শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১১ এপ্রিল ২০১৭
আমি বিশ্বাস করি, আমরা আছি ডাউনস্ট্রিমে। তিস্তার পানি আসবেই। পানি কেউ আটকে রাখতে পারবে না বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
চারদিনের ভারত সফর শেষে মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মমতা ব্যানার্জি যখন ঢাকায় এসেছিলেন, তিনি কথা দিয়েছিলেন, পানি তিনি দেবেন। এবারও তিনি যে একেবারে নিষেধ করেছেন, তা নয়। তিনি বলেছেন, আশপাশে আরও কয়েকটা নদীর সঙ্গে সংযোগ করে তারপর এই পানি যাতে আসে সেই ব্যবস্থা করার কথা এবং এ ব্যাপরে একটা ফিজিবিলিটি স্টাডি করার কথা বলেছেন।
‘তবে আমিও তাকে (মমতা) বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছি। তাকে বলেছি, অন্য নদীর পানি তারা নিজেরা নিয়ে তিস্তার পানি আমাদের দিন। এটা নিয়ে আলোচনা চলবে। তার মানে এটা একটা দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে যাবে। তবে প্রাইম মিনিস্টার নরেন্দ্র মোদি খুব স্পষ্টভাবে বলেছেন, তিস্তার পানি চুক্তি হবেই। তিনি যখন ঘোষণাটা দিয়েছেন, স্বাভাবিকভাবেই আমরা ধৈর্য ধরতে পারি।’
এ সময় সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার বাস্তব ও উদ্ভাবনমুখী অর্থনীতি গড়ে তুলতে চায়, যা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে। আমি নিশ্চিত দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করলে, এ অঞ্চলের মানুষের জীবন আমরা বদলে দিতে পারব।
সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সফরে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, পদ্মা ব্যারেজ নির্মাণ, নদীর অববাহিকা-ভিত্তিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, আন্তঃযোগাযোগ তথা কানেকটিভিটি, জনযোগাযোগ, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সহযোগিতা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’
‘আমরা নিজ নিজ দেশের তথা দক্ষিণ এশিয়ায় জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের বিষয়ে একমত পোষণ করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে গৃহীত হওয়ার কথা জানাই। প্রধানমন্ত্রী মোদী বাংলাদেশে গণহত্যার বিষয়ে আমাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন।
‘এই সফরে গতানুগতিক চলমান সহযোগিতার ক্ষেত্রসমূহের অগ্রগতি পর্যালোচনার পাশাপাশি নতুন নতুন ক্ষেত্র- যেমন বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণা, ভূ-ত্বাত্তিক জরিপ, প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা, ভারতীয় অনুদানে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, ভুটানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ত্রিদেশীয় অংশগ্রহণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ভারত সরকার ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নমনীয় ঋণের ঘোষণা দিয়েছে। এ অর্থ দিয়ে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া সামরিক খাতে ৫০০ মিলিয়ন ডলার নমনীয় ঋণ দেবে ভারত। আমরা যৌথভাবে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র হিন্দী সংস্করণের মোড়কও উন্মোচন করেছি।’’
‘তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি আমাদের আমলেই হবে-জোরালো আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মোদি। এ সফরে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে মোট ৩৫টি দলিল স্বাক্ষরিত হয়। এগুলোর মধ্যে ১১টি চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক ২৪টি। বাংলাদেশ এবং ভারতের সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে অর্থনৈতিক এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত ৯ বিলিয়ন ডলারের ১৩টি চুক্তি এবং এমওইউ এগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।’
তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ভারতের গভীর শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ দিল্লিতে ‘পার্ক স্ট্রিট’র নতুন নামকরণ করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রোড’।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী/ সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর যেসব সদস্য জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ দেয়া হয়েছে।
‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পাঁচ বছরের মাল্টিপল ভিসা দেয়ার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, তার সরকার প্রতি বছরে ১০০ জন করে মুক্তিযোদ্ধাকে বিনা খরচে চিকিৎসা দেবে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের বৃত্তির সংখ্যা আরও ১০ হাজার বাড়ানোর ঘোষণা দেন।’