শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর খুনি অভিযুক্ত অপরাধীদের প্রত্যার্পণের ব্যাপারে জনমত তৈরির জন্য কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, কিভাবে একটি সভ্য দেশ অভিযুক্ত খুনিকে আশ্রয় দিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের সামনে এই দাবি রেখে যাচ্ছি, যে দেশে আপনারা বসবাস করছেন, সেই দেশের জনপ্রতিনিধিদের চিঠি লিখুন এবং এই চেতনাজাগ্রত করুন কেন এসব দেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের আশ্রয় দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শনিবার রাতে কানাডার সেন্টার মন্ট রয়েলে তাকে দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনায় এ কথা বলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কানাডা শাখা এই সংবর্ধনার আয়োজন করে।
আওয়ামী লীগ কানাডা শাখার সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ মাহমুদ মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক এবং আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরতে জনমত গঠন করুন’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতদূর আমরা জানি বঙ্গবন্ধুর এক খুনি যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আছে। একজন কানাডায়, দুইজন পাকিস্তানে এবং অপর দুইজন কোথায় আছে সন্ধান পাওয়া যায়নি, আমরা তাদের আটকের জন্য খুঁজছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সরকারকে বলেছে, কেন তারা খুনিদের লালন করছে এবং আশ্রয় দিচ্ছে।
তিনি বলেন, তারা বলেছে কানাডার সংবিধানে উল্লেখ আছে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ থাকলে তাকে তার দেশে ফেরত পাঠাবে না, ‘এটি কি ধরনের কথা’ বলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পিতা হারানোয় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা বাংলাদেশের নাগরিক এবং দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে। ‘কেন হত্যাকারীদের রক্ষার চেষ্টা হচ্ছে।’
কেন এই দেশগুলো হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধে অভিযুক্তদের আশ্রয় দিচ্ছে। যদি এই খুনিরা তাদের দেশের নাগরিক হতো তাহলে সেটি বিষয় হতো। যদি তারা হত্যাকারীদের আশ্রয় দিতে চায় তাহলে সব হত্যাকারী সেই দেশের আশ্রয় চাইবে। একথা উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, তারা কি তাহলে সকল খুনিদের আশ্রয় দেবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর অর্থ হলো- যে দেশে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির বিধান নেই, সেই দেশ হত্যাকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এ জন্য জনমত সৃষ্টিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামনে আমি এই প্রশ্ন রেখে গেলাম।
তিনি বলেন, তার সরকার ১৯৯৬ সাল থেকে পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর হওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বাধার সম্মুখীন হয়েছে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধকালে যারা ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে সেই ঘৃণ্য খুনিদের বিচার বন্ধের জন্য অনেক বড় জায়গা থেকে তিনি টেলিফোন পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি যে, আমাদের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন এবং এখানে আমাদের দেশের আইন রয়েছে এবং আইন অনুযায়ী রায় কার্যকর হবে।’
প্রবাসী বাংলাদেশিদের সন্তানরা যাতে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে আরো সতর্ক থাকার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কেউই আশা করে না যে তারা (সন্তানরা) জল্লাদের মতো কাজ করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের সন্তানদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলবো তারা কি করে, কোথায় যায় এবং তারা কাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশছে- এই দায়িত্ব অভিভাবক, শিক্ষক ও ইমাম সকলের- এক্ষেত্রে সবার দৃষ্টি রাখতে হবে।
তিনি বলেন, কেউ এটি আশা করে না যে, স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান যাকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে জল্লাদের মতো কাজ করবে।
গুলশানে হলি আর্টিসান বেকারিতে কাপুরুষোচিত হামলার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ১ জুলাই গুলশানের ওই ক্যাফেতে জঙ্গিরা কি রকম জঘন্যভাবে মানুষ হত্যা করেছে। এটি কল্পনা করা যায় না। একজন সুস্থ মানুষ কি করে এভাবে মানুষ হত্যা করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা গুলশানে হামলা চালিয়েছে তারা কানাডা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যত্র পড়াশোনা করেছে। সবাই আশা করে যারা বিদেশে পড়াশোনা করছে তারা উদার মনের হবে। এখন মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে কিভাবে তারা চরমপন্থায় এবং ইসলামের অপব্যাখ্যার সঙ্গে যুক্ত হলো।
শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম তবে ইসলামের নামে কিছু মহল ইসলামকেই হেয় করছে। আল্লাহ শেষ বিচারের মালিক এবং আল্লাহ এই দায়িত্ব কাউকে দেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ দমন করে তার সরকার যখন দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তখনই গুলশান ক্যাফেতে হামলার ঘটনা ঘটে। এটা অপ্রত্যাশিত যে এই ঘটনা আমাদের অগ্রগতিকে থমকে দিয়েছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বিশ্ব জুড়ে এ ধরনের কিছু ঘটনা ঘটেছে, বাংলাদেশ এর বাইরে ছিল তবে গুলশান হামলা বিনিয়োগের পাশাপাশি আমাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টা থমকে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্ব যা করতে পারেনি, বাংলাদেশ তা করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা ১০ ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসীদের ধরেছি এবং ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করেছি।’
জঙ্গিদের বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারাই নতুন করে হামলার পরিকল্পনা করেছিল তাদের আটক করা হয়েছে। আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। জঙ্গিবাদের অবসানে আইনশৃঙ্খলা সংস্থাগুলো আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ একক কোনো দেশের সমস্যা নয়, এটি এখন বিশ্বব্যাপী সমস্যা। ‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর থেকে বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদের শিকার হচ্ছে।’
তিনি বলেন, বাংলাভাই রাজশাহীতে পুলিশ পাহারায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মিছিল করেছে এবং বিএনপি-জামায়াত শাসনকালে দেশের মানুষ এ ধরনের পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছে। ২১ আগস্ট আমাকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে এবং বিএনপি-জামায়াতের অপশাসনকালে এ এম এস কিবরিয়া ও আহসানউল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করা হয়েছে এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।
তিনি বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে এবং জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করছে এবং এতে বিএনপি-জামায়াতের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান।