নিখোঁজ জঙ্গি জুন্নুনের ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা লেনদেনের তথ্য গোয়েন্দা কব্জায়

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ২০  জুলাই  ২০১৬

নর্থ সাউথের সাবেক এ শিক্ষার্থী তরুণদের রিত্রুদ্ধটের দায়িত্বে ছিল * ইয়েমেন ও ঢাকায় গ্রেফতার রেজওয়ানের ঘনিষ্ঠ

নিখোঁজ জঙ্গি জুন্নুন শিকদারের ব্যাংক হিসাবে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। পাকিস্তান ও ইয়েমেন ফেরত জঙ্গিদের সঙ্গে এই টাকা বিনিময় হয়েছে এমন তথ্যও পাওয়া গেছে। বেসরকারি ব্যাংকের হিসাব থেকে এই টাকা লেনদেন হয়। এ সংক্রান্ত সব তথ্য খতিয়ে দেখছে আইনশৃংখলা বাহিনী।

নিখোঁজ জঙ্গি জুন্নুনের ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা লেনদেনের তথ্য গোয়েন্দা কব্জায়

নিখোঁজ জঙ্গি জুন্নুনের ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা লেনদেনের তথ্য গোয়েন্দা কব্জায়

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথের সাবেক শিক্ষার্থী এই জঙ্গি। তরুণদের দাওয়াতি কার্যক্রমের মাধ্যমে উগ্রপন্থী দলে ভেড়ানোই তার প্রধান কাজ। পরিবারের পক্ষ থেকে র‌্যাব ও পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানানো হয়েছে জুন্নুন নিখোঁজ। তবে সে যে জঙ্গিদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে এ তথ্য দেয়া হয়নি।

বিভিন্ন মামলার নথিপত্র ও তালিকা অনুসন্ধান করে উগ্রবাদী এ যুবকের নিখোঁজ থাকার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ, র‌্যাব, সিটি ইউনিটসহ সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিখোঁজদের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে এদের মধ্যে জুন্নুনের নাম ও ছবিও আছে।

আইনশৃংখলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) ও হিজবুত তাহরিরের (এইচটি) সঙ্গে প্রথম থেকে জড়িত এমন জঙ্গিদের সঙ্গে জুন্নুনের সম্পর্ক আছে। এদের মধ্যে দু’জন একসময় বিদেশে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতেও ধরা পড়েছিল। পড়ে মুক্তি পেয়ে দেশে এসেছে। জুন্নুনের ব্যাংক হিসাব থেকে তালিকাভুক্ত ভয়ংকর জঙ্গিদের ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠানোর তথ্য পাওয়া যায়।

অর্থপ্রদানকারী জুন্নুন শিকদার নিজেকে একজন ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু কী ধরনের ব্যবসা ছিল সে বিষয়ে ব্যাংকের কাগজপত্রে তার উল্লেখ নেই। তবে জুন্নুন শিকদারের ঠিকানা দেয়া হয়েছে রাজধানীর হাজারীবাগের মনেশ্বর রোডের। তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ২৬৯১৬৪৮০৮৫৫০৫। বেসরকারি ওই ব্যাংক হিসাবের (১০১১০১১৪০৩৯১) তথ্যে আরও দেখা যায়, জুন্নুনের জন্ম ১৯৮৭ সালের পহেলা জুন।

ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেফতার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, এহসান রেজা রুম্মান, মাকসুদুল হাসান অনিক, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজ ও সাদমান ইয়াছির মাহমুদের কাছেও জুন্নুনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। এবিটিতে নতুন নতুন লোক রিক্রুট ও দাওয়াতি কার্যক্রমে জড়িত ছিল এই জুন্নুন। আর এবিটির তৎকালীন প্রধান কারাবন্দি মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানীর হাত ধরেই সে এ পথে আসে।

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, নিখোঁজ জঙ্গিদের অনেকেই বিভিন্ন সময় আটক বা গ্রেফতার হয়েছিল। ব্লগার রাজীব হায়দার শোভনকে হত্যার পর এবিটির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নয় যুবককে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট আইনশৃংখলা বাহিনী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এদের গ্রেফতার করে। এক বছর পর এদের মধ্যে সাতজন জামিনে মুক্তি পায়।

এরপর থেকে এদের আর খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ ও র‌্যাব। এরা হচ্ছে- রেজওয়ান শরীফ, আলী আজাদ, নাইমুল হাসান নাইম, সাইফুল, আমিনুল, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ও জুন্নুন শিকদার। এ তালিকায় থাকা জুন্নুন নিখোঁজ বলে পরিবারের দাবি। কিন্তু অনুসন্ধানে পাওয়া যাচ্ছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। ওই সময় গ্রেফতার জুন্নুন শিকদার জামিনের পর রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায় আতরের ব্যবসা শুরু করে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য আছে। জামিনের পর কিছুদিন সে চুপচাপ থাকলেও পরে আগের মতোই উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ে।

নিখোঁজ এ জঙ্গির বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে গোয়েন্দারা আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। বিশেষ করে তার সঙ্গে যাদের উঠাবসা ছিল তাদের অধিকাংশই ভয়ংকর শ্রেণীর জঙ্গি। জুন্নুনের সঙ্গে ওই সময় গ্রেফতার রেজওয়ান শরীফ ২০১০ সালে ইয়েমেনে আল কায়দাবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হয়েছিল। ওই অভিযানে রেজওয়ানের দুই ভাই জঙ্গি মাইনুদ্দীন শরীফ ও তেহজীব করিমও ধরা পড়েছিল।

পশ্চিমা গোয়েন্দারা এদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। তেহজীব করিমের ভাই রাজীব করিমকে ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রগামী ব্রিটিশ এয়ারের বিমান উড়িয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার তথ্য দিয়েছিল বিদেশী একটি সংস্থা। রাজীব করিম প্রথম থেকেই জেএমবিতে যুক্ত ছিল।

২০১৩ সালে গোয়েন্দা পুলিশ এবিটির বেশ ক’জনকে গ্রেফতার করে এর মধ্যে রেজওয়ান শরীফ অন্যতম। এছাড়া, জুন্নুনের দলে থাকা নাইমুল হাসান নাঈম পলাতক জঙ্গি ইজাজ হোসেনের ভাই। ইজাজ পাকিস্তানে ছিল বলে জানা যায়। এদের চলাফেরা একই সূত্রে গাঁথা।

গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, ২০১৩ সালের দিকে জুন্নুন শিকদার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল। পরে সে দাওয়াতি কার্যক্রম প্রচারের উদ্দেশ্যে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে ভর্তি হয়। তখন জেএমবির রেজওয়ান শরীফ এবিটির প্রধান জসিম উদ্দিন রাহমানীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এরা একসঙ্গে কাজ করে। আর জুন্নুনের দলের নাঈম আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কম্পিউটারসংক্রান্ত টেকনিক্যাল দিক দেখত। সাইফুল, জাহিদ ও আলী আজাদ মুফতি জসিম উদ্দিনের বক্তব্য এবং ছবি আপলোডসহ দেশ-বিদেশে তথ্য আদান প্রদানে জড়িত ছিল।

এ চক্রের জঙ্গিদের অর্থ আদান প্রদানের মাধ্যম হিসেবে কাজ করত জুন্নুন। বর্তমানে গোয়েন্দারা তার ব্যাংক হিসাবের পাশাপাশি পুরো নেটওয়ার্ক কব্জায় নেয়ার চেষ্টা করছে। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেছে।

 

Related posts