শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬
আমার এক ফেসবুক বন্ধু তার এক বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার কথা তার ফেসবুক পেইজ এ লিখেছেন যা হবুহু তুলে ধরা হল ।
আমার পরিবারের সবার পাসপোর্ট আজ ডেলিভারি নিয়ে আগারগাও থেকে রিকশা যোগে লালমাটিয়ার দিকে যাওয়ার পথে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের ঠিক পেছনে তাজমহল রোডে ঢোকার মুখে বজ্র কন্ঠে–এই রিকশা দাড়াও,শুনে রিকশা থামালাম,তখন বাজে বিকাল ৪ টা…..তারপরই শুরু হাসির কিন্তু চরম বিরক্তিকর নাটকের! এস আই সেলিম(যতদূর মনে পরে)র ৫ সদস্যের টহল পুলিশের দল ঘিরে ধরলো আমাকে, উদ্দেশ্য চেক করবে,আমি বাড়িয়ে দিলাম সহযোগীতার হাত–নিজেই পকেট থেকে বের করে দিলাম সব কিছু,কিন্তু তারা সন্তুষ্ট না,নিজেরাই হাত ঢুকিয়ে চেক করবে-রাজী হলাম,ভাগ্যিস প্যান্টের বেল্ট পরা ছিলো,নাহলে ইজ্জতের দফা-রফা হয়ে যেত। আমার পকেটে যা ছিলো তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হোল ৪টি পাসপোর্ট -যেগুলো বের করে দেয়ার সাথে সাথেই একজন কনষ্টেবল খপ করে আমার এক হাত ধরে ফেললো এমনভাবে যেন জংগী তামিম চোউধুরীর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড কে ধরে ফেলেছে! পরিচয় জিজ্ঞাসা করায় আমার প্রথম শ্রেণীর সরকারী চাকরির পরিচয়ে তাদের সন্দেহ ঘনীভুত হয়ে কালো মেঘের আকার নিলো,এমন সময় আরো তিনজন আনসার দলে যোগ দিয়ে শক্তিবৃদ্ধি করলো,শুরু হোল জেরা–প্রশ্ন:আপনার কাছে এতোগুলো পাসপোর্ট কেন? উত্তর:এই মাত্র ডেলিভারি নিয়ে আসলাম। প্রশ্ন:এগুলো সহ আপনাকে থানায় নিয়ে যাচাই-বাছাই করতে হবে? উত্তর:ক্যানো,এই দ্বায়িত্ব কি আপনাদের? পুলিশের উত্তর:এতোগুলা পাসপোর্ট নিয়া চলাফেরা করার আইন নাই। আমার উত্তর:এগুলো তো আমার স্ত্রী-সন্তানদের,দেশের কোন আইনে আছে পাসপোর্ট নিয়া চলা-ফেরা করা যাবে না? ইতিমধ্যে একজন-দু’জন করে পাবলিক জড়ো হওয়া শুরু করেছে।পুলিশ:এরা যে আপনার পরিবার তার প্রমাণ কি? আমি:পাসপোর্ট গুলোতে স্বামী এবং বাবা হিসাবে আমার নাম আছে,এছাড়া আমার পাসপোর্ট ও এখানে আছে–আর কি প্রমাণ লাগবে? পুলিশ:ঠিক আছে থানায় গিয়ে এগুলো যাচাই হবে।পুনরায় পুলিশ:আপনার পকেটে এতো টাকা ক্যান(সব মিলিয়ে ৫০০০/ মতো হবে)?আমি:মাত্র ৫০০০/ হতে পারে নাও হতে পারে,এটা বহন করা নিষেধ নাকি?পুলিশ:কোথায় পাইছেন? আমি:আমার জরুরী একটা কাজ আছে,আপনারা আমার সময় নষ্ট করছেন এবং আমাকে বিনা কারণে নাযেহাল করছেন,আমার সরকারী পরিচয়ে আপনাদের সন্তুষ্ট হওয়ার কথা। পুলিশ:আপনি সরকারী অফিসারই হোন আর ভি আই পি হোন এগুলা দেয়া যাবে না,আচ্ছা আপনি বললেন এই মাত্র ডেলিভারি আনছেন,ডেলিভারি স্লিপ দেখান! আমি হাসবো না কাইন্দা দিবো বুঝতে পারছিলাম না,এতো জাদরেল পুলিশ জানেই না যে–ডেলিভারি স্লিপ জমা নিয়াই পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়! এরই মধ্যে উতসাহী জনতা পরামর্শ দিলো পাসপোর্ট-র তথ্য গুলো আমি না দেখে বলতে পারি কিনা তা পরীক্ষা করলেই ঝামেলা মিটে যায়–আমি তাদের সহযোগীতায় মুগ্ধ,কারণ অনেকেই বুঝে গেছে পুলিশ অন্য কিছুর আশায় ঝামেলা করছে,তাই তারা আগ বাড়িয়ে আমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। শুরু হলো নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ,একজন কনষ্টেবল পি এস সি-র চেয়ারম্যানের ভাব নিয়ে প্রশ্ন শুরু করলো,সবগুলোর সঠিক উত্তর দিয়ে যখন আমিও বি সি এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ভাব ধরতে যাবো তখনই বাধলো বিপত্তি–শেষ প্রশ্নে গেলাম আটকে! প্রশ্ন:আপনার শ্বশুরের নাম? আমি:চান মিয়া। সেই চেয়ারম্যান ভাবধারী পুলিশ;স্যার ধরা খাইসে,পুরা মুখস্ত করতে পারে নাই। এস আই: ক্যান মিলে নাই? চেয়ারম্যান ভাবধারী:না স্যার নামের শুরুতে “ল্যাটা” আছে সেইটা বলতে পারে নাই,ভুইলা গেছে ।
আপনারা নিশ্চয়ই জানান MRP-তে সকল তথ্য ইংরেজীতে লেখা থাকে,সেই মতো আমার শ্বশুরের নাম লেখা–Late Chan Mia! আমাকে প্রশ্নকারী চেয়ারম্যান ভাবধারী পুলিশ সাহেব Late মানে “প্রয়াত” কে “ল্যাটা” ভেবে এটিকে নামের অংশ ধরে নিয়ে আমার ভুল ধরে ফেলেছেন–বুঝতেই পারছেন বিদ্যার টাইটানিক এক একজন!আমি তখন তাকে বললাম–ভাইয়া এটা ল্যাটা হবে না,লেট হবে মানে প্রয়াত! ইতিমধ্যেই প্রায় ৩০ মিনিট পেরিয়ে গেছে এবং উপস্থিত জনতার মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ দেখা দিয়েছে,পরিস্থিতির অবনতি আচ করতে পেরে তারা আমাকে বিদায় দেয়।
আমার জিজ্ঞাসা :
১.আমাদের দেশে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের পাসপোর্ট বহন কোন আইন দ্বারা নিষিদ্ধ কিনা?
২.৫০০০/টাকা সাথে বহন করার জন্য পুলিশের আগাম অনুমতি লাগে কিনা?
৩.ইচ্ছে করলেই পুলিশ সাধারণ নাগরিককে নাযেহাল করার ক্ষমতা ধারণ করে কিনা?
৪.পথে-ঘাটে পাসপোর্ট যাচাই-বাছাই করার দ্বায়িত্ব/ক্ষমতা/যোগ্যতা পুলিশের আছে কিনা?
৫.প্রথম শ্রেণীর সরকারী চাকুরে পরিচয় পাওয়ার পরও ৩য় শ্রেণীর পদ মর্যাদা ধারী এই সব পুলিশ এভাবে নাযেহাল করার অধিকার বহন করে কিনা?
যদি এগুলো সবগুলোর উত্তর না বোধক হয় তবে আমার ফেইসবুক বন্ধু সাংবাদিক বন্ধুদের অনুরোধ করবো বিষয়টি পুলিশের উপর মহলের নজরে আনুন এবং বাকী বন্ধুরা বেশী বেশী শেয়ার করে এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন,ওই সড়কে চলাচলকারী দের সতর্ক করুন,কারণ পরে আমাকে বহন কারী স্থানীয় রিকশা চালকের কাছে শুনেছি এটি ওই স্থানের নিয়মিত ঘটনা।
সংগৃহিত: এহসানুর ভাই থেকে।