শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬
যারা ৩০ লাখ শহীদের রক্তেরঞ্জিত পতাকা যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে তুলে দিয়েছে তাদেরও যুদ্ধাপরাধী বলে আখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এরা সমান অপরাধী। যুদ্ধাপরাধের দায়ে এদেরও বিচার হবে। এরা বিশ্বাসঘাতক। যতো ষড়যন্ত্রই হোক না কেন এদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না। কোনো ষড়যন্ত্রই তাদের বিচার রুখতে পারবে না।
১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট হলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মাঝখানে কিছুটা কালো মেঘ এসেছিল জাতির জীবনে। এখন সে মেঘ কেটে গেছে। আর কেউ যেন এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, এই ১৪ ডিসেম্বর সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাদের বেনয়েট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে, হাত-পা কেটে, গুলি করে, বুকের হাড় ভেঙে হত্যা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১২০০ মাইল দূর থেকে আসা পাক সেনারা এ দেশের রাস্তাঘাট, বাসা কোনো কিছুই চিনতো না। কিন্তু এ দেশে পাকিস্তানিদের দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসরা পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছে বলেই তারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালাতে পেরেছে। এই বেঈমানরা জাতিকে মেধাশূন্য করতেই বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে হত্যা করেছিল। যারা পাক বাহিনীকে সহযোগিতা করেছে তারা কখনই স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনি। তারা অনেকেই গর্ব করে বলেছিল, এ দেশ কখনই স্বাধীন হবে না। কিন্তু এ দেশের বীর বাঙালির কাছে তারা আত্মসর্মপণ করতে বাধ্য হয়েছে। তারপরও তারা থেমে নেই। এখনও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য কোনো দেশ স্বাধীন হলে তার ইতিহাস মানুষ জানতে পারে। কিন্তু ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃতি করেছে।
তিনি আরো বলেন, কোনো জাতি যদি তার প্রকৃত ইতিহাস জানতে না পারে সে জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। তারা ইতিহাস বিকৃত করেছে, সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে বঙ্গবন্ধু যাদের বিচার শুরু করেছিলেন সেনা আইন ভেঙে জিয়াউর রহমান তাদের মুক্ত করেছেন। জিয়া সত্যিকারের স্বাধীনতার ঘোষক হলে যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে মুক্ত করতে পারতেন না।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেকবার মৃত্যুর হাত থেকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন। গ্রেনেড হামলার সময় নেতারা মানবপ্রাচীর বানিয়ে আমাকে রক্ষা করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ মারাও গেছেন। সবাই বিশ্বাসঘাতক নয়। এদেশে অনেক ভালো মানুষ আছে। যে কারণে শত বাধা-বিপত্তির পরও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। দলের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে আছে বলেই সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় এসে কেউ যদি ভোগ করতে চায় তাহলে সে জনগণের সেবা করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই এ দেশের মানুষ কিছু পেয়েছে। ’৭৫ পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের চিন্তা-চেতনা ভালো ছিল না। কীভাবে লুটপাট করে খাওয়া যাবে, কীভাবে বিদেশ থেকে সাহায্য আসবে সেই চিন্তাই ছিল তাদের।
এদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অসৎ পথে কেন যাবেন। মারা গেলে তো সম্পদ আপনার সঙ্গে যাবে না। তাহলে কেন লুটপাট, কেন মারামারি, কেন হানাহানি।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ ক্ষমতায় আছি বলেই দৃশ্যমান উন্নয়ন হচ্ছে। যারা ত্যাগ করতে জানে তাদের ত্যাগ কখনই বৃথা যাবে না। আমরা এহিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব, কেউ আমাদের রুখতে পারবে না।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ গানের রচয়িতা আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেনের ছেলে শাহীন রেজানুর ও শহীদ ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ড. হাছান মাহমুদ। এ ছাড়া মঞ্চে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ, শেখ সেলিম, মতিয়া চৌধুরীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।