শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১১ জানুয়ারি ২০১৭
ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে চলা উন্নয়ন মেলায় বাংলাদেশ সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর তিনটি স্টলে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। দেশ রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী এই তিন বাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মকাণ্ডের প্রদর্শনীই আগত দর্শনার্থীদের আগ্রহ বাড়িয়েছে। পুরো মেলাপ্রাঙ্গণ যেনো দখল করে নিয়েছে এই তিনটি স্টল। কিছুটা বড় আকার ও প্রদর্শনীর জন্য দর্শনীয় ও দৃষ্টিনন্দন একাধিক বিষয়াদিই দর্শনার্থীদের চোখ কেড়ে নেয়। মেলার দ্বিতীয় দিন শিল্পকলা প্রাঙ্গণে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, আগত দর্শনার্থীদের প্রায় সবাই ভিড় করছেন এ তিনটি স্টলে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর স্টলে গিয়ে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের ভিড়ে ভেতরে কোনো স্থান ফাঁকা নেই। স্টলের বাহিরে বড় পর্দায় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, মহড়া ও কর্মকাণ্ডের ভিডিও চিত্র দেখানো হচ্ছে। পুরো বাহিনীর গৌরবময় জীবনের খণ্ডচিত্র প্রদর্শনী হচ্ছে। আগত দর্শকরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা উপভোগ করছেন।
স্টলের ভেতরে দেখা গেছে, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মিত দেশের বড়বড় প্রকল্পগুলোর নকশা প্রদর্শনী হচ্ছে। এর মধ্যে হাতিরঝিল প্রকল্প ও মিরপুর ফ্লাইওভারের চিত্র রয়েছে। এছাড়া বাহিনীটির নিজস্ব এলাকায় নির্মিত বড়বড় ভবনের প্রদর্শনী হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে বন্যা-দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের চিত্রও দেখা গেছে আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনীতে সবচেয়ে বেশি স্থান পেয়েছে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার স্বর্ণ দ্বীপে (জাহাজ্জার চর) সেনাবাহিনীর ২৩ পদাতিক ডিভিশনের মহড়ার দৃশ্য। মহড়ায় শত্রুপক্ষকে পরাজিত করার বিভিন্ন চিত্র দেখানো হয়।
নৌবাহিনীর স্টলে গিয়ে দেখা গেছে আরও দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য। এ স্টলেও বড় পর্দায় বাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও মহড়া প্রদর্শন করা হচ্ছে। শিশু-যুবক থেকে শুরু করে বৃদ্ধা পযর্ন্ত সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছেন। জরুরি মুহূর্তে হেলিকপ্টর থেকে অবতরণ, যুদ্ধজাহাজ চলাকালে আকাশ থেকে চলন্ত জাহাজে হেলিকপ্টর অবতরণসহ নানা দৃশ্য। এমন প্রদর্শনী শিশুদের পাশাপাশি সব বয়সের মানুষের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে।
এছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ প্রত্যয়, নবযাত্রা, সমুদ্র জয়, অনুসন্ধান, দুর্বার, বঙ্গবন্ধু ও অনির্বাণের প্রতীকি চিত্র স্টলে রাখা হয়েছে। আগত দর্শনার্থীরা এসব জাহাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে দায়িত্বরত নৌবাহিনীর সদস্যরা জাহাজগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানান দর্শনার্থীদের।
সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে বিমান বাহিনীর প্রদর্শনীতে। এতে যুদ্ধ বিমান চালানোসহ দৃষ্টিনন্দন নানা দৃশ্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করেছে। স্টলে বিমান বাহিনীর একাধিক যুদ্ধ বিমানের প্রতিকী ছবি রাখা হয়েছে। আগত দর্শনার্থীদের সেসব ছবির সঙ্গে সেলফি তুলতে দেখা গেছে। তাছাড়া যুদ্ধ বিমান পরিচালনার জন্য স্টলে রিমোর্ট চালিত ক্ষুদে যুদ্ধ বিমান রাখা হয়েছে। রিমোর্টের সাহায্যে বিমানটি যুদ্ধ পরিচালনা করে।
মেলায় নোয়াখালী থেকে আগত দর্শনার্থী এস টি হোসাইন বলেন, ‘খুব সুন্দর লাগছে। তবে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনীর প্রদর্শনীগুলো। তাদের প্রদর্শনী দেখে খুব অনুপ্রেরণা আসে। যেনো আমরাও দেশের যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে তাদের মতো প্রস্তুত থাকতে পারি।’
এ মেলায় তিন বাহিনীর সদস্যরা ছাড়াও দেশের সব মন্ত্রণালয়, পুলিশ, আনসারসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর স্টল রয়েছে। এ বছর সব মিলিয়ে ৭৯টি স্টল রয়েছে। সব সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে নিজ নিজ সংস্থার উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরা হবে। নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সচেত হওয়াসহ নানা সচেতনতামূলক চিত্র প্রদর্শনী করা হচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের স্টলে। তিনদিনব্যাপী এ মেলা শেষ হচ্ছে আজ বুধবার।
রাজধানীর জাতীয় শিল্পকলা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত এ মেলার মূলমন্ত্র হচ্ছে ‘শেখ হাসিনার দর্শন, সব মানুষের উন্নয়ন’। এই মন্ত্রকে ধারণ করে ২০২১ সালের মধ্যে ‘ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ’ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ‘উন্নত বাংলাদেশ’ গঠনে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম মেলার মাধ্যমে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।