শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১৩ জানুয়ারি ২০১৭
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।
থার এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এবং বাংলাদেশ বেতার থেকে একযোগে সম্প্রচারিত হয়।
নীচে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ প্রকাশিত হলো-
‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় দেশবাসী,
আসসালামু আলাইকুম।
সবাইকে নতুন ইংরেজি বছরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
আজ ১২ই জানুয়ারি। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে আজকের দিনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি তৃতীয়বারের মত শপথ গ্রহণ করি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের তৃতীয় বছর পূর্তিতে দেশবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যিনি ২৪ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম, জেল-জুলুম এবং নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশ।
স্মরণ করছি ৩রা নভেম্বর জেলখানায় নিহত জাতীয় চারনেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে।
শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদকে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, স্বজন হারানো পরিবার ও একাত্তরে নির্যাতিত ২ লাখ মা-বোনের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা। মুক্তিযোদ্ধাদের জানাই সালাম।
গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের ঘৃণ্য হত্যাকা-ের শিকার আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, আমার তিন ভাইÑ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও দশ বছরের শেখ রাসেল- কামাল ও জামালের নবপরিণীতা স্ত্রী সুলতানা ও রোজী, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র সহোদর শেখ নাসের, বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জামিলসহ সেই রাতের সকল শহীদকে।
স্মরণ করছি, ২০০৪ সালের ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ শহীদ ২২ নেতা-কর্মীকে।
স্মরণ করছি বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় নির্মম হত্যাকা-ের শিকার সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজউদ্দিনসহ ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে।
স্মরণ করছি সম্প্রতি নিহত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন-কে। দশম সংসদের যে সকল সংসদ সদস্য ইন্তেকাল করেছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
প্রিয় দেশবাসী,
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার টানা ৮ বছর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে ৯ম বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে।
আপনারা এই দীর্ঘ সময় ধরে আমাকে এবং আমার সরকারকে আপনাদের সেবায় নিয়োজত থাকার সুযোগ দিয়েছেন। এ জন্য আমি আপনাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আপনাদের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি- সে বিচারের ভার আপনাদের উপরই রইল। তবে আমি এটুকু দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, দেশের এবং দেশের মানুষের উন্নয়ন এবং কল্যাণের জন্য আমরা আমাদের চেষ্টার ত্রুটি করিনি।
আমাদের মনে রাখতে হবে, বিপুল জনসংখ্যার এ দেশে সম্পদের পরিমাণ সীমিত। দীর্ঘকাল দেশে কোন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়নি। বহু সমস্যা পুঞ্জিভূত হয়ে পাহাড়-সমান হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মোকাবিলা করতে হয়েছে অভ্যন্তরীণ বিরুদ্ধ পরিবেশ। বৈশ্বিক বৈরি অর্থনৈতিক অবস্থাও উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বার বার।
কিন্তু সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের সর্বজনীন মডেল। দ্রুত সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বব্যাংক মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী উপস্থাপন করছে।
আট বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ।
প্রিয় দেশবাসী,
অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি আজ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকারও বেশি। যা জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৪তম এবং ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩২তম।
ধারাবাহিকভাবে ৬.৫ শতাংশ হারে প্রবৃৃদ্ধি ধরে রেখে পুরো বিশ্বকে আমরা তাক লাগিয়ে দিয়েছি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.১১%। আগামী বছরের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭.৪%।
অর্থনীতি ও সামাজিক সূচকের অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার এবং নি¤œ-আয়ের দেশগুলিকে ছাড়িয়ে গেছি।
প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স-এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৯তম ও ২০৫০ সাল নাগাদ ২৩তম অর্থনীতির দেশে উন্নীত হবে।
জনগণের মাথাপিছু আয় ২০০৫-০৬ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে আজ ১ হাজার ৪৬৬ ডলার হয়েছে।
দারিদ্র্যের হার ২০০৫-০৬ সালে ছিল ৪১.৫ শতাংশ। এখন তা হ্রাস পেয়ে হয়েছে ২২.৪% শতাংশ। অতি দারিদ্র্যের হার ২৪.২৩% থেকে ১২ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১৫/১৬ শতাংশে এবং অতি দারিদ্র্যে হার ৭/৮ শতাংশে নামিয়ে আনা ।
একদিকে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যেমন বেড়েছে, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকায় মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে। ২০০৯ সালে মুল্যস্ফীতি ছিল ডাবল ডিজিটে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৫.০৩ শতাংশ।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিলো মাত্র ১০.৫২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪.২৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমরা জাতীয় রপ্তানি নীতি ঘোষণা করেছি এবং বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছি।
বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ শক্তভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ৩.৫ বিলিয়ন ডলার যা বর্তমানে ৩২ বিলিয়ন ডলারেরও উপর ।
বিগত আট বছরে দেশ-বিদেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। গতবছর রেকর্ড ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। ৫ কোটি মানুষ নি¤œবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে।
সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি।
২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেই, তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় ১৫ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
২০২১ সালের মধ্যে আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে চাই। সেই লক্ষ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। কয়েকটি বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু করেছি।
আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আমরা পরিবেশ সুরক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপরও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা এবং প্রত্যন্ত চরাঞ্চলসহ সারাদেশে প্রায় ৪৫ লাখ সোলার হোমসিস্টেম বসানো হয়েছে। মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ উৎপাদন করা হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে।
আমরা পরমাণু ক্লাবে যুক্ত হতে যাচ্ছি। পাবনার রূপপুরে ২০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।
আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল খাদ্য-নিরাপত্তা নিশ্চিত ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা। ৮ বছরে দেশে কৃষি খাতের ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বছরে খাদ্যশস্য উৎপাদন প্রায় ৪ কোটি মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশ এখন খাদ্য-উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ এবং সবজি উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে।
৮ বছরে প্রায় ৪০ হাজার ৩০০ কোটি টাকার কৃষি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বর্গা চাষীদের জন্য কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প সুদে বিনা জামানতে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করেছি।
১৯৯৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার বয়স্কভাতা, বিধবা ও দুঃস্থ নারী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধাভাতা এবং প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন সামজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি চালু করেছে।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অধীনে চলতি বছর ১৪২টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এ কর্মসূচি বাবদ ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত ৮ বছরে ২ লাখ ২৯ হাজার ১৬৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৩ হাজার ৬৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
হিজড়া এবং বেদে সম্প্রদায়ের জন্য ৬০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। চা শ্রমিকদের জন্য জন্য অনুদান ১০ কোটি থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ কোটি করা হয়েছে।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অধীনে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ১০০টি শাখা উদ্বোধন করা হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ২০১৯ সালের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং গৃহায়ণ কর্মসূচিসহ অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ২ লাখ ৮০ হাজার পরিবার পুনর্বাসন করা হবে।
গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে ৫০ লাখ পরিবারকে প্রতি কেজি ১০ টাকা মূল্যে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে।
প্রিয় দেসবাসী,
অমাদের সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
২০১০ সালে আমরা মাধ্যমিক পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ কর্মসূচি শুরু করি।
এ বছর ৪ কোটি ২৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯২৯ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি বই বিতরণ করা হয়েছে। গত আট বছরে সর্বমোট প্রায় ২২৫ কোটি ৪৩ লাখ ১ হাজার ১২৮টি বই বিতরণ করা হয়েছে। বিশ্বে বিনামূল্যে বই বিতরণের এমন নজির নেই।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রথম শ্রেণী থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ১ কোটি ৭২ লাখ ৯৩ হাজার ১১৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মেধাবৃত্তি ও উপবৃত্তি বিতরণ করা হয়েছে।
আমরা ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছি। একই সঙ্গে এসব বিদ্যালয়ের ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষকের চাকুরি সরকারি করা হয়।
২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩১ হাজার ১৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব ও াল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে।
বিদ্যালয়বিহীন ১ হাজার ১২৫টি গ্রামে নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৩৬৫টি কলেজ সরকারি করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যেসব উপজেলায় সরকারি স্কুল বা কলেজ নেই, সেসব উপজেলায় একটি করে স্কুল কলেজ সরকারিকরণ করা হবে।
দেশের ৩১৫টি উপজেলায় কোন সরকারি স্কুল ছিল না। ইতোমধ্যে ১১৩টি উচ্চ বিদ্যালয়
সরকারীকরণের সম্মতি প্রদান করা হয়েছে। আরও ২০২টি বিদ্যালয় পর্যায়ক্রমে সরকারি করা হবে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ঝড়েপড়ার হার হ্রাস পেয়ছে। ২০০১-এ বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় গিয়ে শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশ থেকে ৪৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছিল। বর্তমানে স্বাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
২০০৯ সালে থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।
একই সময়ে বেসরকারি খাতে ৪২টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে মোট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৯টি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯৬টি। টেক্সটাইল এবং ফ্যাশন ডিজাইনসহ বিষয়ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে দু’টি নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আইন পাস করা হয়েছে।
যেসব জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় নেই, সেসব জেলায় একটি করে সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।
কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণে ১ম পর্যায়ে ১০০টি উপজেলায় ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপনের কার্যক্রম চলছে এবং ২য় পর্যায়ে ৩৮৯টি উপজেলায় আরো ৩৮৯টি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপন করা হবে।
কিশোরগঞ্জ, মাগুরা, মৌলভিবাজার ও চাপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ১টি করে মোট ৪টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপন করা হয়েছে। আরও ২৩টি জেলায় বিশ্বমানের পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপন করা হবে। ঢাকা, চট্রগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগীয় সদরে ৪টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে।
সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ এবং রংপুর বিভাগীয় সদরে ৪টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে।
ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগে ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। চট্রগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগে ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন করা হবে। ৮টি বিভাগীয় শহরে ৮টি মহিলা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন করা হবে।
প্রিয় দেশবাসী,
আমরা স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ১৬ হাজার ৪৩৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করেছি। দরিদ্র্য মানুষকে বিনামূল্যে ৩০ পদের ওষুধ দেয়া হচ্ছে।
৬৪টি জেলা হাসপাতাল ও ৪২১টি উপজেলা হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আমরা একটি যুগোপযোগী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করেছি। ৮ বছরে ১২ হাজার ৭২৮ জন সহকারি সার্জন এবং ১১৮জন ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে ১৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রায় সাড়ে ১২ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
৩ হাজার মিডওয়াইফারি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশের প্রায় সকল শিশুকে টিকাদান কর্মসূচি এবং সব মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশনের আওতায় আনা হয়েছে।
মাতৃমৃত্যু প্রতি হাজারে ১.৮ জনে এবং শিশু মৃত্যু ২৯ জনে হ্রাস পেয়েছে।
গত ৮ বছরে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ২৪টি সরকারি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার শয্যা বাড়ানো হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে উন্নত যন্ত্রপাতি ও অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করা হয়েছে।
২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণকালে দেশে মোট সরকারি মেডিকেল কলেজের
সংখ্যা ছিল ১৪টি যা বর্তমানে ৩৬ টিতে উন্নীত হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৬৯টি। সরকারি-বেসরকারি মিলে ডেন্টাল কলেজের সংখ্যা ২৮টি।
আমার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের ঐকান্তিক আগ্রহ এবং নিরলস প্রচেষ্টায় অটিজমের মতো মানবিক স্বাস্থ্য সমস্যাটি বিশ্ব সমাজের দৃষ্টিতে আনা সম্ভব হয়েছে। অটিস্টিক শিশুদের সুরক্ষায় ২২টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
অচিরেই দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী ১ লাখ পরিবারের মধ্যে স্বাস্থ্যকার্ড বিতরণ করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে সারাদেশে সব দরিদ্র পরিবারের মধ্যে এই কার্ড বিতরণ করা হবে।
প্রিয় দেসবাসী,
আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
৪৮টি বৃহৎ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকায় হাতিরঝিল প্রকল্প, কুড়িল-বিশ্বরোড বহুমুখী উড়াল সেতু, মিরপুর-বিমানবন্দর জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু, বনানী ওভারপাস, মেয়র হানিফ উড়াল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
অবস্থানের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ।
জাতীয় সংসদকে সকল কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছি। বিরোধীদলকে ধন্যবাদ, তারা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অভিমত দিচ্ছেন, আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।
সামরিক-অসামরিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ১২৩ ভাগ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পদমর্যাদা বৃদ্ধি ও ব্যাপক পদোন্নতির সুযোগ করে দিয়েছি।
জাতির পিতা প্রণীত ১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে আর্মড ফোর্সেস গোল- ২০৩০ নির্ধারণ করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীকে অত্যাধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে।
পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও সশস্ত্রবাহিনীর ঝুঁকিভাতা দেয়া হচ্ছে।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়েছে।
প্রিয় দেশবাসী,
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমরা পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়েকে পরাজিত করেছি।
আমাদের মেয়েরা এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবলে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত নারী ফুটবল চাপিম্পয়নশীপ প্রতিযোগিতায় আমাদের মেয়েরা এই প্রথমবারের মত রানার্স-আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
জাতীয় নারী ক্রিকেট দল জায়গা করে নিয়েছে আগামী বছরের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে।
শারীরিক এবং মাসনিকভাবে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন ছেলে-মেয়েরা ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য দেখিয়ে চলেছেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তাঁরা দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছেন।
আমরা এমডিজি অর্জন করেছি। বাংলাদেশ এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড এবং আইটিইউ-এর ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি’ পুরস্কার পেয়েছে।
আমরা জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমাদের ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এসডিজি’র ৫৬টি লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা শান্তি এবং সহ-অবস্থানে বিশ্বাসী। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল বৈশিষ্ট ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’।
এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন পথ রচনায় সক্ষম হয়েছি।
আলোচনার মাধ্যমে আমরা ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমারও শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। এরফলে বিশাল সমুদ্র এলাকায় সমুদ্রসম্পদ আহরণের পথ সুগম হয়েছে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে। কক্সবাজারে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছি। সেখানে সী এ্যাকুরিয়াম তৈরি করা হবে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
প্রিয় দেশবাসী,
দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন একটি গোষ্ঠি ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করার অপচেষ্টা করছে।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্মের নামে যারা মানুষ হত্যা করে তারা ইসলামের বন্ধু নয়, শত্রু। ইসলাম কখনও মানুষ হত্যা সমর্থন করে না।
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ তবে ধর্মান্ধ নয়। হাজার বছর ধরে এ দেশের মাটিতে সকল ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শান্তিতে বসবাস করে আসছেন। যারা এই ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়, তাদের ঠাঁই বাংলার মাটিতে হবে না।
আমি দেশের সকল ইমাম, মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, স্থানীয় মুরুব্বি, আনসার-ভিডিপি সদস্য এবং অভিভাবককে জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিশেষ করে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান, আপনাদের সন্তানের প্রতি নজর রাখুন। তাদের এমনভাবে পরিচালিত করুন, যাতে তারা ভুল পথে পা না বাড়ায়।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ অব্যাহত আছে।
প্রিয় দেশবাসী,
আমরা চলতি মেয়াদের তিন বছর অতিক্রম করলাম। আমাদের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে।
আপনারা জানেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আমরা অবৈধ পথে ক্ষমতা দখলের পথ রুদ্ধ করেছি।
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আমরা জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সকলদলের অংশগ্রহণে নির্বাচনকালীন একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম।
কারণ, আমরা সবসময়ই সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে। সংবিধানের আওতায় আমরা সবধরণের ছাড় দিতেও প্রস্তুত ছিলাম। এমনকি বিএনপি যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক, তাও আমরা দিতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু বিএনপি নেতৃত্ব সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি বরং উনি সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেন।
পেট্রোল বোমা, অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলা করে মানুষ হত্যায় মেতে উঠলেন। শতাধিক মানুষ হত্যা করলেন। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধবংস করলেন।
বিএনপি জোট নির্বাচন বর্জন করলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দল এবং প্রার্থীর অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে সুষ্ঠুভাবে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের সময় প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত ছিল। সরকার কোন ধরণের হস্তক্ষেপ করেনি।
৯২ দিন পার্টি কার্যালয়ে আরাম-আয়েশে অবস্থান করে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আন্দোলনের নামে বিএনপি নেত্রী আবার জ্বালাও-পোড়াও-সন্ত্রাসী কর্মকা- উসকে দেন।
এ তিন মাসে বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীদের হাতে ২৩১ জন নিরীহ মানুষ নিহত এবং ১ হাজার ১৮০ জন আহত হন। তারা ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেল গাড়ি ও ৮টি লঞ্চে আগুন দেয়। ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাংচুর এবং ৬টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
দেশবাসী তাদের এ সন্ত্রাসী কর্মকা- প্রত্যাখ্যান করেছেন। জনগণ এ ধরনের কর্মকা-ের পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা আশা করি সকল রাজনৈতিক দল মহামান্য রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে গঠিত নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা রাখবেন।
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিবেন এবং দেশে গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে সহায়তা করবেন।
প্রিয় দেশবাসী,
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা থেকে শুরু করে এ দেশের যত উল্লেখযোগ্য অর্জন, তার সবগুলো এনেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। জাতির পিতা আমাদের মাথা নত না করতে শিখিয়েছেন। আমরা সকল বাধা-বিঘœ অতিক্রম করে বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করব।
আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নি¤œ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যদা অর্জন করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে।
আসুন, দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়নে নিজেদের নিয়োজিত করি এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত-সমৃদ্ধ, সুন্দর এবং বাসযোগ্য বাংলাদেশ উপহার দেই।
সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে এ প্রার্থনা করছি।
সবাইকে আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ।
খোদা হাফেজ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।’