি জিনপিং ঢাকা ছাড়লেন

শি জিনপিং ঢাকা ছাড়লেন

প্রায় ২২ ঘণ্টার সফল সফর শেষে ঢাকা ছাড়লেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

শনিবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ভারতের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আর আজ সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

এ সময় বিমানবন্দরে আরো উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক।

এর আগে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান শি জিনপিং। শনিবার সকাল ৯টা ৮ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান তিনি। সেখানে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করেন শি জিনপিং। সেখান থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন তিনি।

দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শুক্রবার শুক্রবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। চীনের প্রেসিডেন্টের উড়োজাহাজটি বাংলাদেশের আকাশসীমায় ঢোকার পর তাকে পাহারা দিয়ে বিমানবন্দরে নিয়ে আসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কয়েকটি আকাশযান।

বিমানবন্দরে শি জিনপিংকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ২১ বার তোপধ্বনির পর সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল শি জিনপিংকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।

বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনার পর তিনি ওঠেন বিমানবন্দর সড়কের লা মেরিডিয়ান হোটেলে। তার নিরাপত্তার জন্য ২৪ ঘণ্টা ওই সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। চীনের প্রেসিডেন্টের সফর উপলক্ষে ঢাকাকে দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো হয়।

দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট তার দেশের ২৪ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। তাদের মধ্যে ছিলেন তিনজন স্টেট কাউন্সিলর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী।

এদিন বেলা ৩টায় কড়া নিরাপত্তায় সুসজ্জিত গাড়িবহরে শি জিনপিং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছান। সেখানে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শি জিনপিং দুই দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। পরে শি জিনপিং ও শেখ হাসিনার উপস্থিতিতেই স্বাক্ষরিত হয় সহযোগিতার ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠকে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুই দেশের যৌথ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘এক চীন নীতি’র প্রতি জোরালো সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যৌথ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরো নিবিড়ভাবে কাজ করতেও ঐকমত্য হয়েছে। কিছু প্রধান ক্ষেত্র, যেমন- বাণিজ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্প, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি এবং কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতায় বাংলাদেশ ও চীন একমত হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এসব চুক্তির মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ, ব্লু ইকোনমি, সড়ক ও সেতু নির্মাণ, রেলপথ, বিদ্যুৎ, শিল্প উৎপাদন, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতার উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক জোট বিসিআইএম-ইসিতে সহযোগিতার বিষয়। বৈঠকে চীনের সহায়তায় ছয়টি নতুন প্রকল্পেরও মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

বৈঠক শেষে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ছয় বছর পর বাংলাদেশের মতো সুন্দর একটি দেশে আবারও সফরে আসতে পেরে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও চীন ভালো প্রতিবেশী, ভালো বন্ধু এবং ভালো অংশীদার। এবারের এই ঢাকা সফর সামগ্রিকভাবে দুই দেশের অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

শি জিনপিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। কৌশলগত যোগাযোগের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক কীভাবে আরো এগিয়ে নেওয়া যায় সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য চীন প্রস্তুত। অবশ্যই বাংলাদেশ চীনের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার এবং দুই দেশের সম্পর্ককে আরো অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে চীনের প্রেসিডেন্ট আবারও হোটেল লা মেরিডিয়েনে ফিরে যান। সেখানে তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তিনি বঙ্গভবনে পৌঁছান। সেখানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক শেষে অংশ নেন তার সম্মানে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে।

 

 

Related posts