পাহাড়ি মেয়েদের চাওয়া বাঙালি ছেলে

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম ।  ২৮  ডিসেম্বর  ২০১৬

পাহাড়ি মেয়েদের চাওয়া বাঙালি ছেলে

পাহাড়ি মেয়েদের চাওয়া বাঙালি ছেলে

ভালোবাসা মানে না কোনো বাধা, মানে না ধর্ম, বর্ণ বা জাতের ভেদাভেদ। সুযোগ পেলেই বাঙালি ছেলেদের প্রেমে হাবুডুবু খায় পাহাড়ি মেয়েরা। অবশেষে নিজের সমাজ সংস্কৃতি এবং পৈত্রিক ধর্ম বিসর্জন দিয়ে প্রিয়তমের সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় কথিত আঞ্চলিক সংগঠন এবং সন্ত্রাসীরা।

এসব পাহাড়ি নারীদের চাওয়া এবং পাওয়ার মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে ভিলেনের ভূমিকায় অবর্তীণ হয় পার্বত্য অঞ্চলের  সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর নেতারা। নিজেদের জাত রক্ষার নামে পাহাড়ি এবং বাঙালি উভয় পরিবারের উপর চালায় অবর্ণনীয় নির্যাতন, কখনো কখনো বিবাহিত তরুণীকে অপহরণ করে নিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণ করে এবং মিথ্যা জবানবন্দি গ্রহণ করে। এমনকি হত্যার হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করে নেয়। এসব বাধা উপেক্ষা করেই পাহাড়ি তরুণীরা বাঙালি ছেলেদের বিয়ে করেই চলেছে। শত বাধা বিপত্তি এড়িয়ে দিনে দিনে পাহাড়ি নারী এবং বাঙালি পুরুষের মাঝে বিয়ের প্রবণতা বাড়ছেই।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আজ থেকে ১২ বছর আগে বাঙালি তরুণ জামাল উদ্দিনের প্রেমে পড়ে মারমা তরুণী মিনিরওজা মারমা, অবশেষে ভালোবেসে ইসলাম ধর্ম অনুসারে হয়ে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন দু’জনে। সঙ্গে সঙ্গে তার উপজাতীয় নাম পরির্তন করে আয়েশা সিদ্দিকা রাখা হয়। বর্তমানে তাদের দু’টি সন্তান রয়েছে। সুখে-শান্তিতেই ছিল তাদের বৈবাহিক সংসার। কিন্তু দীর্ঘ এক যুগ (১২ বছর) পরও তাদের এই বিয়ে এবং ভালোবাসাকে মেনে নিতে পারেনি কথিত আঞ্চলিক সংগঠনের সন্ত্রাসীরা।

গত ৮ নভেম্বর স্থানীয় গিলাছড়ি বাজার থেকে আয়েশা সিদ্দিকাকে তুলে নিয়ে যায় উপজাতি সন্ত্রাসীরা। তাকে নিয়ে একদিন, এক রাত আটকে রেখে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। চোখ বেঁধে ও গলায় শিকল বেঁধে রেখে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়েছে। কেন ভিন্ন ধর্মের ছেলেকে বিয়ে করেছে? কেন বাঙালি পুরুষকে বিয়ে করেছে? এসব প্রশ্নে জর্জরিত করা হয় এই নারীকে।

গলায় ধারালো ছুরি ধরে আয়েশার কাছ থেকে মিথ্যা বিবৃতি রেকর্ড করে স্বীকারোক্তি নিয়েছে সন্ত্রাসীরা। রেকর্ড করার সময় স্বামী-শ্বশুর তাকে নির্যাতন করে এমন কথা বলতে বাধ্য করা হয় বলেও জানান তিনি। আর এসব কথা রেকর্ড করেছে সন্ত্রাসীরা। অবশেষে নিরাপত্তা বাহিনীর চাপে সন্ত্রাসীরা তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু ভয়ে এ বিষয়ে থানায় কোন মামলাও দায়ের করার সাহস পায়নি ওই পরিবার।

সন্ত্রাসীরা তাতেও ক্ষান্ত হয়নি, তার শ্বশুরের আনরস বাগানের প্রায় ৮২ হাজার আনারস কেটে নষ্ট করে দিয়েছে। তবুও সুন্দর সংসার করার আশা নিয়ে বাঙালি ছেলেদের ভালোবাসে পাহাড়ি নারীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাহাড়ি নারীরা রাত-দিন পরিশ্রম করে সংসারের ঘানি টানে। আর পুরুষরা ঘুরে বেড়ায়, মাতাল হয়ে পড়ে থাকে, ঘরে বসে হুক্কা টানে। ঘরে-বাইরে সকল কাজ করে সংসার সামলায় উপজাতি নারীরা। পুরুষরা শুধুই আরাম আয়েশ করে। কেউবা সতীনের সঙ্গে নিজের সোনার সংসার ভাগ করতে বাধ্য হয়। তারপরেও স্বামীর নানারকম নির্যাতনও সহ্য করতে হয় নারীদের।

 

অন্যদিকে বাঙালি ছেলেদের সঙ্গে বিয়ের পর সংসারের সকল কাজ করে পুরুষরা, নারীরা শুধু সংসার গোছানোর সহজ কাজগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারে। সেইসঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতিতে পরিচ্ছন্ন জীবনে উন্নত ভালোবাসা পেয়ে সুখী সংসার করে তারা। এসব খবর উপজাতি নারীরদের নিকট ছড়িয়ে পড়ায় পাহাড়ের উপজাতি সকল তরুণীর মনে মনে পছন্দের পুরুষ হয়ে উঠে বাঙালি তরুণরা। তাই ভালোবেসে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয় তারা।

কিন্তু পাহাড়ি কথিত আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর ছেলেদেরকে মেয়েরা পছন্দ না করার কারণে সন্ত্রাসীরা ফুঁসে ওঠে। ভালোবাসা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়ে নারীদের ধর্ষণ করার জন্য ভিলেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তারা। পুলিশ প্রশাসন কঠোর হয়েও তাদের দমন করতে পারছে না।

সূত্র জানান, এর আগে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে ভালবেসে এক বাঙালি ছেলেকে বিয়ে করার অপরাধে খাগড়াছড়ির গুইমারার এক মারমা তরুণী ও তার পরিবারকে নির্যাতন ভোগ করার পরও মোটা অংকের চাঁদা গুনতে হয়েছে। তাকে একটি কক্ষে বেঁধে রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়।

২০১৫ সালের শুরুর দিকে ভালবেসে চাকমা মেয়েকে বিয়ে করাই কাল হয় একটি প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকের স্টাফ (ফটোগ্রাফার) আলোকচিত্র সাংবাদিকদের। অপরদিকে ভালবাসার মানুষকে ভুলে যেতে চাকমা নারীর (সাংবাদিদের স্ত্রীর) উপর চলে নির্মম পাশবিকতা। যা মধ্যযুগীয় র্ববরতাকেও হারা মানায়। ওই নারীকে তোলা হয় নিলামে। যা ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রকাশ করা হয়েছে গণমাধ্যম গুলোতে। কিন্তু তাকে রক্ষা করা যায়নি।

সবচেয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করা ঘটনা ঘটে গত বছরের এপ্রিলে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায়। উপজেলার এক ত্রিপুরা মেয়ে ভালবেসে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার আহমদ কবীরের ছেলে আবদুল হান্নানের (২৪) সঙ্গে। ভালোবাসার টানে একদিন প্রেমিক হান্নানের হাত ধরে শহরের যাওয়ার সময় বাস থেকে নামিয়ে ওই ত্রিপুরা মেয়ে ও বাঙালি হান্নানকে অপহরণ করে পিসিপির কর্মীরা।

অপহরণের পর ঘরে আটকে রেখে ত্রিপুরা মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে পিসিপির স্থানীয় কয়েকজন নেতাকর্মী। গণধর্ষণের পর গভীর রাত পর্যন্ত মেয়েটিকে নিয়ে উল্লাস করে এসব সন্ত্রাসী। পুরো গণধর্ষণের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করা হয়। এ ঘটনায় আটক ইউপিডিএফ সমর্থিত পিসিপির নেতা সজীব ত্রিপুরা (২২) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানায়।

এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি মুসলমান ছেলেদের বিয়ে করার কারণে মাটিরাঙা, রাঙামাটির কুতুকছড়ি ও রামগড়ের কয়েকটি ঘটনাসহ এরকম আরও অসংখ্য পাহাড়ি মেয়েকে অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যাসহ বিভিন্ন নারকীয় অজ্ঞতার শিকার হতে হয়েছে।

সম্প্রতি পাহাড়ি তরুণীদের নিজ জাতি-গোষ্ঠীর লোকদের হাতে এরূপ নির্বিচারে গণধর্ষণের শিকার হওয়া নিয়ে গবেষণাধর্মী উপন্যাস বের করেন লেখিকা রোকেয়া লি। চলতি বছরের শুরুর দিকে ‘ডুমুরের ফুল’ নামে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বইটি বের করার ফলে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয় তাকে।

 

রাঙামাটির বিলাইছড়ির কেরণছড়ি মৌজা কার্বারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অংচাখই কার্বারী জানান, কোনো পাহাড়ি মেয়ে বাঙালি ছেলেকে বিয়ে করলে উপজাতিদের সামাজিক নিয়মে কোনো শাস্তির বিধান নেই। তবে আমরা এক্ষেত্রে কার্বারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সাধারণত ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে থাকি। এরপর তাদের একত্রে বসবাসে সমস্যা নেই।

স্থানীয়রা অধিবাসীরা মনে করেন, পাহাড়ি ছেলেরা ঠিকমত লেখাপড়া করে না, কাজকর্ম করতে চায় না, তারা পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সংগঠনে জড়িয়ে চাঁদা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে, তাই উপজাতি মেয়েরা পাহাড়ি ছেলেদের পছন্দ করে না। তাদের সঙ্গে বিয়েতে এ কারণেই তাদের আগ্রহও থাকে না।

 

Related posts