ডিসিসির পশুর হাট নিয়ন্ত্রণে কাউন্সিলর ও আ. লীগ নেতারা

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ২০  জুলাই  ২০১৬

ডিসিসির পশুর হাট নিয়ন্ত্রণে কাউন্সিলর ও আ. লীগ নেতারা

ডিসিসির পশুর হাট নিয়ন্ত্রণে কাউন্সিলর ও আ. লীগ নেতারা

আসন্ন কোরবানি ঈদ উপলক্ষে ক্ষমতাসীন দল ও ডিসিসির কাউন্সিলররা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী ১২টি কোরবানি পশুর হাট। একই সঙ্গে কোরবানি হাটকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মাস্তানরাও। তারা হাটের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে পশুবোঝাই যানবাহনগুলোও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পশুর হাটের টেন্ডার ঘোষণার পরপরই এমন চিত্র উঠে এসেছে। ফলে এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে দুই সিটি করপোরেশন। তবে তারা এসব সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসতে প্রয়োজনে পুনরায় টেন্ডারের কথা ভাবছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিন্ডিকেটের বাইরে কারও পক্ষে শিডিউল সংগ্রহ ও জমা দেয়া সম্ভব হয়নি। হাট ইজারার ক্ষেত্রে শুধু সরকারদলীয় ও সিটি করপোরেশনের প্রভাবশালী কাউন্সিলরদের কাছে শিডিউল বিক্রি করা হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন কৌশলে তারা সাধারণ ব্যবসায়ীকে হাট ইজারার টেন্ডারে অংশ নিতে দেয়নি। এক্ষেত্রে করপোরেশনের অসাধু কিছু কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে শিডিউল কম বিক্রি করানো হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকেও বঞ্চিত হয়েছে সিটি করপোরেশন।

সিটি করপোরশন সূত্র জানায়, এবছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন রাজধানীতে ১৮টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোনে (ডিএসসিসি) ১২টি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ৬ টি। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণের ১২টি পশুর হাটের টেন্ডার ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার নগর ভবনের অডিটরিয়ামে হাটের টেন্ডার ঘোষণা করেন ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহম্মদ।

দক্ষিণ ডিসিসির ১২ টি পশুর হাটের মধ্যে রয়েছে, ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, মেরাদিয়া বাজার হাট, নারিন্দা সাদেক হোসেন খোকা মাঠ, উত্তর শাজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার সংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ, ধোপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ, গোপীবাগে ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশান সংলগ্ন খালি জায়গা, লালবাগ মরহুম হাজী দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, কামরাঙ্গীচর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালি জায়গা, যাত্রাবাড়ি কাঁচা বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, ও কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা।

এসব হাটের মধ্যে ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠের সর্বোচ্চ দরদাতা হলেন, মো. মনিরুল হক বাবুল। তিনি এ হাট ৬৬ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছেন। রহমতগঞ্জ খেলার মাঠের কবির মাহমুদ সর্বোচ্চ ৯ লাখ ২৫ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছে। এ হাটটির সরকারি মূল্য ৬৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫০৯ টাকা।

 

মেরাদিয়া বাজার হাট ৫১ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টাকায় ইজারা নিয়েছেন হাজি মো. শাহ আলম। এ হাটটির সরকারি মূল্য ৫১লাখ ২৯ হাজার ৪৪৫ টাকা। ধোলাইখালের সাদেক হোসেন খোকা মাঠ মো. ফরহাদ উদ্দিন বাবু ১ কোটি ৫৫ লাখ ৫ হাজার ইজারা নিয়েছেন। তিনি হাটটির নির্ধারিত সরকারি মূল্য ৫৮লাখ ৭৭ হাজার ৯১৮ টাকা থেকে অধিক দাম দিয়েছেন।

উত্তর শাজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার সংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ হাজি আবদুল লতিফ ৭ লাখ ২০ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন। হাটটির সরকারি মূল্য ছিলো ৭ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৪টাকা।

ধোপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ একেএম মোর্শেদ আহমদ ৯৩ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন। হাটটির সরকারি মূল্য নির্ধারণ ছিলো ২৬ লাখ ৪৭ হাজার ৯১৭ টাকা।

গোপীবাগে ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ মোমিনুল হক সাঈদ ৭০ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন। হাটটির সরকারি মূল্য ছিলো ৩০ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা। তিনি বর্তমান ডিএসসিসির ৯ নং ওয়ার্ডেও কাউন্সিলর। পোস্তগোলা শ্মশান সংলগ্ন খালি জায়গা আসাদউজ্জামান রুবেল ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন। হাটটির সরকারি মূল্য ১২ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা।

লালবাগ মরহুম হাজী দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ ১ কোটি ৪ লাখ টাকায় দর আহবান করেছেন মো, ইউসুফ। এ হাটটির সরকারি মূল্য ১ কোটি ৮৭ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৫ টাকা। এতে কাঙ্ক্ষিত দর উঠেনি বলে তা বাতিল করেছে ডিএসসিসি। কামরাঙ্গীচর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালি জায়গা ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন হাজি হোসের সরকার। এর সরকারি মূল্য ৪ লাখ ১৮ হাজার ৭৫০ টাকা।

যাত্রাবাড়ি কাঁচা বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা ৭৫ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন আবু বকর সিদ্দিক বাকের এবং কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা ডিএসসিসির ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ ২০ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন। নতুন হওয়ায় এর কোনো সরকারি মূল্য ধরা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগের এক কর্মকর্তা বাংলামেইলকে বলেন, ‘সিন্ডিকেট করেই হাটের দরপত্র জমা দেয়া হয়েছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। যার ফলে অনেক হাটেরই কাঙ্ক্ষিত দর উঠেনি। বৃহস্পতিবার যে টেন্ডার ঘোষণা করা হয়েছে তাতে এমনটাই মনে হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যেসব হাটের কাঙ্ক্ষিত দর উঠেছে সে বিষয়ে দুই এক দিনের মধ্যে আমাদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে বোর্ড মিটিং হবে সেখানে সিদ্ধান্ত হবে কোন কোন হাট পুনরায় টেন্ডার ঘোষণা করা হবে।’

 

 

Related posts