শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬
নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন মাত্র ১০-১৫ মিনিট সময় বের করে নিন। শুরু করে দিন ঘরে বসেই শরীর চর্চা।
ঘরে বসে করার মতো কিছু ব্যায়াম নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক বিশেষ আয়োজন ‘ইয়োগা ও বজ্রপ্রাণ’। আজ থাকছে বিশ্রামাসন।
সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে খুবই কার্যকরী বিশ্রামাসন। এ আসনটি বিছানায় শুয়েও করা যায়। যারা ব্যস্ততার জন্য কোনো ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন না তারা এটি করতে পারেন।
এ আসন করার সময় শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে শরীর পুরোপুরি শিথিল বা নরম করে দেয়া হয়। এ সময় চোখ বন্ধ থাকবে। হাত-পায়ের জড়তা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে শরীরের প্রতিটি কোষকে বিশ্রাম দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় শরীর থেকে নেগেটিভ এনার্জি বের হয়ে যায়। অক্সিজেনের প্রাণপ্রবাহে শরীর সতেজ ও ফুরফুরে হয়ে ওঠে। শরীরের প্রতিটি কোষে রক্তচলাচলে ভারসাম্য তৈরি হয়ে শরীর হয়ে ওঠে সুস্থ ও প্রাণবন্ত।
যেভাবে করবেন
প্রস্তুতি :
বিছানায় কিংবা ফ্লোরে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। পা দুটো লম্বা করে ছড়িয়ে দিন। চোখ বন্ধ থাকবে। হাত দুটো থাকবে শরীরের দুই পাশে। হাতের তালু ওপরের দিকে রাখুন।
ধাপ-১
আপনার চোখ বন্ধই আছে। গভীরভাবে ৩-৫ বার লম্বা দম নিয়ে ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। দম নেবেন পেটে। ছাড়বেন মুখ দিয়ে। দম নেওয়ার সময় ভাবুন প্রকৃতি থেকে অক্সিজেন আপনার শরীরে প্রবেশ করে আপনাকে সজীব ও প্রাণবন্ত করে তুলছে। দম ছাড়ার সময় ভাবুন আপনার শরীর থেকে দূষিত পদার্থ (কার্বন-ডাই-অক্সাইড) বেরিয়ে যাচ্ছে। অনুভব করুন মাথা থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি কোষ ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে যাচ্ছে।
ধাপ-২
এবার দম নেবেন বুকে। ফুসফুস ভরে দম নিন। ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। এভাবে ৩-৫ বার দম নিন ও দম ছাড়ুন। অনুভব করুন আপনার ভেতর থেকে সব ধরনের টেনশন বা দুশ্চিন্তা দূরীভুত হচ্ছে। সব ধরনের হতাশা ও মানসিক চাপ থেকে আপনি মুক্ত হচ্ছেন।
ধাপ-৩
এবার কোনোরকম প্রক্রিয়া অনুশীলন ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে দম নিন ও দম ছাড়ুন। খেয়াল করুন কীভাবে আপনার দম আসছে আর যাচ্ছে। পুরো মনোযোগ দিন কীভাবে আপনার দম আসছে আর যাচ্ছে তার ওপর। শুনুন আপনার নি:শ্বাসের শব্দ।
আর অনুভব করুন আপনার শরীর পুরোপুরি শিথিল অর্থাৎ নিস্তেজ হয়ে আছে, বেশ আরাম লাগছে। এবার কল্পনা করুন, আপনি একটি সুন্দর মনোরম পরিবেশে নরম সবুজ ঘাসের ওপর শুয়ে আছেন। এ সময় মন থেকে সকল দুশ্চিন্তা দূর করে দিন। কল্পনার রাজ্যে কিছুক্ষণ বিচরণ করুন। কল্পনায় ঘুরে আসতে পারেন আপনার প্রিয় কোনো স্থান পাহাড়, ঝরণা, সমুদ্র কিংবা ভালোলাগার অন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে। যেখানে গেলে আপনার মন ভালো হয়ে যায়। একটা প্রশান্তিভাব চলে আসে। এভাবে ঘুম চলে আসলেও কোনো অসুবিধা নেই।
উপকারিতা
* সারাদিনের কর্মব্যস্ত সময় শেষে মাত্র ১০ মিনিটের বিশ্রামাসন আপনাকে সতেজ ও চাঙ্গা করে তুলবে।
* যাদের ঘুমে সমস্যা তারা বিছানায় শুয়ে উল্লেখিত তিন ধাপে বিশ্রামাসন করতে করতে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন।
* গর্ভবতী মায়েদের জন্যেও এ আসন খুবই উপকারী। এতে তাদের শরীর-মন দুটোই ভালো থাকে।
* শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মনোযোগ বাড়াতেও এটি চর্চা করা যেতে পারে। বিশ্রামাসনের পর ফুরফুরে অনুভূতি নিয়ে পড়াশোনা করা যায়। এতে অল্প সময়ে অনেক পড়া শেষ করা যায়।
* নানারকম কাজের চাপে যাদের মেজাজ সবসময় কড়া হয়ে থাকে, নিয়মিত অনুশীলনের সুফল- অন্যদের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক তৈরি হবে।
* এছাড়া বজ্রাসন ও যোগব্যায়ামের প্রতিটি আসনের পর কিছুসময় বিশ্রামাসন করতে হয়। বিশ্রামাসন প্রতিটি ব্যায়ামের পর ৫-১০ মিনিট করতে পারেন। এ আসনের মাধ্যমে মস্তিষ্ক ও শরীরের প্রতিটি কোষে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয় ও রক্তচলাচল স্বাভাবিক থাকে। আর তাই বাড়ে মনোদৈহিক শক্তি ও কর্মক্ষমতা। যাদের উচ্চরক্তচাপ ও হার্টের সমস্যা আছে তারা এমনভাবে এটি চর্চা করুন যাতে ফুসফুসের ওপর খুব বেশি চাপ না পড়ে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি এ আসনটি করার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেন।
লেখক : ইয়োগা ও বজ্রপ্রাণ প্রশিক্ষক, বাংলাদেশ ব্যুত্থান ফেডারেশন