শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ১১ জুলাই ২০১৬
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে বর্তমানে বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, পৃথিবীতে তিন কারণে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়ছে। তা হলো লেফটিস্ট, রিলিজিয়নস ও এথনিক। বাংলাদেশে যারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দিতে চায় তারা জেএমবি।
সোমবার বিকেল পৌনে ৫টায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদসহ সকল ধরনের অপরাধ দমনে উদ্বোধন করা হয় মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ‘রিপোর্ট টু র্যাব’। অ্যাপসটির উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ।
বেনজীর আহমেদ বলেন, বর্তমানে এশিয়া পেসিফিকের প্রায় ৪৭টি দেশে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। একযোগে সবাইকে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে বাংলাদেশে দ্রুত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের তৎপরতা বেড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে।
র্যাব ডিজি বলেন, জেএমবি দীর্ঘদিন ঘাপটি মেরে ছিল। ২০০৪ সালে একবার আমরা বড় ধরনের হুমকির মুখোমুখি হয়েছিলাম। গুলশান হামলার মতো ঘটনা গত ৪০/৪৫ বছরে বাংলাদেশের কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
শোলাকিয়ার ঘটনায় জড়িত শফিউলের বিরুদ্ধে এর আগেও চারটি হত্যা মামলা ছিল। তবে একটিতে শফিউল গ্রেফতার ছিল না। ওই ঘটনায়ও জেএমবি জড়িত। ঘটনাটি এখনো তদন্তাধীন। তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে।
নিখোঁজ তরুণরাই গুলশানের ঘটনায় জড়িত থাকার পর সারাদেশ থেকে উঠে আসে বেশ কয়েকটি মিসিং (নিখোঁজ) এর নাম। এদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মপ্রকাশ করেছে জঙ্গি সদস্য হিসেবে। যারাই মিসিং থাকুক, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদে জড়িত থাক না কেন, র্যাব-পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান, শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, এদেশকে আমরা নষ্ট হতে দিতে পারি না। গুলশানের ঘটনায় সারাদেশ থেকে যেমন প্রতিবাদ ও সমবেদনার বিষয় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে উঠে এসেছে, তেমনি এসেছে হতাশা ও নিরাপত্তার বিষয়টিও। আমরা বলতে চাই, নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিতকরণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বদ্ধপরিকর। এক্ষেত্রে সাধারণ জণগণের সহযোগিতা প্রয়োজন।
র্যাব প্রধান বলেন, ওরা (জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা) কি বোঝাতে চায়, একজন সাধারণ ধোপা, সনাতন পূজারি কিংবা পুরোহিতকে হত্যা করে ওরা কি বার্তা দিতে চায়। মানুষের কাজ এমন হতে পারে না। সাধারণ মানুষের ঘৃণা আর প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে তাই উঠে এসেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডমিন) আব্দুল জলিল মণ্ডল, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) আনোয়ার লতিফ খান, ডিরেক্টর (ইনটেলিজেন্স) আবুল কালাম আজাদ, ডিরেক্টর (অপারেশন) কে এম আজাদ, ডিরেক্টর (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং) মুফতি মাহমুদ খান, ডিরেক্টর কমিউনিকেশনস ফরহাদ হোসেন মাহমুদ, ডিরেক্টর (ট্রেনিং) জসিম উদ্দিন।
উল্লেখ্য, র্যাব কর্তৃক উদ্বোধনকৃত অ্যাপসটি ব্যবহার করে যে কোনো তথ্যদাতা বা সাধারণ নাগরিক জঙ্গি সন্ত্রাস, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুকসহ), নিখোঁজ, খুন, ডাকাতি, মাদক, অপহরণসহ যে কোনো অপরাধের তথ্য নিকটস্থ র্যাব ব্যাটালিয়নকে জানাতে পারবেন। তথ্যদাতার তথ্য র্যাব সার্ভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাটালিয়নের কাছে পৌঁছে দেবে।
অ্যাপসটি ব্যবহার করতে চাইলে যে কোনো ব্যক্তি র্যাবের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট www.rab.gov.bd অথবা গুগল প্লে স্টোর থেকেও ডাউনলোড করতে পারবেন। অ্যাপটি একটিভেট করার জন্য একটি ইন্টারনেট সংযুক্ত এনড্রোয়েট মোবাইল ফোন লাগবে।
অ্যাপসটিতে অপরাধের ধরন নির্বাচন করার ক্ষেত্রে রিপোর্ট ক্রাইম ও ফোন নাম্বার থাকবে। সেখানে সিলেক্ট ক্রাইম অপশনে ক্লিক করলে, টেরোরিস্ট অ্যাটাক, টেরোরিস্ট ইনফরমেশন, মিসিং পারসন ইনফরমেশন (নিখোঁজ ব্যক্তি), সোশ্যাল মিডিয়া ওয়াচ, মার্ডার, রোবারি, ড্রাগ, কিডন্যাপ এবং অন্যান্য অপরাধেরও একটি ঘর দেখা যাবে। সেখানে অপরাধের ধরন অনুযায়ী যে কেউ তা ক্লিক করলেই নির্বাচিত হবে।
এরপর অপরাধ কিংবা অপরাধীর ঘটনাস্থলে জেলা ও থানা নির্বাচন অপশনে গিয়ে তা পূরণ করবেন। এরপর অপরাধের দৃশ্য কিংবা ধরন বর্ণনা করা যাবে। সর্বশেষ সেন্ড বাটনে ক্লিক করলেই নিকটস্থ র্যাবের এলাকায় পাঠানো যাবে।