রাজউক বিভক্ত করে ‘গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-জিডিএ’

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ১  জুন  ২০১৬

রাজউক বিভক্ত করে ‘গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-জিডিএ’

রাজউক বিভক্ত করে ‘গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-জিডিএ’

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক বিভক্ত করে ‘গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-জিডিএ’ নামের একটি নতুন প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। টঙ্গীসহ গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সংলগ্ন এলাকা নিয়ে এ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। এ জন্য একটি প্রস্তাব বর্তমানে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। শিগগিরই এটি মন্ত্রিসভায় উঠবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবে এর বিরোধিতা করেছে রাজউক।

ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর ঢাকায় পরিকল্পিত নগরায়নের উদ্দেশ্যে ১৯৫৬ সালে ‘টাউন ইম্প্রুভমেন্ট অ্যাক্ট (টিআইএ)-১৯৫৩’ এর মাধ্যমে ‘ঢাকা ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট-ডিআইটি’ প্রতিষ্ঠা হয়। এ ডিআইটির মাধ্যমে ঢাকার ৮২০ বর্গকিলোমিটার (৩২০ বর্গমাইল) এলাকার জন্য প্রথম মাস্টারপ্ল্যান বা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। এর পর ঢাকার সাথে নারায়ণগঞ্জ শহরকেও সংযুক্ত করা হয়।

প্রথম মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছিল ২০ বছরের জন্য। কিন্তু নানা কারণে সেটি আর হালনাগাদ করা হয়নি। ফলে স্বাধীনতার পর অপরিকল্পিতভাবে রাজধানী ঢাকার সম্প্রসারণ ঘটতে থাকে খুব দ্রুত।

ডিআইটির নাম পরিবর্তন করে ১৯৮৭ সালের ১৯ এপ্রিল ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক’ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এরপর গাজীপুর পৌরসভা, সাভার পৌরসভা, কেরানীগঞ্জ উপজেলা, নারায়ণগঞ্জ বন্দরের কদমরসূল পৌরসভাসহ মেঘনা নদী পর্যন্ত বিশাল এলাকা নিয়ে ১৯৯৫ সালে ঢাকার দ্বিতীয় মাস্টারপ্ল্যান ডিএমডিপি (ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান) প্রণয়ন করা হয়। ডিএমডিপির আয়তন দাঁড়ায় এক হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার। এর পর রাজউকের মাধ্যমে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ তৈরি করে ২০১০ সালে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। বর্তমানে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বিশ বছরের জন্য ড্যাপ সংশোধনের কাজ চলছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন ঢাকার পাশাপাশি হওয়ায় এখানে বহু ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কিন্তু বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। তা ছাড়া রাজউকের পরিধি বর্তমানে অনেক বেশি হওয়ায় এবং জনবল কম থাকায় জেলা শহর গাজীপুরের উন্নয়নে তেমন পরিকল্পনা নিতে পারছে না রাজউক। এ কারণে গাজীপুর এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দীর্ঘ দিন থেকেই সেখানে একটি আলাদা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের দাবি ওঠে। গত ১৩ মার্চ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপ আইন ২০১৬ পাস হলে এ দাবি আরো জোরালো হয়।

জানা যায়, গত ১০ এপ্রিল সচিবালয়ে ড্যাপ সংশোধন বিষয়ক এক সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপ আইন ২০১৬-এর আদলে ‘গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন- ২০১৬’ নামে আইনের একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এতে কর্তৃপরে আয়তন, জনবল, কর্মপরিধি ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির আওতাভুক্ত এলাকার আয়তন ধরা হয়েছে ৩৩০ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে থাকবে গাজী সিটি করপোরেশন, টঙ্গী এবং সংশ্লিষ্ট এলাকা। প্রস্তাবটি বর্তমানে যাচাই-বাছাই চলছে। শিগগিরই এটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। সরকারের অনুমোদন পেলে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এলাকার সব উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। এসব এলাকায় রাজউকের আর কোনো খবরদারি থাকবে না।

তবে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের বিরোধিতা করছে রাজউক। সূত্রে জানা যায়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপ গঠন বিষয়ক একটি খসড়া রাজউকে পাঠানো হয় মতামতের জন্য। রাজউক তাতে নেতিবাচক মত দিয়ে প্রস্তাবের ফাইলটি ফেরত পাঠিয়েছে। রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো: সিরাজুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, গাজীপুর ও টঙ্গী এলাকা রাজউকের আওতাধীন। যেহেতু রাজউক এখানে কাজ করছে, সেহেতু নতুন কর্তৃপরে দরকার কী?

রাজউকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, গাজীপুর আসলেই একটি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের উপযুক্ত কিনা তা আমাদের ভাবতে হবে। আমরা মনে করি সেখানে এখনো উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। তবে সরকার যদি মনে করে তাহলে আমাদের কিছু বলার থাকবে না। পরিকল্পিত নগরী গড়তে আমরা সরকারকে সহযোগিতা করব।

অন্য দিকে গাজীপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, গাজীপুরে একটি উন্নয়ন কর্তৃপ হলে ভালোই হবে। তখন আরো পরিকল্পিতভাবে এলাকার উন্নয়ন করা যাবে। তিনি বলেন, আজ হোক, কাল হোক এটি করতেই হবে।

রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ও পরিকল্পনাবিদ মো: এমদাদুল ইসলাম বলেন, এক হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটারের মতো বিশাল এলাকার দেখভাল করতে পারছে না রাজউক। এত জনবলও নেই প্রতিষ্ঠানটির। এ কারণে নারায়ণগঞ্জ কিংবা গাজীপুরে সচরাচর কেউ যেতে চান না। এ অবস্থায় রাজউক বিভক্ত করে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপ গঠনের ধারণাটি খারাপ নয়। বরং নতুন কর্তৃপ হলে এটিকে জনবল দিয়ে সমৃদ্ধ করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। তিনি বলেন, গাজীপুরের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জেও এ ধরনের একটি নতুন কর্তৃপ গঠন করা যেতে পারে। তাহলে উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে গতিশীলতা আসবে।

 

 

 

 

Related posts