শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬
ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় হচ্ছে জাল টাকা তৈরির চক্র। তারা কোরবানির পশুর হাট ও শপিং সেন্টারগুলোকে টার্গেট করছে। নিজস্ব সিন্ডিকেট দিয়ে এসব স্থানে জাল নোট ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
জনগণ যেন সহজেই জাল নোট চিনতে পারেন সেজন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কিছু পরামর্শ দিয়েছে।
সোমবার ডিএমপির উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘যারা এ কাজ করে তারা অনেক পুরনো। তাদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। জাল নোট চক্রের লোকজন এ সময়টাকে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বেছে নেয়। সাধারণ জনগণ যেন প্রতারিত না হয়, সেজন্য পুলিশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে।
ডিএমপির ফেসবুক পেজে শেয়ার করা ডিএমপি নিউজের ‘সহজেই জাল টাকা শনাক্ত করবেন যেভাবে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-
১। জাল টাকার প্রথম শর্ত হচ্ছে- এই নোটগুলো নতুন হবে। কারণ, জাল নোটগুলো সাধরণ কাগজে তৈরি, তাই পুরাতন হয়ে গেলে সেই নোট নাজেহাল হয়ে যায় বা তা অতি সহজেই বোঝা যায়।
২। জাল টাকার নোট ঝাপসা দেখায়। আসল নোটের মতো ঝকঝকে থাকে না। সেটা নতুন হোক আর পুরাতন হোক। এগুলো কিছুটা পাতলা বা হালকা ধরনের, যা লেনদেন করার সময় একটু মনোযোগ সহকারে দেখলেই বোঝা যায়।
৩। জাল নোট হাতের মধ্যে নিয়ে মুষ্টিবদ্ধ করে কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলে তা সাধারণ কাগজের মতো ভাঁজ হয়ে যাবে। আসল নোট তেমন একটা ভাঁজ হবে না।
৪। এবার আসুন আসল কথায়, আপনি এই মুহূর্তে নতুন একটি ১০০০ টাকা ও ৫০০ টাকা এবং একটি ১০০ টাকার নোট এবং পুরাতন একটি ৫০০ টাকার নোট আপনার হাতে নিন। আর এই বর্ণনার সাথে মিলিয়ে দেখুন কথাগুলো ঠিক আছে কি না।
৫। উপরে লেখা প্রথম তিনটি নোট সোজা করে ধরুন। এবার লক্ষ্য করুন- নোটের বাম পাশে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একটি সরল রেখা আছে। একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন ওটা কোনো রেখা নয়। সেখানে স্পষ্টভাবে ইংরেজিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কথাটা লেখা আছে ।
৬। পুরাতন ৫০০ টাকার নোটে বাম পাশে নিচে সুন্দর নকশা করে লেখা আছে ৫০০। মূলত সেখানে Bangladesh Bank কথাটাও লেখা আছে হালকা ও ভারি রং দিয়ে।
৭। আসল নোট হরিণের চামড়া দিয়ে তৈরি বলে পানিতে ভেজালেও খুব তারাতারি ভেঙে যাবে না। আর জাল নোট পানিতে ভেজানোর সঙ্গে সঙ্গে তা ভেঙে যাবে।
৮। আসল নোট সবসময় খসখসে হবে।
৯। উপরের সবগুলো উপায়ে যদি আসল ও জাল নোট শনাক্ত করতে কেউ ব্যর্থ হন, তবে তার জন্য সর্বশেষ উপায় আল্ট্রা ভায়োলেট লাইট। এই লাইটের মাধ্যমে শনাক্ত করা খুবই সহজ। আসল নোটে এই লাইটের আলো ধরলে নোটের ওপর রেডিয়ামের প্রলেপ জ্বল জ্বল করে উঠবে। জাল নোটে তা হয় না।
এবার আসুন জেনে নেই আসল ও নকল নোটে কী কী নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকে :
রঙ পরিবর্তনশীল কালি : আসল ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটে বিশেষ এক ধরনের রঙ পরিবর্তনশীল কালি ব্যবহৃত হয়, যার নাম অপটিক্যালি ভেরিয়েবল ইনক বা ওভিআই। নোটের ওপরের অংশে ১০০, ৫০০ এবং ১০০০ টাকা লেখায় এই কালি ব্যবহৃত হয়। নোট একটু এদিক-সেদিক করলে ওই কালির রঙ পরিবর্তন হয়। জাল টাকায় কালির রঙ পরিবর্তন হবে না। সুইজারল্যান্ডের ’সিকপা’নামের (পৃথিবীর একমাত্র) কোম্পানি এই কালি তৈরি করে। টাকা ছাপার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোতেই শুধু এই কালি তারা সরবরাহ করে।
অমসৃণ মুদ্রণ : সব মূল্যমানের আসল নোট বিশেষ এক ধরনের কালি দিয়ে মুদ্রিত হয়। টাকার বিভিন্ন স্থানে এই কালির ব্যবহার রয়েছে, যেখানে হাত দিলে অমসৃণ মনে হবে। জাল নোটে কালির জায়গায় হাত দিলে মসৃণ মনে হবে। আসল নোটের সামনে-পেছনে বিভিন্ন স্থাপনার ছবিতেও এই কালির ব্যবহার রয়েছে। আসল নোটের ওপর অন্ধ ব্যক্তিও হাত বুলিয়ে উঁচু-নিচু বা খসখসে অনুভূতি থেকে আসল নোট শনাক্ত করতে পারবেন। নোটের ডানদিকে অন্ধদের চেনার জন্য ছোট-ছোট কয়েকটি বিন্দু আছে, যা হাতের স্পর্শে উঁচু-নিচু মনে হবে।
নিরাপত্তা সুতা : আসল নোটের বাম পাশে চার মিলিমিটার চওড়া এক ধরনের নিরাপত্তা সুতা সেলাই ফোঁড়ের মতো গেঁথে দেওয়া রয়েছে। সাধারণভাবে সরাসরি তাকালে মনে হবে, সুতা খানিকটা আছে, খানিকটা নেই। জাল নোট হলে পুরোটাই একরকম লাগবে। আসল নোটের সুতার মধ্যে ওই নোটের মূল্যমান লেখা থাকবে।
জলছাপ : আসল নোটে জলছাপ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি রয়েছে। আগের নোটগুলোতে রয়েছে বাঘের জলছাপ। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির নিচে অতি উজ্জ্বল ইলেকট্রো টাইপ জলছাপে নোটের মূল্যমান লেখা আছে। এর বাম পাশে আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রামের ইলেকট্রো টাইপ জলছাপ। জাল নোটে এসব জলছাপ থাকে না।