শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ৬ মার্চ ২০১৭ ‘
চট্টগ্রাম বন্দরে শুল্ক গোয়েন্দার জালে আটকা পড়া ১২ কনটেইনারের মধ্যে চারটি থেকে মদ, সিগারেট ও টেলিভিশন পাওয়া গেছে। এগুলোর মূল্য প্রায় ৬৯ কোটি টাকা বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। বাকি আট কনটেইনার আজ সোমবার খোলা হচ্ছে।
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রের ভাষ্য, প্রাণিখাদ্য তৈরির যন্ত্র আমদানির আড়ালে সিগারেট, মদ ও টেলিভিশন এনে তা দ্রুত ছাড়িয়ে নেওয়ার কৌশল নিয়েছিলেন ঢাকার এক আমদানিকারক। তবে শুল্ক গোয়েন্দাদের নজরদারির কারণে তাঁর চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। গতকাল রোববার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রথম দফায় ছয়টি কনটেইনার খুলে চারটিতে থাকা পণ্যের মূল্য প্রায় ৬৯ কোটি টাকা বলে হিসাব বের করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান প্রথম আলোকে বলেন, বন্দর দিয়ে আটক হওয়া এই ধরনের অবৈধ পণ্যের সবচেয়ে বড় চালান এটি। পণ্যের আমদানিকারক খোরশেদ আলম ও পণ্য খালাসে নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রাবেয়া অ্যান্ড সন্সের মালিক জালাল উদ্দিন পলাতক রয়েছেন বলে তিনি জানান।
চট্টগ্রাম বন্দরে শুল্ক গোয়েন্দার জালে আটকা পড়া ১২ কনটেইনারের মধ্যে চারটি থেকে মদ, সিগারেট ও টেলিভিশন পাওয়া গেছে। বাকিগুলোও খোলা হবে। ছবিটি রোববারের। ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রাম বন্দরে শুল্ক গোয়েন্দার জালে আটকা পড়া ১২ কনটেইনারের মধ্যে চারটি থেকে মদ, সিগারেট ও টেলিভিশন পাওয়া গেছে। বাকিগুলোও খোলা হবে। ছবিটি রোববারের। ছবি: প্রথম আলো
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, চার কনটেইনারে দুই কোটি শলাকা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেট পাওয়া গেছে। সিগারেট আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্যের ওপর ৫৯৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ শুল্ককর দিতে হয়। অর্থাৎ, সিগারেটের দাম এক টাকা হলে শুল্ককর দিতে হবে ৫৯৬ দশমিক ৯৭ পয়সা। আবার আমদানি নীতির শর্ত অনুযায়ী, সিগারেটের প্যাকেটে বাংলায় ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ লেখা থাকতে হবে। চার কনটেইনারে পাওয়া সিগারেটের মূল্য প্রায় ৩৭ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩২ থেকে ৯০ ইঞ্চি এইচডি ও এলইডি টেলিভিশন পাওয়া গেছে ১ হাজার ৮৯টি। টেলিভিশনের শুল্ককর ৯০ শতাংশ। আমদানি মূল্যসহ এসব টেলিভিশনের মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া নামীদামি ব্র্যান্ডের মদ পাওয়া গেছে ১৬ হাজার ১৭০ বোতল। আমদানি মূল্যের ওপর মদের মোট শুল্ককর দিতে হয় ৬০০ শতাংশ। জব্দ হওয়া মদের মূল্য প্রায় ১৭ কোটি টাকা।
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রের ভাষ্য, শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতি আমদানির পর সাধারণত কায়িক পরীক্ষা (কাস্টমস কর্মকর্তারা কনটেইনার খুলে আমদানি করা পণ্য ঘোষণা অনুযায়ী আনা হয়েছে কি না, তা পরখ করে দেখেন) হয় না। আবার কারখানার জন্য মূলধনী যন্ত্র আমদানিতে মাত্র ১ শতাংশ শুল্ককর দিতে হওয়ায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষও তা দ্রুত খালাসের প্রক্রিয়া শেষ করে। এর সুযোগ নিয়ে যন্ত্রপাতি আমদানির নামে ঋণপত্র খোলেন ঢাকার খিলক্ষেত এলাকার ‘হিনান আনহুই এগ্রো এলসি’ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী খোরশেদ আলম। চীন থেকে একটি চালানে ছয় কনটেইনার পণ্য আমদানি করেন তিনি। চীন থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে এমভি ভাসি সান জাহাজে ছয়টি কনটেইনারে এসব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। এর আগেই শুল্ক গোয়েন্দারা তথ্য পান যে চালানটিতে সন্দেহজনক পণ্য রয়েছে। গোয়েন্দারা কৌশলে আমদানিকারকের প্রতিষ্ঠান ঘুরে আসেন। কিন্তু কারখানার কোনো অস্তিত্ব পাননি তাঁরা। তখন সন্দেহ আরও জোরালো হয় তাঁদের।
জাহাজ থেকে পণ্য নামানোর আগেই প্রথম চালানের ছয় কনটেইনার পণ্যের শুল্কায়ন করে নেন আমদানিকারক। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি বন্দরের জলসীমায় আসার পরদিন শুল্কায়ন হয়। মূলধনী যন্ত্রপাতির চালান আনার ঘোষণা থাকায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের রাজস্ব কর্মকর্তা পর্যায়ে এর শুল্কায়ন হয়। শুল্কায়ন শেষ হয়ে যাওয়ার পর যেকোনো সময় বন্দর থেকে দ্রুত পণ্য খালাস করে নেওয়ার সুযোগ থাকে। গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর আগেই এসব পণ্য খালাস করে নেওয়ার চেষ্টা ছিল আমদানিকারকের। এর মধ্যে গোয়েন্দা নজরদারির বিষয়টি টের পেয়ে আমদানিকারক জাহাজ থেকে কনটেইনার না নামিয়ে তা ফেরত নেওয়ার আবেদন করেন বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানিকারকের আবেদন নাকচ করে দেন। পরে শুল্ক গোয়েন্দাদের নির্দেশনায় ছয়টি কনটেইনার নিউমুরিং টার্মিনালের চত্বরে আলাদা করে রাখে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গোয়েন্দাদের কাছে এই ছয় কনটেইনারের মধ্যে তিনটিতে সন্দেহজনক পণ্য থাকার তথ্য ছিল। গতকাল সকাল ১০টার দিকে সন্দেহের বাইরে থাকা তিনটিসহ ছয় কনটেইনারই খুলে এসব পণ্য পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম বন্দরে শুল্ক গোয়েন্দার জালে আটকা পড়া ১২ কনটেইনারের মধ্যে চারটি থেকে মদ, সিগারেট ও টেলিভিশন পাওয়া গেছে। বাকিগুলোও খোলা হবে। ছবিটি রোববারের। ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রাম বন্দরে শুল্ক গোয়েন্দার জালে আটকা পড়া ১২ কনটেইনারের মধ্যে চারটি থেকে মদ, সিগারেট ও টেলিভিশন পাওয়া গেছে। বাকিগুলোও খোলা হবে। ছবিটি রোববারের। ছবি: প্রথম আলো
ছয় কনটেইনারের এই চালানের শুল্কায়ন নথিতে দেখা যায়, চীনের জম রাজ ইন্ডাস্ট্রি থেকে এসব পণ্য আনা হয়। আমদানিকারক পণ্যমূল্যের ঘোষণা দেন ২৫ লাখ টাকা। তবে এসব তথ্য মিথ্যা বলে দাবি করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ।সুত্র প্রথম আলো