ডিএসসিসির ৯ প্রকল্পে নয় ছয়

  • শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ৩০ জুলাই ২০১৬

ডিএসসিসির ৯  প্রকল্পে  নয়, ছয়

 ডিএসসিসির ৯ প্রকল্পে নয়, ছয়

ডিএসসিসির ৯ প্রকল্পে নয় ছয়

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উন্নয়নমূলক ৯টি প্রকল্পে

ডিএসসিসির ৯  প্রকল্পে  নয়, ছয় চলছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে কাজ না করেই বিল উত্তোলনের। ১ হাজার ৮৭১ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়ক মেরামত, নর্দমা-ফুটপাত নির্মাণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এ ৯টি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৭১ কোটি ৭ লাখ টাকা।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে এর কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কিছু কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজ শেষ করার মেয়াদ এ বছরের ডিসেম্বরে। কিছু কিছু প্রকল্পের ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে যে সব প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে সেসব প্রকল্পের বিল পরিশোধে ঠিকাদারদের থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রায় ১০ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। এমন অভিযোগ খোদ নগর ভবনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ঠিকাদারদের।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য মতে, এর মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে একটি প্রকল্পের। দুটিতে শেষ হয়েছে ৮০ ও ৮৬ শতাংশ। একটিতে ৬০ শতাংশ। অন্য একটিতে ৪০ শতাংশ। অপর দুটি প্রকল্পে ১ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং ০ দশমিক ৪২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। যার গড় হিসেবে দাঁড়ায় ৬৪ শতাংশ। তবে সরেজমিন পরিদর্শন করে কর্তৃপক্ষের এ দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। এতে দেখা গেছে গড় হিসেবে সবগুলো কাজের মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে।

প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাত্র ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হতে পারে। এর মধ্যে যে প্রকল্পগুলোর শতভাগ অবকাঠামো উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে, আদৌ তা হয়েছে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা।

জানা গেছে, রাস্তা মেরামত, নর্দমা-ফুটপাত নির্মাণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে ঢাকা আরবান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের মেয়াদকাল চলতি বছরের ডিসেম্বর। কামরাঙ্গীরচর এলাকার ৫৫ ও ৫৬ নং ওয়ার্ডের ফুটপাত নর্দমা নির্মাণসহ রাস্তা পুননির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এ বছরের ডিসেম্বরেই কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫টি অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত সিসি সড়ক, নর্দমা ও ফুটপাত উন্নয়নে মোট ব্যয় ২৫ কোটি টাকা। যার কাজ শেষ হবে আগামী বছরের জুনে। এছাড়াও করপোরেশনের প্রধান সড়কগুলোর জন্য কোল্ড রি-সাইক্লিং ফ্ল্যান্ট ও ইকুইপমেন্টের ব্যয় ৫১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের মেয়াদ গত জুন মাসে শেষ হয়ে গেছে। যান-যন্ত্রপাতি আধুনিকীকরণ ও জনসম্পৃক্তরার মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণে ব্যয় ২১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর মেয়াদ গত জুনে শেষ হয়ে গেলেও কাগজ কলমে দেখানো হয়েছে ৮০ শতাংশ কাজ হয়েছে।

ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জনসেবা উন্নয়নে ৮৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। যার শেষ মেয়াদ এ বছরের ডিসেম্বরে। কিন্তু কজের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ১ দশমিক ৬০ শতাংশ। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নীচে যাত্রাবাড়ী থেকে জয়কালী মন্দির পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত উন্নয়নে ব্যয় ২৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মেয়াদ গত জুনে শেষ হয়ে গেছ। সেখানে বলা হয়েছে শতভাগ কাজ হয়েছে।

সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী ও দয়াগঞ্জ এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, নর্দমা, ও ফুটপাত উন্নয়নে ব্যয় ২১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। যার মেয়াদকাল এ বছরের ডিসেম্বর। ডিএসসিসির বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে ১২০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মেয়াদকাল ১৮ সালের ডিসেম্বর। যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে ত্রিমুখি রাস্তা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজে ১৫৪কোটি ৮৮ লাখ টাকা। যার মেয়াদকাল ১৮ সালের জুন। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ১ হাজার ৮৭১ কোটি ৭ লাখ টাকা। তবে এ ৯ প্রকল্পের মোট খরচের ডিএসসিসি ও সরকার যৌথভাবে দিয়েছে। এর মধ্যে সরকার দেবে ১ হাজার ৪৫৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আর বাকি ৪১৩ কোটি ১১ লাখ টাকা দেবে ডিএসসিসি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কামরাঙ্গীচর এলাকায় ফুটপাত, নর্দমা, ও রাস্তা নির্মাণ করার কথা রয়েছে। কিন্তু ওইসব এলাকায় এখন পর্যন্ত কোনো অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়নি। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নীচে যাত্রাবাড়ী থেকে জয়কালী মন্দির পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত উন্নয়নের কথা রয়েছে। কিন্তু এসব জায়গায় এখনও রয়ে গেছে খানাখন্দ। আর ফুটপাতেরও কোনো উন্নয়ন হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের চলাচলে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।

সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী ও দয়াগঞ্জ এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, নর্দমা, ও ফুটপাত উন্নয়নেও কোনো অগ্রগতি নেই। কোথাও কোথাও কিছু কাজ করলেও বেশিরভাগ জায়গায় রাস্তায় খানাখন্দে ভরা। নর্দমাগুলো ও ফুটপাতের চিত্র আগের মতোই রয়ে গেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পরিকল্পনা ও নকসা বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী প্রেমধন রুদ্র পাল বাংলামেইলকে বলেন, ‘ডিএসসিসি ও সরকার ৯টি প্রকল্পের কাজ গত বছরের জুন থেকে শুরু করেছে। এর মধ্যে কয়েকটির কাজ শতভাগ শেষ হয়ে গেছে। তবে বেশিরভাগ কাজের মেয়াদকাল এ বছরের ডিসেম্বর নাগাদ। আর বাকিগুলো আগামী বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।’

এদিকে এসব কাজের বিপরীতে গত অর্থবছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুইশত ৩০ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এ থেকে ৫ শতাংশ হারে কমিশন আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ ঠিকাদারদের।

 

 

Related posts