মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ও মিথ্যা খবরের নিন্দায় ডোনাল্ড ট্রাম্প

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১৩  জানুয়ারি  ২০১৭

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ও মিথ্যা খবরের নিন্দায় ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ও মিথ্যা খবরের নিন্দায় ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ভুয়া তথ্য’ প্রকাশ করায় দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের কড়া সমালোচনা করেছেন।

সেই সঙ্গে সিএনএনসহ কয়েকটি মার্কিন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা ‘রাশিয়ার কাছে তার জন্য নাজুক ও স্পর্শকাতর তথ্য আছে’ এমন খবরের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে তার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বুধবার এ প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বার্থের সংঘাত এড়াতে ব্যবসার বিষয় পুরোপুরি দুই ছেলের হাতে তুলে দেয়ার বিষয়টি জানানোর জন্যই বুধবার নিউইয়র্কে ট্রাম্পের দপ্তরে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল। তবে রাশিয়ার কাছে গোপন তথ্য থাকা, হ্যাকিং ইত্যাদি বিষয়ই এতে প্রাধান্য পায়।

তিনি বলেছেন, রাশিয়া তাকে কেলেঙ্কারিতে ফেলার মতো তথ্য সংগ্রহ করেছে বলে যে অভিযোগ এসেছে, তা হয়তো মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোই ফাঁস করে দিয়েছে।

একই সাথে সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের ওপরও রাগ ঝেড়েছেন ট্রাম্প।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি এটা মর্যাদাহানিকর, যেকোনো ভুয়া ও জাল তথ্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রকাশ করাটা মর্যাদাহানিকর।’

তিনি বলেন, অসুস্থ মানসিকতার লোকজনই এ ধরনের মিথ্যা খবর প্রচারের জন্য দায়ী। ট্রাম্প রাশিয়ার কাছে তার সম্পর্কে রগরগে তথ্যপ্রমাণ থাকা এবং রাশিয়ার সঙ্গে তার লোকজনের হাত মেলানোর যে খবর মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে, তাকে ‘ভুয়া’ বলে আখ্যায়িত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ফাঁস করার জন্য যদি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আসলেই দায়ী হয়ে থাকে, তাদের সুনামের ওপর একটি ‘বড়সড় কালির দাগ’ পড়ে যাবে।

২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব নিতে যাওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে ডাকা এ সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথা স্বীকার করেন যে এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ দিয়ে রাশিয়া সম্ভবত ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় কমিটি ও দলটির অন্য শীর্ষ কিছু নেতার ই-মেইল হ্যাক করেছিল।

নিউইয়র্কে নিজের অফিস লবিতে আয়োজিত এ জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি পুতিন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পছন্দ করেন, তাহলে আমি মনে করি, এটা একটা সম্পদ; কোনো দায় নয়।’

ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে নিজের সরে যাওয়ার বিষয়েও পরিকল্পনা তুলে ধরেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, এ জন্য তার যাবতীয় সম্পদকে একটি ট্রাস্টের আওতায় দিয়ে দুই বড় ছেলেকে তার দায়িত্ব দেবেন।

ট্রাম্প বলেন, তিনি হোটেল, গলফ কোর্সসহ শত শত অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। তবে হবু মার্কিন প্রেসিডেন্ট এও বলেন, তিনি চাইলে একই সঙ্গে ব্যবসা ও সরকার চালাতে পারবেন। তবে বিষয়টি তার পছন্দ নয়।

পর্যবেক্ষকেরা বলেছেন, ট্রাম্প ছেলেদের হাতে ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার যে ব্যবস্থার কথা বলছেন, তা স্বার্থের সংঘাত এড়ানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ওবামা আমলে একসময়ে হোয়াইট হাউসের নৈতিকতাবিষয়ক উপদেষ্টা নর্ম আইসেন বলেন, ট্রাম্পের এ বাজে পরামর্শজনিত কৌশল কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির সূচনা করবে।

এর আগে কয়েকটি গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে যে, তার নির্বাচনকালীন দল রাশিয়ার সাথে যোগাযোগ রেখেছে এবং তার ব্যক্তিগত জীবনের অশ্লীল কিছু ভিডিও রাশিার সংগ্রহে আছে। যদিও এসব অভিযোগের কোনটিই প্রমাণিত নয়।

তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এসব তথ্যকে বেশ গুরুত্ব দিয়েই ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট ওবামা উভয়ের কাছেই উপস্থাপন করেছে। কিন্তু এসব তথ্য গণমাধ্যমে আসার জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দিকেই সন্দেহের আঙ্গুল তুলছেন ট্রাম্প।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এসব তথ্যের বিষয়ে সংবাদ প্রচারের কারণে বাজফিড ও সিএনএনের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলেন। তার ভাষায়, এধরণের মিথ্যা তথ্য প্রকাশ নাৎসি জার্মানিতেই হত।

ট্রাম্প বলেন, ‘এধরণের কাজ নাৎসি জার্মানিই করত এবং তারা করেছেও। আমি মনে করি এটা একটা অমার্যাদকর বিষয়। ভুল এবং মিথ্যা তথ্য জনগণের কাছে প্রকাশ করা হয়েছে। একগাদা আবর্জনার মত বাজফিড এটা লিখেছে… তাদের এর পরিণাম ভোগ করতে হবে এবং তারা করছে।’

‘ট্রাম্পের এসব বক্তব্যের পর বিদায়ী ওবামা প্রশাসনের একজন মুখপাত্র জশ আর্নেস্ট বলেছেন, গোয়েন্দা সম্প্রদায় দেশের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজ করেন। এবং ট্রাম্প খুবই ভুলপথে গিয়ে তাদেরকে আক্রমণ করছেন।

গোয়েন্দা সংস্থা এবং গণমাধ্যমকে একহাত দেখে নেয়া ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে মেক্সিকোর সাথে সীমান্তে দেয়াল তৈরি নিয়েও কথা বলেন ট্রাম্প।

তিনি বলেন, দ্রুত তিনি এর নির্মাণকাজ শুরু করতে চান এবং মেক্সিকো পরে এর খরচ যুক্তরাষ্ট্রকে ফেরত দেবে।

ট্রাম্পের বক্তব্যের পর মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনা নিয়ে এক বক্তব্যে আবারো বলছেন, মেক্সিকো সেই দেয়ালের জন্য কোন টাকাই দেবে না।

 

Related posts