যেভাবে এল টি-শার্ট

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ৩১  আগস্ট   ২০১৬

 

যেভাবে এল টি-শার্ট

যেভাবে এল টি-শার্ট

আপনি জেনে বিস্মিত হবেন যে, টি-শার্টের মতো একটি সাধাসিধা পোশাক কীভাবে এলো এবং এর নামকরণ কীভাবে হলো। পোশাকের ইতিহাস ঘাঁটতে গেলে বিস্মিত হতে হয় যে, কীভাবে টি-শার্ট এতো জাঁকজমকপূর্ণ পোশাকের ভিড় ঠেলে সারা বিশ্বের মানুষের নিত্য ব্যবহার্য পোশাকে পরিণত হলো।

গল্পটি এরকম:

কোনোরূপ সেলাইয়ের দক্ষতা ছাড়াই ব্যাচেলরদের জন্য টি-শার্ট তৈরি করা হয়। শুরুর দিকে এটি মূলত শার্টের নিচে পরার জন্য তৈরি করা হয়।

১৯০৪ সালের শুরুর দিকে কুপার আন্ডারঅয়্যার একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করে যেখানে তাদের একটি নতুন পণ্যের প্রচার করা হয় যা শুধুমাত্র ব্যাচেলরদের উদ্দেশ্যে করা। বিজ্ঞাপনটি ছিল একজন পুরুষের আন্ডারশার্ট পরার আগের ও পরের ছবি। পূর্বের ছবিতে দেখা যায় ছবির লোকটি ক্যামেরার বাইরে লাজুক ও অস্বস্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কারণ সে একটি বোতাম ছাড়া আন্ডারশার্ট পরে আছে যার দুই অংশ একটি সেফটি পিন দিয়ে একসাথে আঁটকানো। আর পরের ছবিতে দেখা যায় এক পৌরুষদীপ্ত লোক গোঁফে হাত রেখে সিগারেট মুখে ধরা এবং যে পোশাক পরে আছে তার নামই দেওয়া হয়েছে ‘ব্যাচেলর আন্ডারশার্ট’।

এই বিজ্ঞাপনটির স্লোগান ছিল ‘সেফটি পিনবিহীন- বোতামবিহীন-সুচবিহীন- সুতাবিহীন’, যার উদ্দেশ্য ছিল অবিবাহিত ও সেলাইয়ে অনভিজ্ঞ পুরুষগুলো (খরচ কমানোর বিষয়টি এখানে জড়িত কারণ ওই সময় নারীরাই ভালো সেলাই জানতো)।

পোশাকটি জনপ্রিয় করতে আমেরিকার নৌবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে:

এই আইডিয়াটি হয়তো আমেরিকার নৌবাহিনীর কাউকে আকৃষ্ট করেছিল। কারণ ওই বছরই কোয়ার্টার মাস্টারের অফিস থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে নাবিকেরা ইউনিফর্মের নিচে বোতাম ও সেলাই ছাড়া আন্ডারশার্ট পরবে। তখনই আরামদায়ক সুতির আন্ডারশার্টগুলো আমেরিকার নৌবাহিনীতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং এটি নিত্য ব্যবহার্য পোশাকে পরিণত হয়।

কুপারের আন্ডারঅয়্যার কোম্পানি নৌবাহিনীর এই নেকশার্ট জনপ্রিয় করে তুললেও তারা তখন স্টাইল প্রয়োগ করতে সমর্থ হয়নি। এটি প্রসার হয়েছিল লং জন্স ব্র্যান্ড থেকে।

ছেলেদের ১৯ শতকের লং জন্স ব্র্যান্ডের কথা ভাবুন। এটি সত্য যে কুপার আন্ডারঅয়্যার নৌবাহিনীর নেকশার্ট জনপ্রিয় করে তোলে কিন্তু টি-শার্টের স্টাইল উদ্ভুত হয়েছিল লং জন্স থেকে। শরীরের গড়নের ও বর্ধনশীল কাপড়ের পোশাক তৈরির অনেক দীর্ঘ পরীক্ষা করেছে, যা ঘাড় থেকে পুরো দেহ ঘিরে রাখবে।

আপনি কী আরো জানেন যে, ১৯৮০ সালের দিকে ঘরের বাইরে কটনের সোয়েটার পরা মানহানিকর ছিল?

হাভানার আইনপ্রনেতারা যেকোনো ধরনের আন্ডারঅয়্যার প্রকাশ্যে পরা নিষিদ্ধ করে দেয়। তাই শ্রমিকদের অতি গরমের মধ্যেও ফুল হাতার জামা পরে কাজ করতে হতো। সর্বাধিক অশালীন বলে গণ্য হতো টি-শার্ট পরা! তবে ক্রমেই এই শার্ট প্রচলিত হয়। কিন্তু তখন কেইবা তা চিন্তা করতে পেরেছিল।

এফ.স্কট ফিটগেরাল্ড যিনি প্রথম ছাপার মাধ্যমে ‘টি-শার্ট’ শব্দটি ব্যবহার করেন।

১৯২০ সালে পোশাকটি ভিন্ন নামে আবির্ভূত হয়। অক্সফোর্ড ডিকশনারির মতে, তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ‘টি-শার্ট’ শব্দটি ছাপায় উল্লেখ করেন। এটি তার ‘দিজ সাইড অব প্যারাডাইস’ নামক উপন্যাসে একটি জিনিসের ফর্দের মধ্যে উল্লেখ করা হয়, যা চরিত্রটি নিজের সঙ্গে বোর্ডিং স্কুলে নিয়ে যায়। ফিজগেরাল্ড এই পোশাকের নাম দেন ‘টি-শার্ট’ যার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে এর শার্টের মতো গড়ন। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন যে এতে তার পাঠকরা চরিত্রটিকে ইংল্যান্ডের প্রাথমিক স্কুলের সাদা পশমি পোশাকের নবীন যুবক হিসেবে কল্পনা করতে পারবে।

১৯৪০ সালের মধ্যে টি-শার্ট জনপ্রিয় পোশাকে পরিণত হয়

নান্সি পিপার নামক একজন সংবাদপত্রের কলামিস্ট লিখেন যে, টিনেজ তরুণেরা তাদের নিজের ঘরটি টি-শার্ট দিয়ে পূর্ণ করে রাখে এবং একে অতিরিক্ত কাপড় ও কাপড়ের পাড় দিয়ে সাজায়।

আমাদের মতো অনেকেই ‘কুল’ টি-শার্ট বেছে নেয় অথবা নতুন ধারণা বা র‌্যালি করতে উদ্বুদ্ধ হয় যা প্রচলিত রীতিনীতিকে ভেঙ্গে দেয়। নান্সি পিপার আরো উল্লেখ করেন, কিছু কিছু উচ্চ-বিদ্যালয়ের ছাত্ররা টি-শার্টকে বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহার করে যে, এগুলো তাদের গলাকে বের করে রাখতে শার্টের থেকে উপযোগী। ব্যক্তিগত ভাবাবেগ প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে সে সময় থেকে টি-শার্টের ব্যাপক ব্যবহার হয়ে আসছে।

 

Related posts