প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে ১৯ বুদ্ধিজীবীর বিবৃতি

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ৬  এপ্রিল  ২০১৭

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে ১৯ বুদ্ধিজীবীর বিবৃতি

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে ১৯ বুদ্ধিজীবীর বিবৃতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ এপ্রিল ভারত সফরে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর সম্পর্কে দেশের ১৯ বুদ্ধিজীবীর বিবৃতি দিয়েছেন। বুধবার সংবাদ মাধ্যমে এ বিবৃতি পাঠানো হয়।

বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ‘কথা উঠেছে, এই সফরকালে ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি ও সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। অথচ বাংলাদেশ সরকার এসব স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে জাতিকে স্পষ্ট করে কিছুই বলছে না। ফলে উৎকণ্ঠা বেড়ে চলছে।

তার সফরের তারিখ একাধিকবার পরিবর্তন হয়েছিল। তার সফরকে কেন্দ্র করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শংকর, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর এবং ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান বাংলাদেশ সফর করেছেন। এসব সফর এবং ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবর নানা জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় গণমাধ্যমের সূত্র ধরে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সুধীসমাজের মধ্য উদ্বেগ সঞ্চার হয়েছে।

বর্তমান সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সর্বোচ্চ শিখরে রয়েছে বলে দুই দেশের সরকারি মহল থেকে একাধিকবার দাবি করা হয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তা সমস্যার সংকট লাঘব করে ঘোষণা দিয়েছে, ভারতের বৈরী কোনো শক্তিকে বাংলাদেশের মাটিতে থাকতে দেবে না। নামমাত্র মাশুলের বিনিময়ে ভারতকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বহুমুখী ট্রানজিট সুবিধা, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ঝুলিয়ে রাখা স্থল সীমান্ত সমস্যার সমাধান হলেও দুই দেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যার কোনো সমাধান আজও হয়নি।

বহুল আলোচিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হবে হচ্ছে বলে ঘোষণা দেওয়া হলেও, বাংলাদেশের পানিসম্পদমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, এবার তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না। সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের হাতে প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশি খুন হচ্ছেন। দুই দেশের মধ্যে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা অদ্যাবধি দূর করা হয়নি। বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স প্রতিবছর এ দেশে কর্মরত ভারতীয় নাগরিকদের হাত দিয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে।

এখন কথা হলো, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যদি সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেই থাকে তাহলে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি করার কী প্রয়োজন তা বোধগম্য নয়।

বাংলাদেশকে ভারত থেকে অস্ত্র কেনার জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। অথচ ভারত নিজেই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। ফলে পরিষ্কারভাবে বলা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পরিপূরক করে তোলাই এসব আয়োজনের উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে অন্য কোনো রাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করানোর একটি সুচতুর প্রয়াস আছে বলে আমাদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া এই প্রতিরক্ষা চুক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা। এতে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

ভারত নিয়েছে অনেক কিন্তু দিয়েছে খুবই সামান্য। আমরা আশা করব, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় ঋণ পরিশোধে ভারত এগিয়ে আসবে। আমরা আরো বলতে চাই, চুক্তির বিষয়াবলী অস্বচ্ছ রেখে ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা কিংবা সমঝোতা চুক্তি কার্যত সৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে না।

আমরা ভারতকে বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী হিসেবে পেতে চাই। যেমনটি ঘটেছিল ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়। চুক্তির চেয়ে সদ্ভাবের মূল্য অনেক বেশি। আমরা আশা করব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য হানিকর কোনো চুক্তি করবেন না। এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।

 

Related posts