গুলশান বনানীতে শপিংমল রেস্টুরেন্ট ক্রেতাশূন্য

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ২৪  জুলাই  ২০১৬

গুলশান বনানীতে শপিংমল রেস্টুরেন্ট ক্রেতাশূন্য

গুলশান বনানীতে শপিংমল রেস্টুরেন্ট ক্রেতাশূন্য

গুলশান-বনানীসহ এর আশপাশের এলাকাজুড়ে এখনও ভীতি-আতংক বিরাজ করছে। নিরাপত্তা জোরদার করার পরও জনমনে ভীতি-আতংক দূর হচ্ছে না। যে কারণে সন্ত্রাসী হামলার ২২ দিন অতিবাহিত হলেও অধিকাংশ শপিংমল, রেস্টুরেন্ট ক্রেতাশূন্য। দিনের বেলা অল্পসংখ্যক ক্রেতার উপস্থিতি থাকলেও ফের হামলার আশংকায় সন্ধ্যার পর সব একরকম ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। শুধু বিদেশী নয়, দেশী ক্রেতারাও বের হচ্ছেন না। ভুক্তভোগী শপিংমল ও রেস্টুরেন্ট মালিকদের অনেকে ক্ষতি পোষাতে কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেউ আবার সাময়িক সময়ের কথা বলে রেস্টুরেন্ট বন্ধ রেখেছেন। তারকা মানের হোটেলগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। শনিবার গুলশান ও বনানীর বিভিন্ন শপিংমল, রেস্টুরেন্ট ও তারকা মানের হোটেল সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

দেখা গেছে, দুপুর পর্যন্ত অল্পসংখ্যক ক্রেতা এলেও সন্ধ্যা নাগাদ রেস্টুরেন্ট ও শপিংমলগুলো পুরো ফাঁকা হয়ে যায়। বাড়তি নিরাপত্তা দিতে পুলিশের পাশাপাশি অস্ত্রসহ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চোখে পড়ার মতো নিরাপত্তারক্ষীদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। তা সত্ত্বেও ফল আসছে না। বাস্তব অবস্থা এমন যে- একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ এখানকার হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বিপণিবিতানে আসছেন না। হামলার পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেস্টুরেন্ট খাত। বিশেষ প্রয়োজনে ক্রেতারা সশরীরে উপস্থিত না হয়ে পার্সেল অর্ডার করছেন। এ অবস্থায় গ্রাহক সংকটের কারণে কয়েকটি রেস্টুরেন্ট সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। গুলশান-১-এর রেস্টুরেন্ট ভিলেজের ম্যানেজার মেহেদী হাসান জানান, হামলার পর ক্রেতার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। বাধ্য হয়ে কর্মী ছাঁটাই করতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে রেস্টুরেন্টের বিদ্যুৎ বিলও উঠবে না। এখনই সরকার যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে রেস্টুরেন্ট খাতে ধস ঠেকানো যাবে না। ফলে এ খাতের সঙ্গে জড়িত লোকজন কর্মসংস্থান হারাবে।

এক পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি বলেন, তার রেস্টুরেন্টে দুই তলায় একসঙ্গে ৩০০ লোকের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ছাড়া অন্যান্য দিন ৭৫ শতাংশ আসন ক্রেতায় ভরপুর থাকত। এর মধ্যে কর্পোরেট গ্রাহকের উপস্থিতি থাকত ৩০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ প্রতিদিনের গ্রাহক এবং বাকি ১৫ শতাংশ থাকত বিদেশী গ্রাহকরা। যারা আশপাশের তারকামানের হোটেলগুলোতে অবস্থান করতেন। এ ছাড়া বিভিন্ন উৎসব-পার্বণের দিনে সিটের আগাম বুকিং থাকত। গুলশান হামলার পর ৬০০ সিটের আগাম অর্ডার বাতিল হয়েছে। আর গ্রাহকের সংখ্যা ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। বিদেশী গ্রাহক নেই বললেই চলে।

গুলশান সিটি কর্পোরেশনের উল্টো দিকে অবস্থিত সিগন্যাচার অ্যান্ড কফি রিপাবলিক। এর ম্যানেজার মাহমুদুল কবির আখন্দ বলেন, আতংকে লোকজন বিকালের পর রেস্টুরেন্টে আসছে না। হামলার ঘটনার পর অনেক পার্টি বাতিল হয়েছে। আগে শেভরন ও এরিকসনের মতো বহুজাতিক কোম্পানির দেশী-বিদেশী কর্মকর্তারা প্রতিদিন মধ্যাহ্নভোজে আসতেন। এখন আর কেউ আসতে চান না। তাদের অর্ডার হোম ডেলিভারি করা হয়।

 

তিনি আরও বলেন, দুটি ফ্লোরের একটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে যে কোনো মুহূর্তে ইন্ডাস্ট্রিতে ধস নামতে পারে। লোকসান পোষাতে বাধ্য হয়ে কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। এখন সরকারই একমাত্র পারে এ অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের পথ দেখাতে। বিদেশীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও আস্থা দিলে আবার রেস্টুরেন্ট খাতে সুদিন ফিরে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

ডিসিসি মার্কেটের রামিসা ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, হামলার আগে বিদেশী ক্রেতা বিশেষ করে ভারতীয় অ্যাম্বাসির লোকজনের পদচারণায় মার্কেটটি মুখর থাকত। এখন ক্রেতা নেই বললেই চলে। প্রতি মাসের দোকান ভাড়া ৩৮ হাজার টাকা। বেচাবিক্রি নেমে গেছে শূন্যের কোঠায়। এভাবে চলতে থাকলে আগামী মাসের দোকান ভাড়া দেয়া সম্ভব হবে না।

পিংক সিটি শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রায় ক্রেতাশূন্য। অন্যান্য দিনের তুলনায় অর্ধেক কাস্টমারও দোকানে আসেন না জানিয়ে তাঁতীঘর ফ্যাশন হাউসের বিক্রেতা আসলাম হোসেন যুগান্তরকে বলেন, মানুষের মনে আতংক ঢুকে গেছে। যারা এসেছেন তারা দামাদামি না করে অল্প সময়ের মধ্যেই কেনাকাটা শেষ করে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।

গোল্ড গ্যালারির (জুয়েলারি) কর্মকর্তা বিভেগ বলেন, এখানে আগে প্রতিদিন শতাধিক কাস্টমার আসত। আর এখন দশ জন কাস্টমারও নেই। এ রকম চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হবে। ঈদের পর থেকে ব্যবসার যে অবস্থা তাতে লাভ হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি।

জারা ফ্যাশনের শফিক নামে এক দোকান কর্মচারী জানান, এই অভিজাত এলাকায় মূলত বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত মার্কেটগুলো জমজমাট থাকত। এখন পরিস্থিতি পুরো বিপরীত।

জব্বার টাওয়ারের আধুনিক ফ্যাশন বিক্রেতা আলম বলেন, ক্রেতাদের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও টেনশনে থাকি। কোনো কিছু হলে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে বিপদে পড়তে হবে। বলতে পারেন, আমরাও অনেক ঝুঁকি নিয়ে দোকান খুলে বসে থাকি।

শপার্স ওয়ার্ল্ডের শাড়ি বিক্রেতা মাজিদুর রহমান নাহিদ বলেন, গুলশানসহ আশপাশের এলাকার ব্যবসা আগের অবস্থায় ফিরে আসতে অনেক সময় লাগতে পারে। কারণ হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় যে ক্ষতি হয়েছে, তার থেকে কয়েক গুণ আতংক জনমনে তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো গুলশান ঘিরে প্রশাসনের যে তৎপরতা এখন চলছে তাতে মানুষ আরও বেশি ভয় পাচ্ছে। কয়েকটি তারকা মানের হোটেল ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য সময়ের তুলনায় বিদেশী ক্রেতার উপস্থিতি একেবারেই কম। যদিও এ বিষয়ে কথা বলতে নারাজ হোটেল কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে বনানীর ১১ নম্বর রোড ফুড কোর্ট ও মার্কেটের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিশেষ করে উচ্চবিত্ত তরুণ-তরুণীদের পছন্দের জায়গা। এ এলাকার ৭-৮টি রেস্টুরেন্ট ঘুরে দেখা গেছে, ভরদুপুরে গ্রাহক সংকটের কারণে অলস সময় পার করছে রেস্টুরেন্টের কর্মীরা। অন্যান্য সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি শেষে গ্রাহকের পদচারণায় মুখর থাকত এসব রেস্টুরেন্ট। নান্দুস, ভারতীয় সাজনা, ক্যাফে ওয়ার্ল্ড, নান্না বিরিয়ানি, কোরিয়ান সুসি এবং আমেরিকান বার্গার হাউসের মতো রেস্টুরেন্টগুলো এখন ক্রেতা সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে।

 

Related posts