প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার কঠোর সমালোচনায়

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ২২  জানুয়ারি  ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার কঠোর সমালোচনায়

প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার কঠোর সমালোচনায়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উনিতো শহীদ দিবসের মর্যাটাই নষ্ট করে দিয়ে আসলেন । শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়া সদলবলে মূল বেদীতে উঠে পড়ার কঠোর সমালোচনা করেন ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া এবার যে অপকর্মটা করে আসলেন- আমাদের অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি, শহীদ দিবসের মর্যাটাই নষ্ট করে দিয়ে আসলেন।’

তিনি বলেন, ‘যেখানে রাষ্ট্রপতি, তিনি এবং স্পীকারসহ আরো অনেকেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন, বিএনপি নেত্রী সদলবলে ঠিক ওই জায়গাটায় উঠে দাঁড়িয়ে গেছেন ফুল দিতে।’

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, মূল বেদীর ওপর ফুল দেয়ার স্থানে যদি উঠে দাঁড়িয়ে যান তাহলে ফুলটা দিলেন কোথায়? নিজের পায়ের কাছে দিয়ে আসলেন, সেটাই প্রশ্ন।

শেখ হাসিনা আজ রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা শহীদ মিনারের বেদীতে উঠে যায়। জানে না, কোথায় ফুল দিতে হবে। এ দেশের সংস্কৃতির মর্যাদা তারা কি করে দেবে, দিতে পারে না। কারণ, তাদের মনেতো স্বাধীন বাংলাদেশ নাই। তাদের মনেতো রয়ে গেছে ১২শ’ মাইল দূরের পেয়ারে পাকিস্তান।’

তিনি বলেন, আমার আরো দুঃখ লাগেÑ কারণ, সাংবাদিকেরা ওই জায়গাটায় (মূল বেদীতে) আগে ছবি তোলার জন্য উঠে দাঁড়াতো দেখে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে এবং নিজেও উদ্যোগ নিয়ে সেই বরাবর পেছনে একটি মাচা তৈরীর ব্যবস্থা করি। যেখান থেকে শহীদ মিনারের বেদীতে না দাঁড়িয়েই তারা ছবি তুলতে পারেন।

শহীদ মিনারের বেদীর পেছনে থাকা পলাশ ফুল গাছটির প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া থেকে চারা এনে সেখানে ওই গাছ লাগিয়েছিলাম, যেখানে আজ পলাশ ফুল ফোটে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও তারা বলছেন, এই অভিযোগ ঠিক নয়, কিন্তুু এখনতো ক্যামেরায় সবকিছু ধরা পড়ে। ওইখানে সিসি ক্যামেরাও ছিলোÑ সাংবাদিকদের ক্যামেরাও ছিল, তার দলের লোকেরাও ছবি তুলেছে। এটাতো এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় পুরো দেখা যাচ্ছে, তারা কি করেছেন।

এ সময় মধ্যরাতে যাবার কারণে বেগম জিয়ার ভুল হলেও দলের নেতা-কর্মীরা কেন তার নজরে বিষয়টি আনেননি, সে প্রশ্নও উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদের একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, অতীতে উনি যেতেন বেলা ১১টার দিকে ফুল দিতে। তখন কিন্তুু ওই বেদীর ফুল তুলেও ওনার দলের নেতা-কর্মীরা তার ওপর বর্ষণ করতো। এটা নিয়ে যখন লেখালেখি হলো তখন তা বন্ধ হলো।’

সরকার প্রধান বলেন, আর ভাষার প্রতিতো তাদের কোন সম্মানই নাই। কারণ, তারা যেভাবে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃতি করেছে। না হলে ওই শহীদ মিনার যাকে পবিত্র জায়গা আমরা মনে করি, যে শহীদ ভাইয়েরা বুকের রক্ত দিয়ে আমার মাকে মা বলে ডাকার সুযোগ করে দিয়েছে, তার বেদীর ওপর কিভাবে দলবল নিয়ে উঠে গিয়ে সেই স্থানকে অপবিত্র করেছে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মেরিনা জাহান আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন। বিশিষ্ট কবি নির্মলেন্দু গুণ তার একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিুল ইসলাম সভা পরিচালনা করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ’৫২-এর মহান ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার প্রশ্ন উত্থাপন সম্পর্কে বলেন, আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য যে, একটি প্রতিষ্ঠিত সত্যের বিরুদ্ধে যখন আমাদের দেশের কেউ বলে যে, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ লোক মারা যায় নাই। পাকিস্তানীরা না হয় বলতে পারে। কারণ, তারা পরাজিত হয়েছে। কিন্তুু, যিনি এ দেশের একজন প্রতিষ্ঠিত নেতা হয়ে গেছেন, দু’বারের প্রধানমন্ত্রী, তিনি কিভাবে এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যদিও তিনি (খালেদা জিয়া) নিজেকে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন। যাকে ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দেড় মাসের মধ্যে জনগণের ভোটচুরির অপরাধে জনগণ পদত্যাগে বাধ্য করেছিল- সেও যখন বলে ৩০ লাখ শহীদ হয় নাই- তাহলে বোঝা যায় তার এখনো পাকিস্তান প্রীতি কতটা।

তিনি বলেন, যারা ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে- তাদের কাছ থেকে কি ভাষা, কি সাহিত্য বা সংস্কৃতি আশা করা যায়Ñ আপনারাই বিচার করে দেখেন। এদের কাছে এসবের মূল্যই নাই, তাদের কাছে ক্ষমতা হচ্ছে- নিজেদের ভাগ্য গড়ার ও ভোগের বস্তু।

জিয়াউর রহমান হত্যার পর মিডিয়ায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়ার ব্যক্তিগত সম্পদ সম্পর্কে অপপ্রচার ‘ভাঙ্গা স্যুটকেস ও ছেড়া গেঞ্জির’ প্রসংগ্য তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের জীবন শুরুই হয়েছে ভাঙ্গা স্যুটকেস আর ছেড়া গেঞ্জি নিয়ে, তারা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে আরাম আয়েশে জীবন কাটাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘এই টাকা কোথা থেকে এলো। এসেছে গরীবের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে। এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। এ দেশের মানুষের কথা বলে বাইরে থেকে টাকা এনে লুটপাট, দুর্র্নীতি করেইতো তারা এই অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রায় ৫৩ মিনিটের ভাষণে ১৯৪৮ সাল থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনের সূচনা উল্লেখ করে সমগ্র ভাষা আন্দোলনের ইতিবৃত্ত, স্বাধিকার আন্দোলন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এ দেশীয় রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের সহযোগিতায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গণহত্যার তথ্য তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর কানাডা প্রবাসী প্রয়াত রফিকুল ইসলাম, আব্দুস সালাম এবং ইন্টারন্যাশনাল ল্যাংগুয়েজ লাভার্স এসোসিয়েশনের সহযোগিতায় তাঁর সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষ দিবস ঘোষণার তথ্য-উপাত্ত ও উপস্থাপন করেন।

শেখ হাসিনা সেগুন বাগিচায় আন্তর্জাতিক ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে শুধু বাংলা নয়, পৃথিবীর হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষা নিয়ে গবেষণায় তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে মাতৃভাষা বাংলার ব্যবহারে সকলকে আরো আন্তরিক হবার আহবান জানান।

তিনি বলেন, ‘ইংবেজী ধ্বনি ব্যবহার করে বা ইংরেজী অ্যাকসেন্টে বাংলা বলা যাবে না। এ জায়গা থেকে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে সরিয়ে আনতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী এবারের একুশে ফেব্রুয়ারি সুষ্ঠুভাবে পালনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এবার একুশের আয়োজনে সারাদেশেই জন¯্রােত নেমেছিল। …সবসময়ই চিন্তাটা ছিল কোথায় কি হয়, না হয়। তবে, শান্তিপূর্ণভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হওয়ায় পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ।’

ভাষণের শেষ অংশে প্রধানমন্ত্রী তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত এবং শান্তিপূর্ণ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগ ও তাঁর সহযোগী সংগঠন তথা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল শক্তিকে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করার আহবান জানান।

কানাডার একটি আদালতে বিএনপি’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে উল্লেখ করে দলের উপদেষ্টা মন্ডরীর সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বেগম জিয়া হয়তো অতি উৎফুল্ল হয়ে শহীদদের বেদীতে উঠে গিয়ে থাকতে পারেন। কারণ, আজকে তাকে কানাডার একটি কোর্ট সার্টিফিকেট দিয়েছে বিএনপি সন্ত্রাসী-বোমাবাজদের সংগঠন।

 

Related posts